ক্লাব বিশ্বকাপে দাপটের শুরু পিএসজি-বায়ার্নের, গোলহীন হ্যারি কেন

রবিবার থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে ক্লাব বিশ্বকাপের (FIFA Club World Cup 2025) নতুন সংস্করণ। এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে ৩২টি দল, যার মধ্যে রয়েছে ইউরোপ, দক্ষিণ…

FIFA Club World Cup 2025 Update

রবিবার থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে ক্লাব বিশ্বকাপের (FIFA Club World Cup 2025) নতুন সংস্করণ। এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে ৩২টি দল, যার মধ্যে রয়েছে ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়া এবং ওশেনিয়ার সেরা ক্লাবগুলো। এই টুর্নামেন্টের প্রথম দুই দিনেই ফুটবলপ্রেমীদের চোখে পড়ে গিয়েছে চূড়ান্ত বৈষম্য। একদিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ী পিএসজি (PSG) ও বুন্দেশলিগা চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখের (Bayern Munich) মতো পরাক্রমশালী ক্লাবের আধিপত্য, অন্যদিকে অপেশাদার অকল্যান্ড সিটির হতশ্রী হার।

প্রথম দিনেই উত্তেজনার পারদ চড়িয়েছিল পিএসজি বনাম আতলেতিকো মাদ্রিদের (Atletico Madrid) ম্যাচ। সদ্য ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া প্যারিসের দল যেন সেই রেশই টেনে আনল ক্লাব বিশ্বকাপে। ৪-০ ব্যবধানে কার্যত পাত্তাই দেয়নি আতলেতিকোকে। ফাবিয়ান রুইজের দূরপাল্লার গোল, ভিতিনিয়ার নিখুঁত ফিনিশ, সেনি মায়ুলুর গোল, আর লি কাং-ইনের ইনজুরি টাইমে পেনাল্টি—সব মিলিয়ে একপাক্ষিক দাপটের ছবি।

   

শুধু গোল নয়, পরিসংখ্যানে আরও বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে পিএসজি। পুরো ম্যাচে ৮১৮টি পাস খেলে ৯৪ শতাংশ সফলতা, আর বলের দখলে ৭৪ শতাংশ—এতেই স্পষ্ট লুইস এনরিকের দল কতটা নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল ম্যাচ। আশ্চর্যজনকভাবে স্কোয়াডে ছিলেন না ওউসমান দেম্বেলে, তবু দাপট কমেনি। আতলেতিকোর ১৬টি শটের মধ্যে ১১টি অন টার্গেট হলেও তা কাজে লাগাতে পারেননি গ্রিয়াজমান-আলভারেসরা।

অন্যদিকে, দ্বিতীয় দিনের সবচেয়ে বড় চমক ছিল বায়ার্ন মিউনিখের ১০-০ ব্যবধানে জয়। প্রতিপক্ষ ছিল নিউ জিল্যান্ডের অকল্যান্ড সিটি এফসি (Auckland City) একটা দল, যাদের অধিকাংশ খেলোয়াড় পেশাদার নন। কেউ স্কুলশিক্ষক, কেউ আবার রেস্তরাঁয় কাজ করেন। এমন একটা দলের বিরুদ্ধে বায়ার্ন যে গোলবন্যা বইয়ে দেবে, তা অনুমেয়ই ছিল, তবে যে ভাবে তা রেকর্ডে পরিণত হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ফিফার নতুন ফরম্যাট নিয়ে।

প্রথমার্ধেই বায়ার্ন তুলে নেয় ৬টি গোল। কোমান, ওলিসে, মুলারদের সঙ্গে গোলের তালিকায় নাম লেখান সাচা বোয়িও। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নামা জামাল মুসিয়ালা হ্যাটট্রিক করে নিজের জাত চেনান। ম্যাচের শেষদিকে আবার গোল করেন মুলার, স্কোরলাইন দাঁড়ায় ১০-০। কিন্তু এই ম্যাচ নিয়ে সবচেয়ে বড় চিন্তার জায়গা—বায়ার্নের গোলের তালিকায় হ্যারি কেনের নাম নেই! স্ট্রাইকার হিসেবে দলে থাকা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন নিষ্প্রভ।

Advertisements

এই ম্যাচ দিয়েই ফিফার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয় এল ক্লাব বিশ্বকাপে। আগের রেকর্ড ছিল আল হিলালের ১-৬ হার ২০০২ সালে, যা এই ম্যাচের প্রথমার্ধেই টপকে যায়। এই বড় ব্যবধানই যেন ফিফার টুর্নামেন্টে প্রতিযোগিতার ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল।

অন্যদিকে ব্রাজিলের বোতাফোগো ২-১ গোলে হারায় সিয়াটেল সাউন্ডার্সকে, আর পোর্তো-পামেইরাস ম্যাচ ড্র হয় গোলশূন্যভাবে। তবে স্পটলাইটে থাকল পিএসজি ও বায়ার্নের একচেটিয়া আধিপত্য। এই দু’দলের ফর্ম দেখে মনে হচ্ছে, শিরোপার লড়াই অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে গেছে।

প্রথম দুই দিনের ছবি পরিষ্কার—ফুটবল মানেই শুধু খেলার মাঠ নয়, তার পরিকাঠামো, পেশাদারিত্ব, এবং মানের সমতা জরুরি। ক্লাব বিশ্বকাপের এই নতুন সংস্করণ হয়তো বিশ্বজুড়ে ক্লাব ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়াবে, কিন্তু একইসঙ্গে ফিফাকে ভাবিয়ে তুলছে—এতটা বৈষম্য টুর্নামেন্টের ভবিষ্যৎ কতটা উজ্জ্বল করবে?