বর্তমানে ভারতীয় ফুটবল এখন কঠিন সময় পার করছে। এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারে (AFC Asian Cup Qualifiers) এখনও পর্যন্ত কোনো জয় নেই ব্লু টাইগারদের। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করলেও, পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক।
এই অবস্থায় নতুন কোচ খালিদ জামিলের ওপর চাপ বাড়ছে। দলের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তার সিদ্ধান্তের ওপর। ভারতীয় ফুটবলের এই সংকটময় সময়ে কোচ জামিলকে তিনটি বড় ভুল সংশোধন করতে হবে, যেগুলো না করলে এশিয়ান কাপে যোগ্যতা অর্জনের স্বপ্ন ভেঙে পড়বে।
অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক মানসিকতা বাদ দিতে হবে
খালিদ জামিল একজন রক্ষণভিত্তিক কোচ হিসেবে পরিচিত। ক্যারিয়ার জুড়ে তিনি কম রিসোর্স নিয়ে ভালো ফলাফল এনেছেন। সেটা দেখা গেছে সাম্প্রতিক কাফা নেশনস কাপে। সেখানে ভারত ওমান ও তাজিকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলের সঙ্গে লড়াই করেছে।
তবে সমান মানের বা তুলনামূলক দুর্বল দলের বিপক্ষে ভারতের পারফরম্যান্স ছিল নিষ্প্রভ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে গোল করতে পারেনি ভারত। একই অবস্থা দেখা গেল সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচেও।
একজন কোচ হিসেবে খালিদ জামিলকে বুঝতে হবে যে শুধু রক্ষণ দিয়ে ম্যাচ জেতা যায় না। গোল না করলে পয়েন্ট আসে না। এখন সময় এসেছে বেশি আক্রমণাত্মক খেলার, বিশেষ করে যখন প্রতিপক্ষ তুলনামূলকভাবে দুর্বল।
সঠিক খেলোয়াড় বাছাই করতে হবে
সিঙ্গাপুর ম্যাচের শুরুর একাদশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। ফারুক চৌধুরিকে সুনীল ছেত্রীর সঙ্গে ফরোয়ার্ডে খেলানো সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিল না। দু’জনেই ম্যাচ ফিটনেসের ঘাটতিতে ভুগছিলেন।
সবচেয়ে বড় ভুল ছিল সাহাল আবদুল সামাদকে বেঞ্চে রাখা। দ্বিতীয়ার্ধে সাহাল নামার পরেই ভারতের খেলায় ভিন্নতা আসে। মাঠে তার উপস্থিতি ভারতের আক্রমণভাগকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
ডানপাশে রাহুল ভেকে ছিলেন পুরো ম্যাচ জুড়ে অনুজ্জ্বল। বিপক্ষের উইঙ্গারদের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেননি, আবার আক্রমণেও কোনো অবদান রাখতে পারেননি। যেখানে ভালপুইয়ার মতো তরুণ খেলোয়াড় প্রস্তুত ছিলেন, তাকে না খেলানো একপ্রকার অদূরদর্শিতার পরিচয়।
তরুণদের ওপর ভরসা রাখতে হবে
খালিদ জামিল বরাবরই বলেছেন, যারা তাকে জিততে সাহায্য করবে তারাই দলে থাকবে। সেই যুক্তিতে সুনীল ছেত্রীর দলে ফেরা যৌক্তিক। তবে এই দর্শনের প্রয়োগে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।
ভালপুইয়া, যিনি কাফা কাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছিলেন। তাকে কেন শুরুর একাদশে রাখা হল না, সেটি প্রশ্নবোধক। একইভাবে দলে নেই মহম্মদ সোহেল, যিনি অনূর্ধ্ব-২৩ দলে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন।
ভারতের সামনে যোগ্যতা অর্জনের বাঁচার রাস্তা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। খালিদ জামিল যদি রক্ষণাত্মক মানসিকতা ছেড়ে আক্রমণাত্মক কৌশল গ্রহণ করেন, সঠিক স্কোয়াড নির্বাচন করেন এবং তরুণদের সুযোগ দেন, তাহলে ভারত এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
ঘরের মাঠে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে পরের ম্যাচই হতে পারে ভারতের এশিয়ান কাপ স্বপ্ন বাঁচানোর শেষ সুযোগ। এখন দেখার বিষয়, খালিদ জামিল সেই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত কি না।