ভারতীয় ফুটবলকে আন্তর্জাতিক মানে তুলতে এবং লিগের বাণিজ্যিক দিককে আরও শক্তিশালী করতে নতুন পদক্ষেপ নিল অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (AIFF)। সংস্থাটি ঘোষণা করেছে, ভারতীয় ফুটবলের সমস্ত সম্প্রচার ও বাণিজ্যিক অধিকারের জন্য ন্যূনতম বার্ষিক ₹৩৭.৫ কোটি আয় নিশ্চিত করতে হবে সেই কোম্পানিকে, যে এই টেন্ডারে জিতবে।
১৪ দলের লিগকে কেন্দ্র করে চুক্তি
AIFF-এর পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই টেন্ডার প্রক্রিয়ার আওতায় আসছে ভারতের শীর্ষ লিগ কাঠামো, যেখানে থাকবে ১৪টি দল। এটি কার্যত ভারতীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতা হিসেবে ধরা হচ্ছে। আগামী ১৫ বছরের জন্য এই বাণিজ্যিক অধিকার দেওয়া হবে, অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের একটি বিশাল সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
বিড করার শর্ত
এই টেন্ডারে অংশ নিতে গেলে বিডারদের ন্যূনতম ₹২৫০ কোটি টাকার নেটওয়ার্থ থাকতে হবে। এর মাধ্যমে AIFF নিশ্চিত করতে চাইছে যে শুধুমাত্র আর্থিকভাবে সক্ষম এবং দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করতে পারবে এমন সংস্থারাই এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে।
নভেম্বরের ৫ তারিখে খুলবে বিড
এই টেন্ডার প্রক্রিয়ার বিড আগামী ৫ নভেম্বর খোলা হবে। সেই দিনই জানা যাবে কোন কোন সংস্থা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে এবং শেষ পর্যন্ত কে ভারতীয় ফুটবলের বাণিজ্যিক অধিকার নিজের হাতে নিতে চলেছে।
ফুটবলের বাজারে সম্ভাবনা
ভারতে ফুটবলের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে। আইএসএল (ISL) এবং ঐতিহ্যবাহী আই-লিগ (I-League) মিলে এখন ফুটবলের বাজার আগের তুলনায় অনেক বড় হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রিকেটের মতো না হলেও ফুটবল এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা, বিশেষ করে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে। AIFF এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘমেয়াদি আয়ের রাস্তা তৈরি করতে চাইছে।
আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা
ইউরোপীয় লিগগুলির মতো ভারতীয় ফুটবলকেও বাণিজ্যিকভাবে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে চাইছে AIFF। সম্প্রচার অধিকার, স্পনসরশিপ এবং ডিজিটাল কন্টেন্ট—সব ক্ষেত্রেই বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি হতে পারে। আন্তর্জাতিক ফুটবল বাজারে যেখানে শত শত কোটি টাকার চুক্তি হয়, সেখানে ভারতের জন্য এই উদ্যোগকে বিশেষজ্ঞরা “টাইমলি এবং প্রয়োজনীয়” বলে মনে করছেন।
ক্লাবগুলির জন্যও বাড়তি সুবিধা
AIFF-এর এই উদ্যোগ ক্লাবগুলির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাতেও প্রভাব ফেলতে পারে। সম্প্রচার এবং বাণিজ্যিক অধিকার থেকে আসা অর্থের একটি বড় অংশ ক্লাবগুলির উন্নয়ন, পরিকাঠামো, এবং খেলোয়াড়দের উন্নতিতে কাজে লাগানো সম্ভব। ফলে ভারতীয় ফুটবলের মানও ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছতে পারবে।
চ্যালেঞ্জও রয়েছে
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তি সফল করতে গেলে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক শর্ত যথেষ্ট নয়। ভারতীয় ফুটবলের কনটেন্ট কীভাবে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় করা যায়, সেটাই হবে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। একইসঙ্গে, দর্শকসংখ্যা বাড়ানো এবং মাঠে দর্শকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করাও জরুরি।
AIFF-এর এই ১৫ বছরের চুক্তির উদ্যোগ ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে বড় মাইলস্টোন হতে চলেছে। এখন শুধু দেখার অপেক্ষা—কোন কোম্পানি এই সুবিশাল বাণিজ্যিক দায়িত্ব নিজেদের হাতে নেয় এবং ভারতের ফুটবলকে বিশ্ব মানচিত্রে আরও শক্ত জায়গায় নিয়ে যেতে পারে।