এআইএফএফের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ শানালেন বিদেশি ফুটবলার কার্লোস

কার্লোস ডেলগাডোর ক্ষোভ: “বক্তব্য নয়, পদক্ষেপ চাই—আপনারা ফুটবল ইকোসিস্টেমকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করেছেন”

ভারতীয় ফুটবলের সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। এবার তাতে যোগ হল আরও একটি জোরালো বক্তব্য। আইএসএলের অন্যতম অভিজ্ঞ বিদেশি ফুটবলার কার্লোস ডেলগাডো সরাসরি আক্রমণ শানালেন এআইএফএফের (AIFF) বিরুদ্ধে। তাঁর বক্তব্য—“আমরা বক্তব্য চাই না, চাই বাস্তব পদক্ষেপ। আমরা ফুটবল খেলতে চাই—আপনারা পুরো ইকোসিস্টেমকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে দিয়েছেন।”

Advertisements

এই বার্তায় ফুটে উঠেছে লিগের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভ, হতাশা এবং অনিশ্চয়তা। আইএসএল ক্লাবগুলোর প্রথম দলীয় কার্যক্রম ইতিমধ্যেই স্থগিত বা সীমিত করা হয়েছে। সুপার কাপ শেষ হওয়ার পর আর কোনও অফিসিয়াল প্রতিযোগিতা নেই সামনে, ফলে দলের খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ এবং ক্লাব পরিচালনাকেন্দ্র কার্যত বিপাকে পড়েছে। ঠিক এই মুহূর্তেই কার্লোস ডেলগাডোর বক্তব্য যেন ফুটবল মহলের সেই উদ্বেগকে আরও স্পষ্ট করে তুলল।

   

বহু বছর ধরে ভারতীয় ফুটবলে খেলা এই স্প্যানিশ সেন্টার-ব্যাক শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও নেতৃত্বমূলক ভূমিকা পালন করে আসছেন। তিনি বলেছেন, “এআইএফএফের দায়িত্ব খেলোয়াড়, ক্লাব এবং সকল স্টেকহোল্ডারের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা। কিন্তু বর্তমানে কোনও দিশা নেই। কোনও পরিষ্কার ক্যালেন্ডার নেই। খেলোয়াড়রা জানেই না পরবর্তী টুর্নামেন্ট কবে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের ব্যাপার।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, এআইএফএফের পক্ষ থেকে যদিও সম্প্রতি আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে তারা সমাধান খুঁজছে, তবে সেই আশ্বাসে মাঠপর্যায় থেকে তেমন আস্থা পাচ্ছেন না কেউ। ক্লাবগুলোর আর্থিক ভারসাম্য ভেঙে পড়ার উপক্রম, স্পনসরশিপ কমছে, খেলোয়াড়দের চুক্তি মূল্যায়ন থমকে আছে। বিদেশি ও দেশীয় ফুটবলার — উভয়েই এই অবস্থাকে অনিশ্চয়তার শীর্ষে বলে মনে করছেন।

কার্লোস ডেলগাডোর বক্তব্যই দেখিয়ে দিচ্ছে, খেলোয়াড়রা এখন স্পষ্ট সিদ্ধান্ত চায়। তিনি বলেন, “এখানে শুধু ফুটবল মাঠ নয়, বহু মানুষের জীবিকা জড়িত। আপনি লিগ বন্ধ করলে হাজারো খেলোয়াড়, কোচ, সাপোর্ট স্টাফ, গ্রাউন্ড কর্মী—সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হন। এটা শুধু লিগের সমস্যা নয়, এটা মানুষের সমস্যা।”

Advertisements

ফুটবল মহলে আলোচনা চলছে যে, এআইএফএফকে জরুরি ভিত্তিতে একটি স্থায়ী ফুটবল ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে। যাতে আইএসএল, সুপার কাপ, লিগ টু, যুব লিগ—সব মিলিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রতিযোগিতার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রতিযোগিতা দিন দিন বাড়ছে এবং প্রতিটি দেশের ফুটবল কাঠামো দ্রুত বদলাচ্ছে। সেখানে ভারত যদি পিছিয়ে পড়ে, তাহলে বড় ক্ষতি হবে তরুণদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে।

আইএসএল ক্লাবগুলোর একাধিক সিইও, কোচ ও খেলোয়াড় এর আগেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কেরালা ব্লাস্টার্সের সিইও অভীক চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য—“আমরা একপ্রকার অচল অবস্থায় আছি”—এখন নতুন মাত্রা পাচ্ছে কার্লোস ডেলগাডোর এই কঠোর বার্তায়।

ফুটবলপ্রেমীদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন—এআইএফএফ কি সত্যিই দ্রুত কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে? নাকি এরকম বক্তব্য আরও বাড়বে? ডেলগাডো সহ বহু ফুটবলারের বার্তা পরিষ্কার— “বক্তব্য নয়, এখন সময় পদক্ষেপের।”