আইএসএলের (ISL) চলতি মরসুমে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) যখন একের পর এক হারে জর্জরিত হয়ে উঠেছিল। তখন এক ভিন্ন দৃশ্য দেখা গেল কেরালার বিরুদ্ধে। এমনকি লিগের শীর্ষ প্রতিযোগীদের বিরুদ্ধে জয়ের সঙ্গে দলের পারফরম্যান্সও ছিল নজরকাড়া। ইস্টবেঙ্গলের কোচের মতে, এই ম্যাচটি ছিল মরসুমে দলের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর এক বড় মুহূর্ত, যেখানে তারা নিজেদের সেরাটা বের করে আনতে সক্ষম হয়েছে। এই ম্যাচ শেষেই দলের ফুটবলার পিভি বিষ্ণুর (PV Vishnu) ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যাখ্যা স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোর (Oscar Bruzon)।
দায়িত্ব হাত ছাড়া হচ্ছে কল্যাণের! অনাস্থা প্রস্তাব ২০ রাজ্যের
মধ্যমাঠে শক্তি :
অস্কারের মতে, এই জয় সম্ভব হয়েছে মূলত দলের মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারার কারণে। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “শেষ কয়েক সপ্তাহে আমরা অনেক ভুগেছি। ভালো খেলেও পয়েন্ট টেবিলের ক্ষেত্রে আমরা খালি হাতে ফিরেছি। তাই কেরালার বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল প্রতিরোধের পরীক্ষা। ছেলেদের লড়াকু মানসিকতা প্রশংসনীয় ছিল।”
মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ যে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা একাধিকবার উল্লেখ করেছেন অস্কার। বিশেষত, কেরালার মতো শক্তিশালী দলকে পরাজিত করতে গেলে মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি। এমনকি, ম্যাচের শেষ দিকে কেরালার আক্রমণ বিপদে ফেললেও, ইস্টবেঙ্গল একে ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছে। কোচের ভাষায়, “হয়ত প্রথম ১০ মিনিটে আমরা একটু নড়বড়ে ছিলাম এবং শেষ ১৫ মিনিটে কেরালা ব্লাস্টার্স তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে আক্রমণ করেছিল। কিন্তু সামগ্রিকভাবে, আমি মনে করি ছেলেরা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে।”
চেন্নাইয়ে নামার আগে দুঃসংবাদ ভারতের, চোটের কবলে গম্ভীরের ছাত্র
বিষ্ণুর পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট অস্কার :
কিন্তু এই ম্যাচের সবচেয়ে বড় আলোচিত বিষয় ছিল ইস্টবেঙ্গলের ফরোয়ার্ড বিষ্ণু। তার অসাধারণ পারফরম্যান্স ম্যাচের রূপ বদলে দিয়েছে। কোচ অস্কার এই পারফরম্যান্স দেখে খুবই তৃপ্ত। বিষ্ণু যে শুধু ইস্টবেঙ্গলের জন্য, বরং পুরো আইএসএলের অন্যতম সেরা ফুটবলার, তা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অস্কার। তিনি বলেন, “গত সপ্তাহে আমি জাতীয় দলের কোচের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছি। সিদ্ধান্ত তাঁর হাতে। তবে বিষ্ণু নিশ্চিতভাবেই জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার দাবিদার। ও শুধু আমাদের ক্লাবের নয়, পুরো আইএসএলে অন্যতম সেরা ফুটবলার। আমরা ওর পাশে থাকব।”
24 January – 𝐃𝐎𝐔𝐁𝐋𝐄 𝐃𝐄𝐋𝐈𝐆𝐇𝐓 for the মশালবাহিনী 🔥#JoyEastBengal #ISL #YouthLeague pic.twitter.com/plzqLgcgAi
— East Bengal FC (@eastbengal_fc) January 24, 2025
প্লে অফের লড়াই :
বেঙ্গালুরু ম্যাচে মাঠে ফিরতে পারেন এই তারকা, জানুন
এখন ইস্টবেঙ্গল লিগ টেবিলে ১১ নম্বরে অবস্থান করছে এবং প্লে অফে জায়গা পাওয়ার আশা তাদের ভেতরে এখনও জীবিত। যদিও কোচ অস্কার জানাচ্ছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই লক্ষ্যটি সহজ হবে না। দলের মধ্যে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের চোট রয়েছে, যেমন প্রভাত লাকরা, মহম্মদ রাকিপ, সল ক্রেসপো এবং আনোয়ার আলি। তাদের অনুপস্থিতি দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে অস্কার এই সংকটের মধ্যেও আশাবাদী।
তিনি বলেন, “ওরা পরের ম্যাচে থাকতে পারবে কিনা, জানি না। তবে আমি বারবার বলি, আমাদের দল পয়েন্ট টেবলের এত নিচে থাকার যোগ্য নয়। এখনও ৭টি ম্যাচ বাকি আছে। আমরা প্রমাণ করতে পারি যে, ইস্টবেঙ্গল এবছর টেবিলের তলানিতে নয়, বরং মাঝামাঝি অবস্থানে থাকতে পারে।”
ইস্টবেঙ্গলের ভবিষ্যত :
হোঁচট কাটিয়ে বছরের প্রথম জয় মশালবাহিনীর
যদিও কোচ প্লে অফে স্থান পাওয়ার ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলেননি, তবে তার কথায় এক ধরনের আত্মবিশ্বাস ও প্রত্যয় ফুটে উঠেছে। একে অপরকে সমর্থন জানিয়ে, দলের মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছে, তা বড় ধরনের সাফল্যের ইঙ্গিত। ইস্টবেঙ্গলের প্রতি দলের লড়াইয়ের মানসিকতা, বিশেষ করে কোচ অস্কারের অবিচল মনোভাব, তাদের সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত করে।
ইস্টবেঙ্গলের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যেখানে নিজেদের নতুনভাবে চিহ্নিত করার সুযোগ রয়েছে। দলের মাঝে মনোবল জোগানোর জন্য অস্কারের মতো অভিজ্ঞ কোচের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। দলের খেলোয়াড়রা জানেন, এখন আর কোনো ভুল করা যাবে না। তাদের সামনে এখনও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে শৃঙ্খলা এবং ধারাবাহিকতার সাথে যদি তারা এগিয়ে যেতে পারে। তাহলে এই মরসুমে নতুন ইতিহাস রচনা করতে পারে।