ইস্টবেঙ্গল (East Bengal FC) ২০২৪/২৫ এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের (AFC Challenge League) কোয়ার্টারফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। গ্রুপ পর্বে তাঁরা অপরাজিত থেকেছে, ৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে, যেখানে দুটি জয় এবং একটি ড্র রয়েছে। পরবর্তী কোয়ার্টারফাইনালে তাঁদের প্রতিপক্ষ তুর্কমেনিস্তানের আর্কাদাগ এফসি, ম্যাচ দুটি মার্চ মাসের ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত হবে। তবে এখন দলের প্রধান এবং একমাত্র লক্ষ্য আইএসএল (ISL)।
প্রকাশ্যে এল মালেশিয়ার বিপক্ষে খেলা সম্ভাব্য ভারতীয় ফুটবলারদের নাম, জানুন কারা
তবে, বর্তমান আইএসএল (ISL) মরশুমে দলের যে দুর্বল অবস্থা, তা ভক্তদের জন্য এক বিরাট চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম ছয়টি ম্যাচে একটিও জয় না পাওয়া ইস্ট বেঙ্গল এখন ১৩ দলের টেবিলের নিচে রয়েছে। যদিও দলটির স্কোয়াডে প্রচুর প্রতিভা রয়েছে, তবে এই শুরু অনেককে হতবাক করেছে। তবে, এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে সাফল্য লাভের পর ইস্টবেঙ্গল নতুন উদ্যমে আইএসএলে নিজেদের ফিরে পেতে চায়। এখানে আমরা আলোচনা করব তাদের উত্থানের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ:
ডিমিত্রিয়স ডায়ামান্টাকসের পুনরুত্থান :
গ্রীক ফরোয়ার্ড ডিমিত্রিয়স ডায়ামান্টাকস (Dimitrios Diamantakos) ছিলেন এই মরশুমে ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম বড় সাইনিং। কেরালা ব্লাস্টার্সের হয়ে গত দুই মরশুমে দুর্দান্ত পারফরম্যন্সের পর, লাল-হলুদ সমর্থকরা আশা করেছিলেন তিনি একই রকম পারফরম্যন্স দলের জন্য নিয়ে আসবেন। তবে, এফসি চ্যালেঞ্জ লিগের আগে তাঁর পারফরম্যন্স ছিল হতাশাজনক। সাত ম্যাচে মাত্র দুই গোল ও তিনটি অ্যাসিস্ট ছিল তার নামের পাশে।
তবে, চ্যালেঞ্জ লিগে ডায়ামান্টাকস যেন নতুন করে জীবন পেয়েছেন। তিনি তিনটি ম্যাচে চার গোল করেছেন, যার মধ্যে দুটি ছিল অসাধারণ প্রথম-টাইম ফিনিশ। তাঁর সতীর্থদের কাছ থেকে আরও মানসম্পন্ন পাস এবং ক্রস পাওয়ার কারণে গোল করার সুযোগও বেড়েছে। ভুটানে তাঁর ফর্ম পুনরুদ্ধারের পর, মশাল বাহিনী আশা করছেন তিনি এই আক্রমণাত্মক ফর্ম আইএসএলেও বজায় রাখবেন।
জামশেদপুরকে পরাজিত করে কী বলছেন ওয়েন কোয়েল?
