ফুটবল যে শুধুই খেলা নয়, বিশেষ করে বাংলার বুকে তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। আর যদি ম্যাচ হয় কলকাতার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানের মধ্যে। তবে নিঃসন্দেহে বাঙালির হৃদয়ের স্পন্দনে পরিণত হয়। এবারের ডুরান্ড কাপ (Durand Cup 2025) কোয়ার্টার ফাইনালে সেই বহুল প্রতীক্ষিত লড়াই তথা কলকাতা ডার্বি (Kolkata Derby)। আগামী ১৭ আগস্ট, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মুখোমুখি হচ্ছে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) ও মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan SG)। একদিকে নকআউট রাউন্ডের টিকিট, অন্যদিকে বাঙালির আবেগ। সব মিলিয়ে এই ম্যাচ ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে ময়দানের অলিন্দে।
এই মরসুমে ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাব যেন এক নতুন রূপে দেখা দিয়েছে। অস্কার ব্রুজোর অধীনে দল সাজানো হয়েছে পরিকল্পনা মেনে। দলে একাধিক দাপুটে বিদেশি ও তরুণ ভারতীয় ফুটবলার যুক্ত হওয়ায় অনেকটাই ভারসাম্যপূর্ণ স্কোয়াড তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ফরোয়ার্ড লাইন থেকে মিডফিল্ড, প্রতিটি বিভাগেই নজর দিয়েছে ক্লাব ম্যানেজমেন্ট। তারই ফলশ্রুতিতে ডুরান্ড কাপের গ্রুপ পর্যায়ে একের পর এক জয় তুলে নিয়েছে লাল-হলুদ ব্রিগেড। সাউথ ইউনাইটেড, নামধারী এফসি ও ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের বিরুদ্ধে ম্যাচে ধারাবাহিকভাবে দাপট দেখিয়েছে তারা।
গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখা ইস্টবেঙ্গলের সামনে এবার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কলকাতা ডার্বি। প্রতিপক্ষ মোহনবাগানের মুখোমুখি হওয়া মানেই আলাদা আবেগ, আলাদা লড়াই। সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রসঙ্গে জানালেন ইস্টবেঙ্গলের মিডফিল্ডার সৌভিক চক্রবর্তী (Souvik Chakrabarti )। তাঁর সোজাসাপ্টা বক্তব্য, “মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ সবসময়ই হাডাহাড্ডি লড়াইহয়। কে আগে কী করেছে সেটা বড় কথা নয়। সেদিন যেই দল ভালো খেলবে, ম্যাচ তাদেরই হবে। তবে আমরা নিজেদের মতো করে প্রস্তুত হয়েছি।”
তবে ডার্বির একদিন আগে লাল-হলুদ শিবিরে এসেছে দুঃসংবাদও। বাবার পিতৃবিয়োগ কারণে দেশে ফিরে গিয়েছেন দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রশিদ। এই নিয়ে সৌভিক বলেন, “এটা দুঃখজনক একটা খবর। তবে রশিদের জন্য ডার্বিটা জিততে চাই।”
মাঠের পারফরম্যান্স ছাড়াও মানসিক দিক থেকেও প্রস্তুত ইস্টবেঙ্গল শিবির। অতীতের ব্যর্থতা ভুলে এবার নিজেদের প্রমাণ করার পালা। সৌভিক স্পষ্ট করে দেন, “এই বছর আমাদের লক্ষ্য পরিষ্কার। নতুনভাবে শুরু করা, পুরনো তিক্ততা ভুলে সামনে এগোনো।” যদিও বাস্তবতা হল, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরে অপরাজেয় মোহনবাগান। শেষ ১৮ ম্যাচে হারেনি তারা। এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সৌভিক বলেন, “ভালো দলের বিরুদ্ধে খেলাই তো বাড়তি অনুপ্রেরণা। আমরা নিজেদের সেরাটা দিয়ে ম্যাচ জেতার চেষ্টা করব।”
ডার্বি মানেই আলাদা উত্তেজনা, আলাদা প্রত্যাশা। তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এই ম্যাচ কি বদলার ম্যাচ? ২০২৩ সালে ডুরান্ড ফাইনালে হেরে যাওয়ার যন্ত্রণা কি ফিরে আসছে আবার? সৌভিকের জবাব পরিষ্কার, “না, ডার্বি সবসময় স্পেশাল। আমরা নতুন করে শুরু করছি। আগের কোনও জিনিসকে টেনে আনছি না। আমরা জিততে চাই, শুধুমাত্র এই ম্যাচের জন্য নয়, দলের জন্য, সমর্থকদের জন্য।”
আগামীকালের ম্যাচ কি শুধুই ফুটবল ম্যাচ, নাকি এর বাইরেও অনেক কিছু? সৌভিক একেবারে অন্তর থেকে বলেন, “প্রত্যেকটা ডার্বির আলাদা গুরুত্ব থাকে। কিন্তু এই ম্যাচটা আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে বিশেষ। আমি চাই, আমরা জিতি। এদিনের ম্যাচটা শুধুই একটা ম্যাচ নয়, এটা বাঙালির আবেগ। সেই আবেগকে সম্মান জানিয়ে মাঠে নামব আমরা।”
East Bengal footballer Souvik Chakrabarti said importance of Kolkata Derby against Mohun Bagan SG in Durand Cup 2025