ডার্বির (Kolkata Derby) আগেই চাপে বিনো জর্জের ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। মরসুমের (CFL 2025) গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ের ঠিক আগে পাঠচক্রের (Mamoni Group Patha Chakra) কাছে ১-০ গোলে হার। মঞ্চ ছিল বারাকপুরের বিভূতিভূষণ স্টেডিয়াম। কিন্তু ফলাফলে মশাল বাহিনীর জন্য কিছুই জুটল না। যেমন না জয়, না আত্মবিশ্বাস, না উন্নত পারফরম্যান্স।
এদিন ৮৭ মিনিটে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্সের ভুল বোঝাবুঝি কাজে লাগিয়ে বল নিজের দখলে নিয়ে গোল করেন পাঠচক্রের ডেভিড মতলা। সামনে এগিয়ে আসেন গোলকিপার আদিত্য পাত্র। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। নিখুঁত প্লেসিংয়ে বল ঠেলে দেন জালে। পাঠচক্র উল্লাসে ফেটে পড়ে, আর হতাশায় মুখ ঢাকে ইস্টবেঙ্গলের বেঞ্চ।
গত ম্যাচে কাস্টমসের বিরুদ্ধে দুই গোলে পিছিয়ে থেকে কোনও মতে ড্র করেছিল লাল-হলুদ শিবির। তখনই দেখা গিয়েছিল রক্ষণভাগের সমস্যা। সেই ম্যাচের পরে কোচ বিনো জর্জ নিজেই স্বীকার করেছিলেন, তাঁর দলের ডিফেন্স বারবার ভেঙে পড়ছে। আশ্বাস দিয়েছিলেন সমাধানের। কিন্তু পাঠচক্রের বিরুদ্ধে একই ছবি ধরা পড়ল।
ডার্বির ঠিক আগে এমন একগুচ্ছ সমস্যা ইস্টবেঙ্গলের চিন্তা আরও বাড়িয়ে তুলবে নিঃসন্দেহে। তার ওপর গোল করার জন্য ভরসাযোগ্য কোনও স্ট্রাইকারও পাওয়া যাচ্ছে না। মাঠে নামছেন একের পর এক মিডফিল্ডার ও উইঙ্গাররা, কিন্তু সঠিক ফিনিশার না থাকায় আক্রমণগুলো বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। আক্রমণভাগে তালমিলের অভাব চোখে পড়েছে গোটা ম্যাচ জুড়েই।
অন্যদিকে, সম্পূর্ণ ভিন্ন ছবি পাঠচক্র শিবিরে। চারটি ম্যাচ, চারটি জয়, কোনও গোল খায়নি। এই দুর্ভেদ্য পারফরম্যান্সের নেপথ্যে গোলকিপার অর্ণব দাস। ব্যক্তিগত শোকের মাঝেও মাঠে নেমে যেভাবে নিজের দলকে সামলেছেন, তাতে ফুটবলপ্রেমীদের কুর্নিশ জানাতেই হয়। শেষের দিকে ইস্টবেঙ্গলের একটি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়ে দেন তিনি। তাঁর উপস্থিতি গোটা রক্ষণভাগকে করে তোলে আরও সুসংগঠিত।
রক্ষণে পার্থ সেনের দলের ঘড়ি-মেপে পরিকল্পনা, মিডফিল্ডে বল বিলি এবং আক্রমণে গতির ঝড় এদিন সব কিছুতেই এগিয়ে ছিল পাঠচক্র। তাদের খেলা ছিল ধৈর্য, ভারসাম্য আর ফিটনেসের অনবদ্য সংমিশ্রণ। প্রতি ম্যাচে তারা নিজেদের খেলার মান বাড়িয়ে চলেছে, যা তাদের প্রতিযোগিতায় একক শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে।
এই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের ভক্তদের হতাশ হওয়াটাই স্বাভাবিক। বড় দলের পরিচয় শুধু নাম নয়, মাঠে তার প্রতিফলন ঘটাতে হয় খেলার মাধ্যমে। কিন্তু লাল-হলুদের ফুটবলারদের মধ্যে সেই ক্ষুধা, সেই দায়বদ্ধতার অভাবই যেন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ডার্বির আগে এই অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে শুধু প্র্যাকটিসে নয়, দরকার মানসিক দিক থেকেও ঘুরে দাঁড়ানো। এখন দেখার, ডার্বির মঞ্চে ইস্টবেঙ্গল ঘুরে দাঁড়াতে পারে কিনা। নইলে এই মরসুমও কি অতীতের ছায়া হয়েই থেকে যাবে?
East Bengal lost against Mamoni Group Patha Chakra by 1-0 ahead of Kolkata Derby in CFL 2025