কোচ না ম্যানেজমেন্ট, ইস্টবেঙ্গলের ব্যর্থতার মূলে কে?

ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) ব্যর্থতা চলছেই। সমস্যাটা কোথায় হচ্ছে? বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ২০২৩র এপ্রিলে কুয়াদ্রাত যখন ইস্টবেঙ্গলের কোচ হয়ে এলেন তখন হাল্কা আওয়াজ উঠেছিল যে তিনি নাকি…

East Bengal Struggles: Who Is to Blame for the Club's Continued Failures - Coach or Management?

ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) ব্যর্থতা চলছেই। সমস্যাটা কোথায় হচ্ছে? বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ২০২৩র এপ্রিলে কুয়াদ্রাত যখন ইস্টবেঙ্গলের কোচ হয়ে এলেন তখন হাল্কা আওয়াজ উঠেছিল যে তিনি নাকি CTO হিসেবে মান্দার তামহানে’কে চাইছেন! বেঙ্গালুরু’তে কোচ থাকাকালীন কুয়াদ্রাত খুব কাছ থেকে মান্দারকে দেখেছেন, ওর কাজ করার প্যাশন দেখেছেন! দুজনে দারুন বন্ধুও বটে!

মান্দার তামহানে! যারা বেঙ্গালুরু এফসি’র ইতিহাস একলাইনও জানেন তারা নিশ্চয়ই এই নামটা জানেন! দেশের সব ট্রফি জিতিয়ে, বেঙ্গালুরুকে দেশের সেরা ক্লাব বানিয়ে, দশ বছরের সম্পর্ক ভেঙ্গে মান্দার তখন সবে বেঙ্গালুরু ছেড়েছেন, নতুন ক্লাব জয়েন করেননি!

   

কিন্তু মান্দারের নাম ওঠা মাত্রই বাজেট ঘাটতির কথা বলে সেই প্রস্তাব নাকি পত্রপাঠ নাকচ করে দেওয়া হয় ইমামি ইস্টবেঙ্গলের তরফ থেকে! উলটে CTO হিসেবে ভরসা রাখা হয় অময় ঘোষাল নামের এক ব্যাক্তির উপর!

সপ্তাহ দুয়েক বাদে মানে ২০২৩র মে মাসে সেই মান্দারকে CEO করে নর্থইস্ট ইউনাইটেডে নিয়ে আসেন জন আব্রাহাম! রেজাল্টও মেলে হাতেনাতে! ২০২৪র ডুরান্ড চ্যাম্পিয়ন হয় নর্থইস্ট, ক্লাবের প্রথম মেজর! আর ২০২২এ সবার শেষে আইএসএল শেষ করা নর্থইস্ট ২০২৩এ শেষ করে ৭এ আর এবার তাদের সুপার সিক্স প্রায় পাকা! অর্থাৎ উন্নতির গ্রাফ উর্ধ্বমুখী! আর মান্দাদের হাত ধরে নর্থইস্টে আসা আলাদীন আজারাই এখন লিগের টপ স্কোরার! নেস্টর, বেমাম্মের’রা দুরন্ত ফুটবল খেলছেন প্রতি ম্যাচে! আর CTO হিসেবে ইস্টবেঙ্গলে অময় ঘোষালের কি অবদান সেটা তো আমরা প্রতিদিনই দেখছি! তাই আর আলাদা করে কিছু লিখলাম না!

৯০ মিনিটের মাঠের ফুটবল’টা যদি বিজ্ঞান হয় তাহলে ৯০ মিনিটের বাইরের ফুটবল’টা ব্যাবসা! লাভ ক্ষতির অঙ্কে চলা একটা পাতি কর্পোরেট বিজনেস যেখানে পারফরম্যান্সই প্রথম আর শেষ কথা! যেখানে সাফল্যের জন্য রিওয়ার্ড থাকলে ব্যার্থতার জন্য জবাবদিহি থাকে! ক্রমাগত ব্যার্থতায় সরে যাওয়ার রীতি থাকে! যেখানে দিনের পর দিন, প্রতিদিন নিজের স্যালারি জাস্টিফাই করতে হয়! যেখানে পারফরম্যান্স না করে রেয়াত পাওয়ার রেওয়াজ নেই!

বিশেষজ্ঞরা এও বলছেন, ইস্টবেঙ্গলে সেসবের বালাই নেই! ইস্টবেঙ্গল না বিজ্ঞান মানে না বিজনেস! ইস্টবেঙ্গল শুধু বোঝে কাটমানির টাকা, আর ক্লাব লনে জামার উপরের দুটো বোতাম খুলে গলার সোনার চেন দেখিয়ে ঘুরে বেড়ানো বা ক্লাবে বসে মদ মাংসর মোচ্ছবের ক্ষমতা! এই দুটোতে কোনোভাবেই হাত পড়া চলবে না! তাই কর্তৃত্ব নিয়ে কাজ করতে চাওয়া কোয়েস, শ্রী সিমেন্টের মত নামজাদা কোম্পানি হোক বা মান্দার তামহানের মত ফুটবল এক্সপার্ট – এদের সবার জন্যই ইস্টবেঙ্গলের দরজা বন্ধ! বদলে টিমের দায়িত্ব থাকবে অময় ঘোষাল বা ইমামির হাতে যাদের না আছে যোগ্যতা না আছে ফুটবল নিয়ে কাজ করার মানসিকতা!

ফলত গত বিশ বছর ধরে যা হওয়ার তাইই হচ্ছে! চমক দেখিয়ে গাদা গাদা টাকা খরচা করে আনোয়ার-জিকসন-দিমি আনা হচ্ছে! কিন্তু ফুটবলের মত বডি-কন্ট্যাক্ট গেমে তাঁরা চোট পেয়ে গেলে তাদের পরিবর্তে কারা খেলবে সেটা ভাবা হচ্ছে না! উড়ে এসে জুড়ে বসা ফিজিও টিমকে আর্মি ট্রেনিং করালে বা চোট পাওয়া প্লেয়ারের রিকভারিতে দেরি হলে তাঁর কাছে জবাব চাওয়া হচ্ছে না! পরিস্থিতি খুব খারাপ হলে কোচ ছাঁটাই! মানে রোগ সারানোর ব্যাবস্থা না করে ডাক্তার বদল! আর CTO ধরাছোঁয়ার বাইরে!

প্রশ্ন’টা হচ্ছে, কে ভাববে? কে জবাব চাইবে? কে একটা স্ট্রং রিজার্ভ বেঞ্চ বানাবে যেটা ফার্স্ট ইলেভেন’কে যে কোনো পরিস্থিতি’তে রিপ্লেস করতে পারে? সেরকম ভাবার লোকই যে এখন কী ইস্টবেঙ্গলে নেই?