২৪ জানুয়ারি কলকাতার (Kolkata) সল্টলেক স্টেডিয়ামে ইস্টবেঙ্গল এফসির (East Bengal FC) প্রতিপক্ষ ছিল কেরালা ব্লাস্টার্স (Kerala Blasters)। তিন ম্যাচে পরাজয়ের পর মশালব্রিগেডের ফুটবলাররা যে কোনও মূল্যে জয় কামনা করছিল। তারা সেই কামনা পূর্ণ করল ২-১ গোলের মাধ্যমে। এই জয়ের মাধ্যমে ইস্টবেঙ্গল কিছুটা হলেও সুপার সিক্সে ওঠার সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। যদিও লিগ টেবিলে ১১ নম্বরে অবস্থান করছে তারা। বছরে প্রথম জয়ের স্বাদ পেয়েই মরসুমের (ISL) বাকি ম্যাচ নিয়ে হুঙ্কার লাল-হলুদ কোচ (Coach) অস্কার ব্রুজোর (Oscar Bruzon)।
জয় ইস্টবেঙ্গল ❤️💛#JoyEastBengal #ISL #EBFCKBFC pic.twitter.com/PG62aiqAW8
— East Bengal FC (@eastbengal_fc) January 25, 2025
এদিন ম্যাচের প্রথমেই ২১ মিনিটের মাথায় গোল করেন মিডফিল্ডার পিভি বিষ্ণু। যা ইস্টবেঙ্গলকে ১-০ তে এগিয়ে দেয়। তার পরেই দ্বিতীয়ার্ধের ৭২ মিনিটে দলের ডিফেন্ডার হিজাজি মাহের দ্বিতীয় গোলটি করেন। ২-০ তে এগিয়ে যাওয়ার পর সমর্থকদের মনে হচ্ছিল তারা জয় নিশ্চিত করেছে। কিন্তু ৮৩ মিনিটে কেরলা ব্লাস্টার্সের দানিশ ফারুক এক গোল করে ব্যবধান ২-১ করেন। বাকি সময়ে যদিও কেরালা আরও আক্রমণ করেছে, তবে ইস্টবেঙ্গল তাদের দৃঢ় রক্ষণ এবং সঠিক পরিকল্পনা দিয়ে এই মূল্যবান জয় নিশ্চিত করে।
এই জয়ের পর সাংবাদিক সম্মেলনে ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজো দলের পারফরম্যান্স নিয়ে বেশ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “গত কয়েক সপ্তাহে আমরা কঠিন পরীক্ষার মধ্যে দিয়েছি। এফসি গোয়া, মোহনবাগান এবং মুম্বই সিটি এফসির মতো শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে আমরা ভালো লড়াই করেছি, কিন্তু পয়েন্ট টেবিলে কোনো কিছুই অর্জন করতে পারিনি। তাই আজকের ম্যাচটি ছিল প্রতিরোধের একটা পরীক্ষা, এবং ছেলেদের লড়াকু মানসিকতা প্রশংসনীয় ছিল।”
এছাড়া, ব্রুজো আরও যোগ করেন, “ম্যাচের প্রথম ১০ মিনিটে আমরা কিছুটা নড়বড়ে ছিলাম, তবে পরবর্তীতে দলের পারফরম্যান্স অনেক ভালো ছিল। কেরালা ব্লাস্টার্স শেষের দিকে অনেক শক্তিশালী আক্রমণ করেছে, তবে আমরা রক্ষণে দৃঢ় ছিলাম।” ব্রুজো বিশেষভাবে পিভি বিষ্ণুর পারফরম্যান্স নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন এবং তাকে জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার দাবিদার হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “বিষ্ণু আমাদের ক্লাবের সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন এবং পুরো আইএসএলের অন্যতম সেরা ফুটবলার।”
24 January – 𝐃𝐎𝐔𝐁𝐋𝐄 𝐃𝐄𝐋𝐈𝐆𝐇𝐓 for the মশালবাহিনী 🔥#JoyEastBengal #ISL #YouthLeague pic.twitter.com/plzqLgcgAi
— East Bengal FC (@eastbengal_fc) January 24, 2025
মাঝমাঠের আধিপত্যকে দলের জয় নিশ্চিত করার মূল চাবিকাঠি হিসেবে উল্লেখ করেন কোচ ব্রুজো। তিনি বিশেষভাবে নাওরেম মহেশ সিংহের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করে বলেন, “মাঝমাঠে আমাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মহেশ কেরালার বিপক্ষে দুর্দান্ত ছিল এবং তার দক্ষতা আমাদের আরও সুযোগ তৈরি করতে সাহায্য করেছে।”
ইস্টবেঙ্গলের সামনে এখন আরো চ্যালেঞ্জ রয়েছে, বিশেষ করে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের চোট এবং রক্ষণভাগের সমস্যা নিয়ে। কোচ ব্রুজো বলেন, “মরশুমের বেশিরভাগ সময় আমাদের সিদ্ধান্ত আমাদের পক্ষে যায়নি। তবে আমরা আশা করছি, শীঘ্রই সবকিছু ভারসাম্যপূর্ণ হবে। এই ম্যাচে আমরা চোট, রক্ষণভাগের সমস্যা এবং খেলার সিদ্ধান্তের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।”
ইস্টবেঙ্গলের আসন্ন ম্যাচ ৩১ জানুয়ারি মুম্বই সিটি এফসির বিপক্ষে। আসন্ন এই ম্যাচ যে কঠিন হতে চলেছে তা উল্লেখ করে কোচ ব্রুজো সতর্কতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “প্রভাত লাকরা, মহম্মদ রকিপ, সাউল ক্রেসপো এবং আনোয়ার আলির মতো খেলোয়াড়দের নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দল পয়েন্ট টেবলের নিচে থাকার যোগ্য নয়। এখনও ৭-৮টি ম্যাচ বাকি আছে এবং আমরা প্রমাণ করতে পারব যে ইস্টবেঙ্গল এফসি এই মরসুমে তলানিতে নয়, বরং মাঝামাঝি অবস্থানে থাকতে পারে।”
অস্কার ব্রুজোর এই মন্তব্য থেকে পরিষ্কার যে, দলের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব এবং আত্মবিশ্বাস রয়েছে। ইস্টবেঙ্গল অবশ্যই নিজেদের শীর্ষস্থান নিশ্চিত করার জন্য আরো কঠোর পরিশ্রম করবে এবং শীঘ্রই সুপার সিক্সে ওঠার দিকে নজর দেবে।
এই ম্যাচের জয়ের ফলে ইস্টবেঙ্গলের জন্য কিছুটা হলেও নতুন আশা সৃষ্টি হয়েছে। তাদের সমর্থকদের মাঝে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। যদিও লিগ টেবিলে এখনও তাদের অবস্থান অনেক পিছিয়ে, তবে এই ধরনের এক জয় তাদের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে। আসন্ন ম্যাচগুলোর জন্য তারা প্রস্তুত এবং এখনও তাদের সম্ভাবনা পুরোপুরি শেষ হয়নি।