জামিলের হাত ধরে ব্লু-টাইগার স্কোয়াডে সুযোগ পেতে পারেন পাঁচ খেলোয়াড়

ভারতীয় ফুটবল দল নতুন এক যুগে পা রাখতে চলেছে, কারণ সম্প্রতি খালিদ জামিলকে (Khalid Jamil) জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। ২০১২ সালে…

AIFF is keen to hand Khalid Jamil contract as Indian Football Team coach but will have to secure his release from Jamshedpur FC

ভারতীয় ফুটবল দল নতুন এক যুগে পা রাখতে চলেছে, কারণ সম্প্রতি খালিদ জামিলকে (Khalid Jamil) জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। ২০১২ সালে সাবিও মেদেইরার পর তিনিই প্রথম ভারতীয় কোচ যিনি ‘ব্লু টাইগার্স’-এর দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁর প্রধান লক্ষ্য হল ২০২৭ সালের এএফসি এশিয়ান কাপের জন্য দলকে যোগ্যতা অর্জন করানো। খালিদ জামিলের মতো অভিজ্ঞ কোচের আগমনের ফলে ভারতীয় ফুটবল দলে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। তিনি দেশীয় ফুটবল সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখেন এবং তাঁর নিজস্ব খেলার ধরনের জন্য পরিচিত।

প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবলার হিসেবে খালিদ দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতীয় খেলোয়াড়দের থেকে সেরা পারফরম্যান্স বের করে আনছেন। তাঁর কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং খেলার ধরন প্রতিপক্ষকে হতাশ করার জন্য যথেষ্ট। তিনি এমন কিছু খেলোয়াড়ের উপর নির্ভর করতে পারেন, যারা তাঁর কৌশল বোঝেন এবং তা মাঠে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে পারেন। এই প্রতিবেদনে আমরা এমন পাঁচজন খেলোয়াড়ের কথা বলব, যারা খালিদ জামিলের অধীনে ভারতীয় ফুটবল দলে সুযোগ পেতে পারেন।

   

১. মোহাম্মদ সানান
২০২৪-২৫ আইএসএল মরশুমে জামশেদপুর এফসি-র হয়ে মোহাম্মদ সানান ছিলেন একজন উদীয়মান তারকা। মাত্র ২১ বছর বয়সী এই উইঙ্গার গত মরশুমে ২৪টি আইএসএল ম্যাচে তিনটি গোল করেন, যার মধ্যে মুম্বাই সিটি এবং মোহাম্মদান এসসি-র বিপক্ষে তার গোলগুলো ছিল দর্শনীয়। সানানের গতি, দুর্দান্ত ড্রিবলিং ক্ষমতা এবং অপ্রত্যাশিত অবস্থান থেকে গোল করার ক্ষমতা তাকে বিশেষ করে তুলেছে। তিনি খালিদ জামিলের কাউন্টার-অ্যাটাকিং কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাঁর রক্ষণাত্মক গুণাবলীও জামিলের পছন্দের সঙ্গে মানানসই, এবং তিনি শীঘ্রই ভারতীয় দলে নিয়মিত মুখ হয়ে উঠতে পারেন।

২. অ্যালবিনো গোমেস
৩১ বছর বয়সী গোলকিপার অ্যালবিনো গোমেস ২০১৬-১৭ মরশুমে আইজল এফসি-র সঙ্গে খালিদ জামিলের অধীনে আই-লিগ শিরোপা জিতেছিলেন। ২০২৪ সালের গ্রীষ্মে জামিল তাকে জামশেদপুর এফসি-তে সই করান। গত মরশুমে ২৪টি আইএসএল ম্যাচে তিনি চারটি ক্লিন শিট রাখেন এবং মোহনবাগানের বিপক্ষে সেমিফাইনালে তার পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। বর্তমান ভারতীয় গোলকিপার বিশাল কাইথের অস্থির পারফরম্যান্সের কারণে গোমেসের জন্য জাতীয় দলে সুযোগ তৈরি হতে পারে। জামিলের রক্ষণাত্মক কাঠামোর সঙ্গে তিনি পুরোপুরি পরিচিত, এবং শীঘ্রই তিনি আন্তর্জাতিক অভিষেকের সুযোগ পেতে পারেন।

