ভারতীয় ফুটবলের আকাশে এবার সুপার কাপ ২০২৫-২৬-এর গ্রুপ সি-এর ক্লাইম্যাক্স নামছে। বেঙ্গালুরু এফসি এবং পাঞ্জাব এফসির (Bengaluru FC vs Punjab FC) মধ্যে গোয়ার পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে বুধবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭:৩০ টায় শুরু হবে এক থ্রিলিং লড়াই, যেখানে সেমিফাইনালের টিকেটের জন্য দুই দলই সমান পয়েন্ট এবং গোল ডিফারেন্স নিয়ে মাঠে নামবে। দুই দলই গ্রুপ স্টেজে অপরাজিত—বেঙ্গালুরু দুই ম্যাচে ৬ গোল করে ০ গোল খেয়েছে, আর পাঞ্জাবও ৬ গোল করে ০ গোল খেয়েছে। জয় ছাড়া এগোনোর উপায় নেই; ড্র হলে পেনাল্টি শুটআউটে ঠিক হবে গ্রুপের শীর্ষস্থানীয়। এই ম্যাচে বেঙ্গালুরুর অভিজ্ঞতা এবং কৌশলের মুখোমুখি হবে পাঞ্জাবের যুবকদের উদ্যম এবং রিস্ক নেওয়ার সাহস—একটা এমন লড়াই যা টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সমান্তরাল ম্যাচ হয়ে উঠতে পারে।
বেঙ্গালুরু এফসির জন্য এই ম্যাচ শুধু সেমিফাইনালের প্রশ্ন নয়, এটা তাদের গর্ব এবং প্রত্যাশার প্রহর। গত সংস্করণে ফাইনালিস্ট হয়ে তারা এবারও প্রিয় ‘ব্লুজ’ নামে পরিচিত দলটি মাঠে নামছে অভিজ্ঞতার ভারসাম্য নিয়ে। তারা মোহাম্মদান স্পোর্টিংয়ের বিরুদ্ধে ২-০ গোলে জয় করে শুরু করেছে, যেখানে তাওরেম কেলভিন সিং (৩৪’) এবং সুনীল ছেত্রী (৮৬’) গোল করেছেন। তারপর গোকুলাম কেরালা ফুটবল ক্লাবকে ৪-০ গোলে হারিয়ে তারা গ্রুপে অপরাজিত রয়েছে—রায়ান উইলিয়ামস দুই গোল (৭’, ৪৭’) করেছেন, ভিনিত ভেনকটেশ (৪৪’) এবং ছেত্রী (৬১’) যোগ করেছেন। এই দলের স্টার-স্টাডেড স্কোয়াডে অভিজ্ঞতা এবং নতুন প্রতিভার মিশ্রণ আছে, কিন্তু চাপের মধ্যে ধারাবাহিকতা দেখাতে হবে। বেঙ্গালুরুর মতো দলের জন্য যোগ্যতা ছাড়া কোনো অপশন নেই—এটা তাদের নিজস্ব মানদণ্ডের প্রশ্ন।
অন্যদিকে, পাঞ্জাব এফসির জন্য এই ম্যাচ একটা সম্পূর্ণ আলাদা ওজন বহন করে। কাগজে আন্ডারডগ হলেও, ‘শার্স’ নামে পরিচিত এই দল তার যাত্রায় কোনো দুর্বলতা দেখায়নি। তারা গোকুলাম কেরালাকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শুরু করেছে—মুহাম্মদ সুহেইল (২’), নিখিল প্রভু (১১’) এবং প্রিন্সটন রেবেলো (৪৩’) গোল করেছেন। তারপর মোহাম্মদানকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে তারা পারফেক্ট রেকর্ড বজায় রেখেছে—নিন্থোইংগাম্বা মিতেই (২৬’), সামির জেলজকোভিচ (৪২’) এবং মাঙ্গলেনথাং কিপগেন (৭২’) স্কোরার। বল নিয়ে আত্মবিশ্বাসী, কৌশলগতভাবে সংগঠিত এবং ফাইনাল থার্ডে রিস্ক নিতে দ্বিধা না করা—এই গুণগুলো তাদের এই লেভেলে ফিট করে তুলেছে। বেঙ্গালুরুর মতো অভিজ্ঞ দলকে হারালে এটা শুধু সেমিফাইনাল নয়, ক্লাবের নতুন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতে রূপান্তরের স্বীকৃতি হবে।
