কলকাতা লিগের (CFL 2025) সর্বাধিক চ্যাম্পিয়ন ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। ৩৯ বার ঘরোয়া লিগ জয়ের নজির গড়া এই ক্লাবের নামই যথেষ্ট ভয় ধরাতে প্রতিপক্ষের মনে। যদিও গতবারের খেতাব এখনও আদালতের বিচারাধীন, লাল-হলুদের কাছে তাতে কিছুই আসে যায় না। তাঁদের বিশ্বাস, মাঠে পারফরম্যান্সই শেষ কথা। আর সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই ২০২৫ সালের কলকাতা লিগ অভিযান শুরু করতে চলেছে ইস্টবেঙ্গল, যেন শেষবারের ‘ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন’-এর পরিচয় বজায় রেখেই নতুন পথচলা শুরু।
নতুন মরসুমের প্রথম ম্যাচেই তাদের মুখোমুখি মেসারার্স ক্লাব। অভিজ্ঞতা ও প্রতিভায় ভরা এই ক্লাব যে সহজ প্রতিপক্ষ নয়, তা বিলক্ষণ জানে ইস্টবেঙ্গল শিবির। তবুও প্রতিপক্ষকে নিয়ে বিশেষ ভাবছে না কোচ বিনো জর্জ। তাঁর সোজাসাপটা মন্তব্য, “ঘোষণা হোক বা না হোক, গতবার আমরাই চ্যাম্পিয়ন। এবারও সেই মানসিকতা নিয়েই মাঠে নামতে হবে।” এমন এক মনোভাব দলের ভেতর এক নতুন উদ্যম ছড়িয়ে দিচ্ছে।
প্রথম ম্যাচের আগের দিন প্র্যাকটিসে কোচ বিনো জর্জের দশ মিনিটের ‘ক্লাস’ই বুঝিয়ে দেয়, মাঠে কেমন ছন্দ ও মানসিকতা নিয়ে নামতে হবে ফুটবলারদের। ঘরোয়া লিগে ছয় ভূমিপুত্রের নিয়ম নিয়ে কিছুটা অসন্তুষ্ট হলেও, আইএফএর নিয়ম মেনেই এগোতে রাজি কোচ। আর এই মানসিকতাই দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ভিত গড়ে তুলছে।
সবচেয়ে বড় কথা, গত বছরের কোর গ্রুপটি ধরে রাখতে পেরেছে ক্লাব ম্যানেজমেন্ট। সায়ন ব্যানার্জি, আদিত্য পাত্র, চাকু মাণ্ডি, কুশ ছেত্রী, মনোতোষ চাকলাদার এদের মতো ফুটবলাররা ফের রয়েছেন স্কোয়াডে। অভিজ্ঞতা ও ছন্দে থাকা এই ফুটবলাররা দলের ভারসাম্য বজায় রাখতে বড় ভূমিকা নেবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন নতুন মুখ, বাংলার সন্তোষ ট্রফি জয়ী দলের দুই সদস্য—মনোতোষ মাঝি ও বিক্রম প্রধান। নতুন ও পুরনোদের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে এক ভারসাম্যপূর্ণ দল।
দলের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছিল সময়মতো। কোচ বিনো কিছুটা দেরিতে যোগ দিলেও সহকারী কোচ অর্চিষ্মান বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে বড় দলগুলির মধ্যে ইস্টবেঙ্গলই প্রথম প্র্যাকটিস শুরু করেছিল। এতেই বোঝা যায়, চলতি মরশুমে কিছুই খুচরো ভাবছে না লাল-হলুদ। প্রতিটি ম্যাচে নিজেদের শ্রেষ্ঠ পারফরম্যান্স দিতেই তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
ইতিহাস বলছে, ১৯৭০-৭৫ সালের মধ্যে টানা ছয়বার খেতাব জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। এই সময়ের মধ্যে গোল না খাওয়ার নজিরও রয়েছে তাদের দখলে। ২০১০-২০১৭ সময়সীমায় আবার টানা আটবার শিরোপা জিতে রেকর্ড গড়েছিল তারা। গত কয়েক বছরে কিছুটা ছন্দ হারালেও, গত বছর ফের নিজেদের চেনা রূপে ফিরেছিল দল। এবার সেই ছন্দকেই ধরে রাখাই মূল লক্ষ্য।
কোচের মতে, “সাফল্য পাওয়া যতটা কঠিন, তা ধরে রাখা তার চেয়েও কঠিন। তবে ইস্টবেঙ্গল সবসময়ই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামে। সেই মনোভাবই আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
ইস্টবেঙ্গলের লক্ষ্য এবার দ্বিমুখী—একদিকে খেতাব পুনরুদ্ধার, অন্যদিকে সিনিয়র দলে আরও বেশি করে প্রতিভাবান ফুটবলার তুলে আনা। ঘরোয়া লিগ এখন শুধু ট্রফি জয়ের মঞ্চ নয়, ভবিষ্যতের তারকা গড়ার কারখানাও। আর সেই লক্ষ্যেই ধাপে ধাপে এগোচ্ছে ক্লাব।
ইস্টবেঙ্গলের লিগ অভিযান তাই শুধুই ম্যাচের ফলাফলে আটকে নেই। এটি এক ঐতিহ্য, এক দায়বদ্ধতা। আর সেই ঐতিহ্যকে বুকে নিয়ে, নতুন উদ্যমে লাল-হলুদের অভিযান শুরু—ফিরে পাওয়ার, ফিরে দেখানোর।
East Bengal in CFL 2025 Campaign