ফিটনেসের উন্নতি :
ইস্ট বেঙ্গলকে প্রথমদিকে যে সমস্যাটি সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে তা ছিল দলের ফিটনেস। আইএসএলের প্রথম ছয় ম্যাচেই তাঁদের খেলোয়াড়রা শারীরিকভাবে প্রতিপক্ষের সাথে তাল মিলাতে পারেনি। বিশেষত, ডুরান্ড কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে শিলং লাজংয়ের বিপক্ষে তাঁরা যে পরাজয় বরণ করেছিল, তা ফিটনেসের অভাবকেই দায়ী করা হয়েছিল। নতুন কোচ অস্কার ব্রুজো তাঁর দলকে আরও ফিট হতে হবে বলে উল্লেখ করেছিলেন।
এফসি চ্যালেঞ্জ লিগে ইস্টবেঙ্গল কিন্তু একটি বড় উন্নতি দেখিয়েছে। প্রতিটি ম্যাচে তাঁরা যেন আরও সুস্থ এবং ফিট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ম্যাচগুলোতে শেষ দিকে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা ক্লান্ত হয়ে পড়লেও, ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়রা ফিটনেসে ভালোভাবে টিকে থেকে খেলা চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। এই ফিটনেস উন্নতি তাদের আইএসএলেও সাহায্য করতে পারে, বিশেষত যদি তারা আরও প্রতিযোগিতামূলক হতে চায়।
ডায়মান্তাকসের ফিজিওর সঙ্গে সময়, ইস্টবেঙ্গলের অনুশীলনে দুই তরুণ ফুটবলার
ব্রুজোর কৌশল এবং সিদ্ধান্ত :
ইস্টবেঙ্গলে অস্কার ব্রুজো আসার (Oscar Bruzon) পর থেকেই তাঁদের খেলার ধরন এবং ফলাফলে চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন এসেছে। আগের কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত একটাই আক্রমণাত্মক ফর্মেশন ব্যবহার করতেন—৪-৩-৩, কিন্তু তা ফলস্বরূপ দলের জন্য সাফল্য আনতে পারেনি। তবে,নন নিযুক্ত কোচ অস্কার তাঁর কৌশলে অনেক বেশি নমনীয়তা রেখেছেন। তিনি প্রতিপক্ষের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ফর্মেশন ব্যবহার করেছেন—কখনো ৪-৫-১, কখনো ৪-২-৩-১, আবার একবার ৩-৪-৩।
এছাড়া, দলের মনোবলও নতুনভাবে গড়ে তুলেছেন এই স্প্যানিশ কোচ। তিনি খেলোয়াড়দের বিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছেন, যার প্রভাব চ্যালেঞ্জ লিগে পরিষ্কারভাবে দেখা গেছে। ইস্টবেঙ্গল শারীরিক এবং মানসিকভাবে আরো দৃঢ় হয়ে উঠেছে, এবং তাঁরা কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত।
কবে রবিনহোকে পেতে পারে ইমামি ইস্টবেঙ্গল? জানুন
প্রভসুখান গিলের সাহসী পারফরম্যন্স :
ইস্টবেঙ্গল গোলরক্ষক প্রভসুখান গিলের (Prabhsukhan Singh Gill) মরশুমের শুরুটা একেবারেই ভাল ছিল না। বেশ কিছু ম্যাচে তার পারফরম্যন্স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল কখনো তার সিদ্ধান্ত ছিল ভুল, কখনো বল ধরতে সময় নিতেন। তবে, চ্যালেঞ্জ লিগে গিল সত্যিকার অর্থে তার ক্লাস দেখিয়েছেন। তিনি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সেভ করেছেন এবং তার দলকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন।
প্রতিপক্ষ যেমন পারো এফসি, বসুন্ধরা কিংস, এবং নেজমেহ এসসি সকলেই কিছু সময়ের জন্য ইস্টবেঙ্গলকে চ্যালেঞ্জ করেছে, তবে গিলের দাপুটে পারফরম্যন্স তাঁকে একে একে ম্যাচে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে।
বাগান অনুশীলনে অনুপস্থিত এই ভারতীয় ডিফেন্ডার, পুরোটা জানুন
আনোয়ার আলির উজ্জ্বলতা :
প্রচুর বিতর্ক মধ্যে দিয়ে আনোয়ার আলি (Anwar Ali) মোহনবাগান থেকে ইস্টবেঙ্গলে যোগ দিয়েছিলেন। যদিও তাঁর ট্রান্সফারের বিষয়টি এখনও সুরাহা হয়নি, তবে আনোয়ার চ্যালেঞ্জ লিগে নিজের পারফরম্যন্সে চমক দেখিয়েছেন। প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে তার দৃঢ় এবং অভ্যস্ত খেলা দলকে সুরক্ষা প্রদান করেছে। বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে একটি অবিশ্বাস্য গোল এবং নেজমেহ এসসি’র বিপক্ষে অসাধারণ ডিফেন্ডিং ছিল তাঁর শীর্ষ পারফরম্যন্স। আনোয়ার আলির এই পারফরম্যন্স তাঁর স্কোয়াডের শক্তি বাড়িয়েছে এবং তাঁকে অনেক বেশি ভারসাম্যপূর্ণ করেছে।
এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে সাফল্য এবং উল্লিখিত পাঁচটি কারণ ইস্ট বেঙ্গলের জন্য নতুন আশার সঞ্চার করেছে। এখন, তাঁদের নজর আইএসএলে ভালো ফলাফলের দিকে। ৯ নভেম্বর তাঁদের জন্য বড় পরীক্ষা হবে, যখন তাঁরা ময়দানের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী মহামেডান এসসির বিপক্ষে মাঠে নামবে। এই ম্যাচটি তাদের জন্য হতে পারে আইএসএলে নতুন করে উত্থান শুরু করার সেরা সুযোগ।