ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের পরাজয়, প্রাক্তন প্রফেসরের নিশানায় কে?

সর্ব ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের (AIFF) চিফ রেফারিং অফিসার ট্রেভর কেটেল (Trevor Kettle) কলকাতা ডার্বি (Kolkata Derby) নিয়ে এক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন, যা আবারও আলোচনায় এনেছে…

Carles Cuadrat's 'Explosive' Social Media Comments

সর্ব ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের (AIFF) চিফ রেফারিং অফিসার ট্রেভর কেটেল (Trevor Kettle) কলকাতা ডার্বি (Kolkata Derby) নিয়ে এক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন, যা আবারও আলোচনায় এনেছে তার অতীত রেফারিং জীবনের অনেক কুখ্যাত ঘটনা। এবার সেই প্রসঙ্গে তাঁকে কটাক্ষ করলেন লাল-হলুদের (East Bengal) প্রাক্তন কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত (Carles Cuadrat) ।

গত শনিবার অনুষ্ঠিত কলকাতা ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) পিভি বিষ্ণুর মারা বল যখন মোহনবাগান বক্সের মধ্যে আপুইয়ার হাতে লাগে, ম্যাচ রেফারি হ্যান্ডবল না বলে জানিয়ে দেন। এই ঘটনা প্রসঙ্গে কেটেল মন্তব্য করেন যে এটি হ্যান্ডবল ছিলই না। এই সিদ্ধান্তের পর প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং ট্রেভর কেটেলের রেফারিং সিস্টেম নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘‘রেফারি যদি নিয়মিত ভুল করে, তাহলে আমাদের সিস্টেমে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে এবং সেই পরিবর্তনের দায়িত্বের মাথায় আছেন ট্রেভর কেটেল।’’ তবে এই মন্তব্য নতুন নয়, কারণ কেটেলের নাম শোনা গেলেই ফুটবল জগতে বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড় ওঠে।

   

ট্রেভর কেটেলের রেফারিং জীবনের শুরু ও উত্থান ছিল নজরকাড়া। তিনি ১৯৯৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লিগের সহকারী রেফারি ছিলেন। টটেনহাম হটস্পার বনাম ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের ফুটবল লিগ কাপ ফাইনাল ম্যাচ পরিচালনা করার মতো বড় দায়িত্বও তিনি পালন করেছেন। লিভারপুল ও আর্সেনালের কমিউনিটি শিল্ড ম্যাচও পরিচালনা করেন তিনি। তবে এসব সফলতার মাঝেও তার রেফারিং পদ্ধতির কারণে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বিশেষত, তার ২০ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি হয়ে ওঠেন এক বিতর্কিত রেফারি।

প্রথম থেকেই ট্রেভর কেটেলের রেফারিং ছিল তীব্রভাবে তর্কসাপেক্ষ। তার ক্যারিয়ারের শুরুতে মাত্র দশটি ম্যাচে সাতটি লাল কার্ড দেখানোর পরই তিনি আলোচনায় আসেন। এর পরবর্তী সময়ে, ২০০২-২০০৩ মরসুমে রেফারির ন্যাশনাল লিস্টে যুক্ত হওয়ার পর, আরও বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনার শিকার হন তিনি। ২৮টি ম্যাচে ১৩১টি হলুদ কার্ড এবং ১৩টি লাল কার্ড দেখানো ছিল তার রেফারিং জীবনকে আরও বিতর্কিত করে তোলে। তার এই সিদ্ধান্তগুলির কারণে দর্শক, খেলোয়াড় ও কোচদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ে। কেটেলের রেফারিং স্টাইল ছিল অত্যন্ত কঠোর এবং মাঝে মাঝেই তাকে অপ্রত্যাশিত ও অকারণ কার্ড দেখাতে দেখা যেত।

তার কুখ্যাতি আরও বাড়ে ২০১৬ সালে, যখন তিনি একটি অবিশ্বাস্য ভুল সিদ্ধান্ত নেন। অ্যাক্রিংটন স্ট্যানলি এবং এএফসি উইম্বলডনের ম্যাচে, একটি গোল বাতিল করে দেন তিনি, কারণ বিরতির বাঁশি বাজিয়ে তিনি গোলের বাঁশি বাজানো ভুলে গিয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্তটি ফুটবলপ্রেমী এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। এমন একটি ঘটনা যা খেলার ইতিহাসে কখনো দেখা যায়নি এবং ট্রেভর কেটেলের সিদ্ধান্ত নিয়ে তখন ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। অ্যাক্রিংটনের ম্যানেজার জন কোলম্যান এই ঘটনার পর বলেন, ‘‘আমার ৪৬ বছরের খেলোয়াড় ও ম্যানেজার জীবনে এমন কাণ্ড কখনো দেখিনি।’’

এই সমস্ত ঘটনার পর কেটেলকে নিয়ে ফুটবল মহলে আলোচনা চলতে থাকে। ২০ বছরের রেফারিং জীবনে কেটেল এতটাই বিতর্কিত হয়ে ওঠেন যে, তার অবসর নেয়ার পর ফুটবলপ্রেমীরা একযোগে আনন্দিত হন। অনেকেই মনে করেন, তার অবসর ভারতের ফুটবল রেফারিং সিস্টেমে একটি স্বস্তি এনে দিয়েছে।

কুয়াদ্রাতের মত অনুসারে, ট্রেভর কেটেল একটি সিস্টেমের মাথায় থাকলে রেফারিরা কখন সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন না। কুয়াদ্রাত বলেন, ‘‘কেটেলের অধীনে আমাদের রেফারিরা আরও বেশি ভুল করতে থাকবেন এবং এর ফলস্বরূপ ফুটবল খেলা অশ্রদ্ধিত হবে।’’ কেটেলের দুর্বল সিদ্ধান্তের কারণে ভারতের ফুটবল পরিবেশও ঝুঁকির মুখে পড়ছে বলে তার মত। রেফারি হিসেবে তার অভিজ্ঞতা অনেক হলেও, তার সিদ্ধান্তগুলি ফুটবল জগতে বিভ্রান্তি ও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।