কলকাতা ডার্বি (Kolkata Derby) মানেই ইস্ট-মোহনের লড়াই। দুই দলের সমর্থকরা গলা ফাটান নিজেদের প্রিয় দলের হয়ে, ফলে উত্তেজনার থার্মোমিটারে চড়চড়িয়ে চড়ে পারদ। এই হাইভোল্টেজ ম্যাচের কাছে ফিকে হয়ে যায় বিদেশের নামজাদা লিগ গুলো, সেই ম্যাচের অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার।
আগামী ১১ জানুয়ারি গুয়াহাটির স্টেডিয়ামে মহারণ হবে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan SG) এবং ইস্টবেঙ্গল এফসির (East Bengal FC) মধ্যে। এই ম্যাচের গুরুত্ব সেই অর্থে আরও বেড়ে গেছে। কারণ ডার্বির ফলাফল কেবল আইএসএল টুর্নামেন্টের পয়েন্ট টেবিলের হালচালই বদলাবে না, বরং দুই দলের মর্যাদার প্রশ্নও জড়িত। তবে, এই ম্যাচের আগে কিছু বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে চোটে জর্জরিত ইস্টবেঙ্গল এফসিকে (East Bengal FC)। কিন্তু এরই মধ্যে সুখবরর দলের সঙ্গে অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন বাংলার সন্তোষ জয়ী অধিনায়ক চাকু মান্ডি (Chaku Mandi)।
গত কয়েকটি মরসুমে কলকাতা ডার্বির উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই দলের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলে আসে এবং যে কোনও দলই চায় এই ঐতিহ্যবাহী ম্যাচে জয় পেতে। বিশেষত ইস্টবেঙ্গল, যারা এবারের আইএসএল মরসুমে অতটা সফল হতে পারেনি, তারা এই ডার্বিতে সাফল্য পেলে মর্যাদার প্রশ্নে মোহনবাগানকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে। তবে, সাফল্যের পথ মোটেও সহজ নয়।
মশাল বাহিনীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাদের চোটপ্রাপ্ত খেলোয়াড়দের অবস্থা। স্প্যানিশ তারকা সাউল ক্রেসপো, যিনি ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণভাগের মূল স্তম্ভ, তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ চোটের কারণে মাঠের বাইরে। চলতি মরশুমে ওডিশার বিরুদ্ধে খেলার সময় চোট পান ক্রেসপো, এবং এরপর বেশ কিছু ম্যাচে তাকে দেখা যায়নি। তবে, বুধবার সকালেই কলকাতায় পা রেখেছেন তিনি। ইস্টবেঙ্গলের অনুশীলনে তার উপস্থিতি সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস তৈরি করেছে। তবে, সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, তিনি কলকাতা ডার্বিতে খেলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সাউল ক্রেসপোর খেলা ইস্টবেঙ্গলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
এদিকে, ক্রেসপোর সঙ্গে চোটের শিকার হয়েছিলেন মাদিহ তালালও। কিন্তু, তার চোট সাউল ক্রেসপোর তুলনায় অনেক বেশি গুরুতর। তালাল এখন পুরো মরসুম থেকেই ছিটকে গিয়েছেন, যার ফলে ইস্টবেঙ্গলকে তার অভাব অনুভব করতে হবে। তালালের বিকল্প হিসেবে, সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার ফরোয়ার্ড রিচার্ড সেলিসকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যদিও, তারও ডার্বিতে খেলার সম্ভাবনা খুব কম। এই কারণে ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণভাগ দুর্বল হতে পারে এবং মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের মতো শক্তিশালী দলটির বিরুদ্ধে তাদের আরও বেশি চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে।
তবে, ইস্টবেঙ্গলের সেরা অস্ত্র হতে পারে তাদের ঐতিহ্য এবং সমর্থকদের উন্মাদনা। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ডার্বি মানেই আলাদা কিছু, এবং ইতিহাস দেখিয়েছে যে কখনে কখন ইস্টবেঙ্গল তার কষ্টকর পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো পারফরম্যান্স করেছে। এবারেও তাদের তরুণ ফুটবলাররা বড় দায়িত্ব নিতে পারে। সবার দৃষ্টি থাকবে আক্রমণভাগে যারা খেলবেন, তাদের উপর। এরই মধ্যে দলের অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন বাংলার সন্তোষ জয়ী অধিনায়ক চাকু মান্ডি । যেমন তেতে উঠেছেন সমর্থকরা, তেমনি ড্রেসিং রুমের পরিবেশ বদলাতে শুরু করে দিয়েছে। তবে আগামীকাল তিনি দলের সঙ্গে গুয়াহাটির উদ্দেশ্যে উড়ে যাবেন কিনা, সেই দিকেই নজর রয়েছে সকলের।
পয়েন্ট টেবিলের বর্তমান অবস্থা ইস্টবেঙ্গলের জন্য বেশ হতাশাজনক। তারা ১১ নম্বরে অবস্থান করছে, যেখানে তারা ১৪ ম্যাচে মাত্র ১৪ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। অন্যদিকে, তাদের চির প্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান শীর্ষে অবস্থান করছে। এই অসম অবস্থানে, ইস্টবেঙ্গলের জন্য ডার্বি জেতা আরও বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। এই মুহূর্তে একমাত্র তিন পয়েন্টই তাদের জন্য বিশেষ কিছু অর্জন হতে পারে এবং দলের সমর্থকদের জন্য একটি বড় উৎসাহের বিষয়। এখন দেখার বিষয়, চোট সমস্যা সত্ত্বেও ইস্টবেঙ্গল কীভাবে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে। তবে ইস্টবেঙ্গল যদি তাদের সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করতে পারে, তাহলে এ ম্যাচটি হতে পারে ঐতিহাসিক, যা তাদের মরসুমের গতিপথ বদলে দিতে পারে।