প্রাক্তন হকি তারকা বিমল লাকড়া গুরুতর অবস্থায় রাঁচি হাসপাতালে ভর্তি

Former Hockey Star Bimal Lakra Hospitalized in Ranchi After Collapsing on Simdega Farmland

ভারতীয় হকি দলের প্রাক্তন মিডফিল্ডার এবং ২০০২ সালের এশিয়ান গেমসে রৌপ্য পদক জয়ী বিমল লাকড়া (Bimal Lakra) গত সোমবার তাঁর গ্রাম সিমডেগার তানসারে কৃষি জমিতে কাজ করার সময় গুরুতরভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ৪৫ বছর বয়সী এই প্রাক্তন হকি তারকা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান, যার ফলে তাঁকে প্রথমে সিমডেগা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার বিষয়টি ধরা পড়ে। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে রাঁচির কিউরেস্টা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

Advertisements

হকি ঝাড়খণ্ডের সহ-সভাপতি এবং সিমডেগা হকি সভাপতি মনোজ কোণবেগি জানিয়েছেন, বিমল লাকড়া তাঁর গ্রামের কৃষি জমিতে কাজ করার সময় অজ্ঞান হয়ে পড়েন। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য তাঁকে কুর্দেগ নিয়ে যাওয়া হয়, এবং পরে সিমডেগা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সিটি স্ক্যানে মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ডাক্তাররা তাঁকে রাঁচিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। বর্তমানে তিনি কিউরেস্টা হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন এবং তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে।

হকি ইন্ডিয়ার সেক্রেটারি-জেনারেল ভোলা নাথ সিং এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “বিমল লাকড়ার অবস্থা এখন স্থিতিশীল। ঝাড়খণ্ডের ক্রীড়া মন্ত্রী আজ তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন এবং সমস্ত সম্ভাব্য সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা হকি ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।” তিনি আরও বলেন, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন বিমলের চিকিৎসার জন্য সর্বোত্তম ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রাক্তন ভারতীয় হকি অধিনায়ক এবং বিমলের সতীর্থ ভিরেন রাসকুইনহা X-এ একটি পোস্টে লিখেছেন, “আমার বন্ধু এবং ভারতীয় হকি দলের সতীর্থ বিমল লাকড়া বর্তমানে রাঁচির হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি আছেন। তিনি বহু বছর ধরে দেশের জন্য খেলেছেন। ২০০১ সালে জুনিয়র বিশ্বকাপ, ২০০২ সালে এশিয়ান গেমসে রৌপ্য এবং ২০০৩ সালে এশিয়া কাপে স্বর্ণ জয়ে তাঁর অবদান ছিল। বর্তমানে তাঁর কোনো চাকরি নেই, তাই আমি আশা করি সরকার এখন তাঁর পাশে দাঁড়াবে।” পরবর্তীতে তিনি আরেকটি পোস্টে জানান, হকি ইন্ডিয়া এবং ঝাড়খণ্ড সরকারের পক্ষ থেকে বিমলের চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

বিমল লাকড়া ২০০২ সালে বুসান এশিয়ান গেমসে ভারতীয় দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। তিনি মিডফিল্ডে তাঁর দক্ষতা এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিচিত ছিলেন। এছাড়াও, তিনি ২০০৩ এবং ২০০৭ সালে এশিয়া কাপ জয়ী দলের অংশ ছিলেন। তাঁর ভাই-বোন, বীরেন্দ্র লাকড়া (প্রাক্তন ভারতীয় পুরুষ দলের ডিফেন্ডার এবং অলিম্পিয়ান) এবং আসুন্তা লাকড়া (প্রাক্তন ভারতীয় মহিলা দলের অধিনায়ক), ঝাড়খণ্ডের একটি বিরল ক্রীড়া পরিবারের অংশ। এই পরিবার ভারতীয় হকির জন্য বহু অবদান রেখেছে।

Advertisements

সিমডেগা জেলা ভারতীয় হকির জন্য একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চল থেকে সালিমা টেটে, নিক্কি প্রধান, সঙ্গীতা কুমারীসহ বহু জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় উঠে এসেছেন। বিমল লাকড়াও সিমডেগার তানসার গ্রামের বাসিন্দা, এবং তাঁর গুরুতর অবস্থার খবরে স্থানীয় হকি সম্প্রদায়ের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

ঝাড়খণ্ডের ক্রীড়া সম্প্রদায় এবং হকি প্রেমীরা বিমলের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছেন। সিমডেগা হকি সংস্থার সভাপতি মনোজ কোণবেগি বলেন, “বিমল আমাদের গর্ব। তিনি শুধু একজন দুর্দান্ত খেলোয়াড়ই নন, সিমডেগার তরুণ হকি খেলোয়াড়দের জন্য একজন প্রেরণা। আমরা তার দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি।”

ঝাড়খণ্ড সরকার এবং হকি ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে বিমলের চিকিৎসার জন্য সব ধরনের সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং হকি ইন্ডিয়ার কর্মকর্তারা তাঁর স্বাস্থ্যের অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। ভক্ত এবং প্রাক্তন সতীর্থরা X-এ তাঁর দ্রুত আরোগ্যের জন্য শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
বিমল লাকড়ার এই ঘটনা ভারতীয় হকি সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তাঁর অবদান এবং সিমডেগার হকি ঐতিহ্য সকলের কাছে একটি গর্বের বিষয়। এখন সকলের প্রত্যাশা, তিনি শীঘ্রই সুস্থ হয়ে পুনরায় সক্রিয় জীবনে ফিরে আসবেন।