বেশ কিছুদিন ধরেই জল্পনা চলছিল তাঁকে ঘিরে। গত বছরের শুরুতে দলকে কালিঙ্গা সুপার কাপ জিতিয়ে আশা দেখালেও ডুরান্ড কাপ এবং আইএসএলের মরশুমের শুরুতে জঘন্যতম পারফরম্যান্স করেছে তাঁর দল। এছাড়াও লাল-হলুদের হয়ে দলের প্রধান খেলোয়াড়রা আশানুরুপ পারফরম্যান্স করতে পারেননি। এমনকি দলের অভ্যন্তরীন সম্পর্কও নাকি নষ্ট হয়েছে বলে জানান হয়েছে ক্লাব কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। তাই আজ সকালে ক্লাব মিটিংয়ের পরে ব্যর্থতার সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে ইস্টবেঙ্গলের প্রধান কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন কার্লোস কুয়াদ্রাত (Carlos kuadrat)। ফলত চলতি আইএসএলে লাল -হলুদ শিবিরের সাথে তাঁকে আর যুক্ত থাকতে দেখা যাবে না । আজ সকালে এই ঘটনা ঘটার সঙ্গেই অনেকে বর্তমান ম্যান ইউনাইটেড কোচ এরিক টেন হ্যাগের সাথে তাঁর সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন। যদিও বর্তমানে কোচের দায়িত্বে এসেছেন বিনো জর্জ।
গতবছর ডুরান্ডে সাফল্য না পেলেও তাঁর কোচিংয়ে দলের পারফরম্যান্স মন জয় করেছিল সকলের। তবে ডুরান্ডে সেভাবে সাফল্য না পেলেও কালিঙ্গা সুপার কাপে ওড়িশাকে হারিয়ে খেতাব জিতে নেয় ইস্টবেঙ্গল। আর এই জয়ে কুয়াদ্রাতের মাস্টারস্ট্রোক ছিল দেখার মত। দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সাঁইত্রিশ বয়সী স্ট্রাইকার শেল্টনকে নামিয়ে বিপক্ষকে চমকে দেন তিনি। আর তাঁর এই অপ্রত্যাশিত বদলে একপ্রকার খেই হারিয়ে ফেলে শেষপর্যন্ত পরাস্ত হয় ওড়িশা এফসি। প্রায় বারো বছর পর দলকে জাতীয় স্তরের কোনও ট্রফি জিতিয়ে সমর্থক এবং ক্লাব কর্তৃপক্ষের অন্যতম ‘প্রিয়পাত্র’ হয়ে ওঠেন এই স্প্যানিশ ফুটবল ম্যানেজার। তবে প্রদীপের আলো দেখলেও তাঁর তলায় অন্ধকারের গভীরতা হয়তো অনুধাবন করতে পারেননি কুয়াদ্রাত। গতবছরের মতো এবছরও ডুরান্ড কাপে নেমে পারফরম্যান্স ভালো করতে পারেনি লাল-হলুদ শিবির। বিশেষ করে দলের আক্রমণ বিভাগে ধরা পড়ছিল অনভিজ্ঞতার অভাব।
#EastBengalFC regretfully announces the departure of Carles Cuadrat as Head Coach following his resignation.
Coach Carles led us to the Kalinga Super Cup title earlier this year and a runners-up finish in last year’s Durand Cup. We thank him for his contributions and wish him… pic.twitter.com/pxfln0sIlK
— East Bengal FC (@eastbengal_fc) September 30, 2024
ডুরান্ডের পর দলের মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলে গতবারের আইএসএলের সেরা স্ট্রাইকার ডিমিট্রিয়স ডিয়ামেনতাকসকে দলে নিয়ে আসেন লাল হলুদ শিবিরের কর্মকর্তারা। আর এখান থেকেই শুরু হয় দলের সামগ্ৰিক খারাপ পারফরম্যান্সের সূত্রপাত। গত আইএসএলের সেরা স্ট্রাইকারকে দলের মধ্যে ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেননি কুয়াদ্রাত। কারণ সেল্টনকে আগে রেখে ক্রেস্পোকে একটু পিছিয়ে কখনও উইং বা কখনও আট্যাকিং মিডফিল্ডে খেলাতেন কুয়াদ্রাত। গ্রিক স্ট্রাইকার ডিমি আসায় এই ছকের পরিবর্তন ঘটাতে বাধ্য হন স্প্যানিশ ম্যানেজার। এছাড়াও গোয়া ম্যাচে স্পষ্ট ধরা পড়েছিল দলের তারকাদের মধ্যে কমিউনিকেশনের অভাব। এ মরশুমে এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগের টায়ার টুয়ের প্রিলিমিনারী রাউন্ডে আলটিন আসিয়ের কাছে ঘরের মাঠে পরাজিত হওয়ার পর ইন্ডিয়ান সুপার লিগের প্রথম তিনটি ম্যাচে টানা পরাজয়। দুইটি অ্যাওয়ে ম্যাচের পাশাপাশি ঘরের মাঠেও নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে লাল হলুদ শিবিরকে।
অভিজ্ঞতা নয়,হারের পরও তেকাঠির নিচে তারুণ্যকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন কুয়াদ্রাত
এছাড়াও ঘরের মাঠে বিগত শুক্রবার মরশুমের সবথেকে জঘন্য পারফরম্যান্স করে ইস্টবেঙ্গল। এমনকি ম্যাচের প্রথমার্ধের পর থেকেই ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে শুরু করে সমর্থকদের। ম্যাচ শেষে হারের পর গ্যালারি থেকে উঠেছিল ” গো ব্যাক কুয়াদ্রাত” স্লোগান। তাই মিলিয়ে সমগ্র বিষয়টি নজরে আসে ক্লাব কর্তৃপক্ষের। ক্লাবের এই পতনের ফলে বেজায় চটেছেন তাঁরাও। শেষমেশ সাফল্যের ছোট্ট অবদান রেখেই আজ বেরিয়ে যেতে হল কুয়াদ্রাতকে (Carlos kuadrat)।
আজ সকালে কুয়াদ্রাত ক্লাব ছাড়ার পরেই অনেকেই এই ঘটনার সাথে মিল খুঁজে পেয়েছেন বর্তমানে ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেড দলের অবস্থার। রেড ডেভিলসের হয়ে ম্যানেজার এরিক টেন হাগ আসার পরই দ্রুত অবনতি শুরু হয় রেড ডেভিলসদের। লাল জার্সির হয়ে দলের খেলোয়াড়দের সাথে একইরকম সখ্যতার অভাবে দলের মধ্যে কোনো খেলোয়াড়ি মনোভাব তৈরী করতে পারেননি তিনি। অযথা বসিয়ে রেখেছিলেন দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে। তবে রোনাল্ডো দল ছাড়লেও দলের হয়ে এ মরশুমে একটাও ট্রফি জয় করতে ব্যাথ হয়েছেন টেন হাগ। কুয়াদ্রাতের (Carlos kuadrat) অবস্থাও প্রায় একই রকম হল। তবে কুয়াদ্রাত সরলেও টেন হাগকে এখনও ধরে রেখেছে ম্যান ইউনাইটেড শিবির।