৩. আশুতোষ মেহতা
৩৪ বছর বয়সী ডিফেন্ডার আশুতোষ মেহতা খালিদ জামিলের অধীনে মুম্বাই এফসি, আইজল এবং নর্থইস্ট ইউনাইটেডে খেলেছেন। নিষেধাজ্ঞার পর ২০২৪-২৫ আইএসএল মরশুমে তিনি দুর্দান্তভাবে ফিরে আসেন। ২০০-র বেশি ম্যাচে অভিজ্ঞতা এবং ৮৬টি আইএসএল ম্যাচে অংশ নেওয়া মেহতা একজন কঠোর পরিশ্রমী ডিফেন্ডার। তিনি জামিলের পছন্দের খেলোয়াড়, কারণ তিনি দলের রক্ষণকে শক্তিশালী করতে সর্বদা শতভাগ দেন। ভারতীয় দলের রাইট-ব্যাক পজিশনে বর্তমানে প্রতিযোগিতা রয়েছে, এবং মাত্র একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা মেহতা চার বছর পর জাতীয় দলে ফিরে আসার সম্ভাবনা রাখেন।

৪. ইমরান খান
৩০ বছর বয়সী ইমরান খান খালিদ জামিলের সঙ্গে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এবং জামশেদপুর এফসি-তে কাজ করেছেন। ২০২৪-২৫ আইএসএল মরশুমে তিনি ২৪টি ম্যাচে তিনটি অ্যাসিস্ট করেন। ইমরান একজন বহুমুখী খেলোয়াড়, যিনি উইঙ্গার বা সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতে পারেন। তাঁর শক্তি, উদ্যম এবং সৃজনশীলতা জামিলের কৌশলে পুরোপুরি মানানসই। তিনি জামিলের দলে আক্রমণাত্মক এবং রক্ষণাত্মক উভয় ভূমিকায় দক্ষতা দেখিয়েছেন, এবং এখন তিনি জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার জন্য প্রস্তুত।

Advertisements

৫. মুহাম্মদ উভাইস
২৭ বছর বয়সী মুহাম্মদ উভাইস এই গ্রীষ্মে পাঞ্জাব এফসি-তে বড় অঙ্কের চুক্তিতে যোগ দেন, কিন্তু তার উত্থানের জন্য তিনি খালিদ জামিলের কাছে কৃতজ্ঞ। জামশেদপুর এফসি-তে জামিলের অধীনে তিনি ২০২৪-২৫ মরশুমে ২৪টি আইএসএল ম্যাচে খেলেন। প্রধানত লেফট-ব্যাক হিসেবে খেললেও তিনি রাইট-ব্যাক এবং সেন্টার-ব্যাক হিসেবেও খেলতে পারেন। উভাইস মাঝেমধ্যে উইঙ্গ-ব্যাক হিসেবে আক্রমণে সহায়তা করেন এবং দুর্দান্ত ম্যান-মার্কিং ক্ষমতার জন্য পরিচিত। জামিলের কৌশল তার সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়, এবং তার সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স তাকে জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার দাবিদার করে তুলেছে।

খালিদ জামিলের কৌশল এবং সম্ভাবনা
খালিদ জামিল তাঁর প্রতিরক্ষামূলক কাঠামো এবং কাউন্টার-অ্যাটাকিং কৌশলের জন্য পরিচিত। তিনি দলকে শক্তিশালী রক্ষণ গড়ে তুলতে এবং দ্রুত আক্রমণে গোলের সুযোগ তৈরি করতে পছন্দ করেন। আইজল এফসি-র সঙ্গে ২০১৬-১৭ মরশুমে আই-লিগ জয় এবং নর্থইস্ট ইউনাইটেড ও জামশেদপুর এফসি-র সঙ্গে আইএসএল-এ সাফল্য তাঁর কোচিং দক্ষতার প্রমাণ। তিনি তরুণ খেলোয়াড়দের উপর ভরসা করেন এবং তাদের স্বাধীনতা দেন, যা সানানের মতো তরুণ প্রতিভাদের জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে।

জামিলের প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে এই মাসে সিএএফএ নেশনস কাপ, যেখানে ভারত তাজিকিস্তান, ইরান এবং আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে। এই টুর্নামেন্ট দলের রসায়ন গড়ে তুলতে এবং কৌশল পরীক্ষা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। এছাড়া, অক্টোবরে এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচ রয়েছে। জামিলের সহজ কিন্তু কার্যকর কৌশল এবং খেলোয়াড়দের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভারতীয় ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।

খালিদ জামিলের নেতৃত্বে ভারতীয় ফুটবল দল নতুন সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। মোহাম্মদ সানান, অ্যালবিনো গোমেস, আশুতোষ মেহতা, ইমরান খান এবং মুহাম্মদ উভাইসের মতো খেলোয়াড়রা তাঁর কৌশলে পুরোপুরি মানিয়ে যেতে পারেন। তাদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং জামিলের সঙ্গে পূর্বের কাজের সম্পর্ক তাদের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলেছে। ভারতীয় ফুটবল ভক্তরা এখন অপেক্ষায় রয়েছেন, জামিল কীভাবে এই প্রতিভাদের ব্যবহার করে দলকে এশিয়ান ফুটবলে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যান।