ভারতীয় মহিলা ফুটবলের জগতে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে তরুণ প্রতিভাদের হাত ধরে। দেশের চার জন ২৩ বছরের কম বয়সী ফুটবলার বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পেশাদারি পর্যায়ে খেলছেন—যা ভারতীয় মহিলা ফুটবলের (Indian women footballers) সাফল্য, প্রস্তুতি এবং আন্তর্জাতিক উপস্থিতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। এই চার ফুটবলার ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং পূর্ব এশিয়ার ক্লাবগুলিতে খেলছেন ভিন্ন ভিন্ন লিগ ও টুর্নামেন্টে, এবং তাঁদের পারফরম্যান্স ফুটবল মহলে ইতিমধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
⭐ রিভকা রামজি — Lion City Sailors (সিঙ্গাপুর)
রিভকা রামজি বর্তমানে সিঙ্গাপুরের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ক্লাব Lion City Sailors-এ খেলছেন। মাত্র ২০ বছরের এই মিডফিল্ডারের পজিশনাল সেন্স, পাসিং দক্ষতা এবং খেলার রিদম নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা তাঁকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আলাদা করে তুলেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার লিগগুলো ভারতীয় খেলোয়াড়দের জন্য কঠিন প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র, এবং সেখানে রিভকার ধারাবাহিক পারফরম্যান্স তাঁর উন্নতির প্রমাণ।
Lion City Sailors মহিলা লিগে তাদের আধিপত্য বাড়াতে রিভকার মতো তরুণ প্রতিভাকে দলে নিয়েছে। ক্লাবের কোচিং স্টাফ তাঁর ফুটবল বুদ্ধিমত্তা, গতিময় রান এবং খেলা পড়ার ক্ষমতাকে উচ্চ প্রশংসা করেছেন। ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় এমন প্রতিভার ভূমিকা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।
⭐ হর্ষিকা জৈন — CS Athletic Olimpia Gherla (রোমানিয়া)
হর্ষিকা জৈন ইউরোপিয়ান ফুটবলে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেছেন। রোমানিয়ার ক্লাব CS Athletic Olimpia Gherla-তে তিনি ডিফেন্স এবং উইং–ব্যাক পজিশনে দাপটের সঙ্গে খেলছেন। ইউরোপীয় ফুটবলের শারীরিকতা, দ্রুত টেম্পো এবং কঠোর প্রশিক্ষণ পরিবেশ তাঁকে আরও পরিণত খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তুলছে।
রোমানিয়ান লিগে মহিলা ফুটবলের প্রতিযোগিতা বেশ শক্তিশালী, এবং ভারতীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে আন্তর্জাতিক লিগে সফলতার উদাহরণ খুব বেশি নেই। ফলে হর্ষিকার উপস্থিতি ভারতীয় মহিলা ফুটবলের জন্য এক নতুন মাইলফলক। ট্যাকটিক্যাল ম্যাচ রিডিং এবং আক্রমণে যোগদান—এই দুই ক্ষেত্রেই তাঁর উন্নতি স্পষ্ট।
⭐ আভেকা সিংহ — Naestved HG Women (ডেনমার্ক)
ডেনমার্কের Naestved HG Women দলে খেলছেন ভারতীয় ফরোয়ার্ড আভেকা সিংহ। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ফুটবল সবসময়ই শৃঙ্খলা, টেকনিক্যাল খেলা এবং শক্তিশালী গ্রাসরুট সিস্টেমের জন্য পরিচিত। সেই পরিবেশে আভেকার পারফরম্যান্স নজর কেড়েছে।
টিমের আক্রমণভাগে তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুতগতির রান, হাই প্রেসিং ফুটবলে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং বক্সের ভেতর নির্ভুল শট—এগুলোই তাঁকে দলের এক উল্লেখযোগ্য সদস্যে পরিণত করেছে। ডেনমার্কের মহিলা লিগে তাঁর নাম ধীরে ধীরে আলোচিত হচ্ছে, যা ভারতীয় ফুটবল ভক্তদের জন্য অবশ্যই গর্বের।
⭐ কাজল ডিসুজা — Al-Amal SC (সৌদি আরব)
মধ্যপ্রাচ্যে মহিলা ফুটবলের বিকাশ গত তিন বছরে দ্রুত বেড়েছে, আর সেই পরিবর্তনের কেন্দ্রে রয়েছেন ভারতীয় মিডফিল্ডার কাজল ডিসুজা। সৌদি আরবের ক্লাব Al-Amal SC–এ তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
কাজলের খেলার স্টাইল আক্রমণ–নির্ভর এবং গতিশীল। মিডফিল্ডে বল কন্ট্রোল, দীর্ঘ পাস, এবং বক্স–টু–বক্স মুভমেন্ট তাঁর বিশেষ দক্ষতা। সৌদির নতুন মহিলা ফুটবল লিগ আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের টানছে, এবং কাজলের সাফল্য সেই বিপ্লবে ভারতীয় উপস্থিতির নতুন উদাহরণ।
Four women Indian footballers (below 23 yeara of age) playing across Europe, Middle East and East Asia in different formats and tournaments.
Rivka Ramji – Lion City Sailors
Harshika Jain – CS Athletic Olimpia Gherla
Aveka Singh – Naestved Hg Women
Kajol Dsouza – Al-Amal SC… https://t.co/iKtmP4uV21 pic.twitter.com/CmodVxiDIg— Indian Women’s football (@indiafemmefooty) November 14, 2025
▶ আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ভারতীয় মহিলা ফুটবলের কোচিং স্টাফ এবং বিশ্লেষকদের মতে, বিদেশি লিগে খেলা ফুটবলারদের একাধিক সুবিধা—
উন্নত ট্রেনিং অবকাঠামো
উচ্চ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ
পেশাদারি মানসিকতা বৃদ্ধি
আন্তর্জাতিক exposure
দীর্ঘমেয়াদি দক্ষতা উন্নয়ন
ভারতের সিনিয়র মহিলা দলের ভবিষ্যৎ স্কোয়াড বিন্যাসেও এই খেলোয়াড়দের ভূমিকা বড় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
▶ ভারতের মহিলা ফুটবলের জন্য বড় উৎসাহ
এই চার তরুণীর সাফল্য শুধু ব্যক্তিগত সাফল্য নয়—এটি ভারতের মহিলা ফুটবলের আন্তর্জাতিক সম্ভাবনারও প্রতিচ্ছবি। বিদেশি ক্লাবগুলির বিশ্বাস স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে ভারতীয় খেলোয়াড়দের দক্ষতা, ফিটনেস এবং মান এখন আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিযোগিতার যোগ্য।
ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তারা মনে করছেন, আগামী দিনে আরও তরুণী বিদেশে খেলতে যেতে পারে, যা মহিলা ফুটবলের সামগ্রিক উন্নতির জন্য পথপ্রদর্শক হবে।


