কোনো মতে সুপার সিক্সের আশা বাঁচিয়ে রাখার মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। কিন্তু দলটির জন্য একের পর এক চোট যেন হয়ে উঠছে অভিশাপ। গতকাল মঙ্গলবার দলের প্র্যাকটিস সেশনে বড় ধরনের চোট পেয়ে একেবারে ভেঙে পড়েন জর্ডানের ডিফেন্ডার হিজাজি মাহের (Hijazi Maher)। এই চোট ইস্টবেঙ্গল শিবিরের জন্য আবারও এক বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াল।
মুম্বই সিটি এফসির বিরুদ্ধে ৩১ শে জানুয়ারি মুম্বইয়ে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলতে হবে ইস্টবেঙ্গলকে। এই ম্যাচে জয় পাওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথই নেই দলটির জন্য। কারণ চলতি আইএসএল ( মরসুমে প্রথম ছয়টি দলের মধ্যে জায়গা পেতে তিন পয়েন্ট জিতে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু সেই লক্ষ্যেই যখন দলের সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখনই ঘটে এই দুর্ঘটনা।
মঙ্গলবারের প্র্যাকটিস সেশনের প্রথম আধঘণ্টার মধ্যেই শোনা যায় হিজাজি মাঠ থেকে বেরিয়ে আসছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই জানা যায় তিনি ডান পায়ের হাঁটুর গুরুতর চোট পেয়েছেন যা তার স্বাভাবিক চলাফেরাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এর পরে চোটের গভীরতা বুঝে সে সময় পুরো দলই হতাশ হয়ে পড়ে। জানা যায় হিজাজি প্র্যাকটিস মাঠে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার অবস্থা এতটাই গুরুতর ছিল যে তাকে গাড়ি করে মাঠ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। মাঠে উপস্থিত সঙ্গী-সাথীদের দেখা তাঁর জন্য আরও কষ্টকর হয়ে ওঠে। কারণ তারা জানতেন যে এই চোটের ফলে তার মাঠে ফিরে আসা কতটা কঠিন হতে পারে।
এদিকে মাদিহ তালালকেও খুব শিগগিরই অস্ত্রোপচার করতে হবে। বুধবার তার অস্ত্রোপচার করার কথা অনন্ত যোশীর অধীনে। পরবর্তী চারদিন তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে এবং এই সময়ের মধ্যে তার পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। তালালের অস্ত্রোপচারই যে দলের রক্ষণ শক্তির জন্য আরও বড় ধাক্কা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ তিনি ছিলেন দলের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার এবং তার অভাব ভালোভাবেই অনুভূত হবে।
এই চোটে ইস্টবেঙ্গলের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। চলতি আইএসএল মরশুমে চোটের কারণে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারকে মিস করেছে লাল-হলুদ শিবির। মাদিহ তালাল, আনোয়ার আলি, সওল ক্রেসপো, মহম্মদ রাকিপ, প্রভাত লাকড়া—সবাই চোটের কারণে মাঠের বাইরে রয়েছেন। তাদের ফেরা না হওয়া পর্যন্ত দলটির অবস্থান কঠিন। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সুপার সিক্সে জায়গা পেতে হলে এসব ফুটবলারদের দ্রুত সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরতে হবে।
হিজাজি মাহেরের চোট সেই তাগিদে আবারও বড় প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। জর্ডানের এই ডিফেন্ডার ইতিমধ্যেই ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণভাগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন এবং তার অনুপস্থিতি নিশ্চিতভাবেই দলের জন্য বড় সংকট হয়ে দাঁড়াবে। দলটির কোচ অস্কার ব্রুজো অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন তিনি যে কোনো মূল্যে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে চান। তবে চোটের কারণে পরিকল্পনা বারবার বিঘ্নিত হওয়ায় ব্রুজোকে বারবার রণকৌশল বদলাতে হচ্ছে যা দলের মনোবলেও প্রভাব ফেলছে।
দলের এই কঠিন সময়ে সমর্থকদের কাছ থেকে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদের জন্য প্রার্থনা চেয়েছেন কোচ অস্কার ব্রুজো। তিনি জানিয়েছেন, দলের মধ্যে যদি মনোবল বজায় থাকে এবং নিজেদের স্বাভাবিক খেলায় ফিরে আসতে পারে, তাহলে সুপার সিক্সে খেলার আশা হারানো যাবে না।
এখন দেখার বিষয় হিজাজির চোট কতটা গুরুতর হয় এবং ইস্টবেঙ্গল কি দ্রুত এই সংকট কাটিয়ে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভালো ফল তুলে আনতে সক্ষম হবে।
চোটের ধাক্কা আর বাকি সমস্যাগুলোর মধ্যে দলের ঐক্য এবং মনোবলই এই কঠিন সময়ে সবচেয়ে বড় শক্তি হতে হবে ইস্টবেঙ্গলের জন্য।