টিম নিউজে ভালো খবর: দুই দলেরই ফুল ফিট স্কোয়াড উপলব্ধ, কোনো ইনজুরির ঝামেলা নেই। হেড-টু-হেড রেকর্ডে বেঙ্গালুরু এগিয়ে—৬ ম্যাচে ৩ জয়, পাঞ্জাবের ১ জয় এবং ২ ড্র। প্রেডিক্টেড লাইনআপে বেঙ্গালুরু: গুরপ্রীত সিং সন্ধু (জিকে), নিখিল পূজারি, চিংলেনসানা সিং কনশাম, রাহুল ভেকে, নাওরেম রোশান সিং, সুরেশ সিং ওয়াংজাম, লালরেমতলুাঙ্গা ফানাই, রায়ান উইলিয়ামস, কেভিন সিং তাওরেম, ব্রায়ান সানচেজ, সিরোজিদ্দিন কুয়জিয়েভ। পাঞ্জাব: অর্শদীপ সিং (জিকে), এলহুঙ্গদিম, পাবলো সান্তোস, প্রমভীর সিং, মুহাম্মদ উভাইস, ভিনিত রাই, নিখিল প্রভু, নিন্থোই, ড্যানি রামিরেজ, মুহাম্মদ সুহেইল, বিশাল যাদব।
প্লেয়ারস টু ওয়াচে সবচেয়ে উজ্জ্বল সুনীল ছেত্রী—ভারতীয় ফুটবলের আইকন, যিনি সাম্প্রতিক কন্ট্রাক্ট এক্সটেনশন নিয়ে মাঠে ফিরেছেন। বয়স তার জন্য কোনো বাধা নয়; শৃঙ্খলা এবং বুদ্ধিমত্তা তার অস্ত্র। টুর্নামেন্টে দুই ম্যাচে দুই গোল করে তিনি সুপার কাপে মোট ১১ গোলে পৌঁছে গেছেন। স্ট্যাটিস্টিক্সের বাইরে তার প্রভাব—গোলের সামনে শান্তি এবং লাইনের মধ্যে চালাকি চলাচল—যা ম্যাচের গতি বদলে দিতে পারে। অন্যদিকে, পাঞ্জাবের নিখিল প্রভু নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এই যুবক ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ক্যাপ্টেনের ব্যান্ড বুকে নিয়ে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শান্ত মনে। এরিয়াল ডুয়েলে শক্তিশালী, ট্যাকলে আত্মবিশ্বাসী—তার এই গুণগুলো ডিফেন্সের কেন্দ্রে শান্তি এনেছে। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে তার গোল দেখিয়েছে দুই প্রান্তেই অবদান রাখার ক্ষমতা, এবং জুনের আন্তর্জাতিক উইন্ডোতে ভারতীয় দলে কলআপ হয়েছে।
এই ম্যাচ জিও হটস্টার অ্যাপ এবং স্টার স্পোর্টস নেটওয়ার্কে লাইভ দেখা যাবে। গ্রুপ সি-এর এই লড়াই শুধু সেমিফাইনাল নয়, ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যতের একটা ইঙ্গিত—যেখানে অভিজ্ঞতা এবং যুবশক্তির সংঘর্ষে জন্ম নেবে নতুন গল্প। কে জিতবে? অপেক্ষা করুন এই থ্রিলারের জন্য!


