East Bengal Club
Sports desk: হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সকলের আলাদা আলাদা উপাসনা স্থান থাকে। ফুটবলের প্রতিটি ক্লাব প্রতিষ্ঠান হল এক একটি উপাসনা স্থান। এই উপাসনার স্থান ফুটবল ক্লাব৷ প্রতিষ্ঠান সকলকে একত্রিত করে। এখানে কোনো ধর্মের বিভাজন নেই। সবার একটাই লক্ষ্য “মায়ের সম্মান রক্ষা করা”। এমন আবহে রাষ্ট্রসংঘ প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর আন্তজার্তিক ফুটবল দিবস পালন করে থাকে লক্ষ্য একটাই, জীবনের একটি অবলম্বন এবং সুন্দর খেলা উদযাপনের কামনায় বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ ফুটবলকে সম্মান জানাতে এই দিবস পালন করে থাকে।
কিন্তু ফুটবল খেলার মাঠে “বিভাজনের রাজনীতির” অনুপ্রবেশ মহান এই খেলার গরিমাকে কলুষিত করার চেষ্টা করেও মুখ থুবড়ে পড়ে প্রতিবাদের পথে হেঁটে। বিশেষত ব্রিটিশ শাসিত ভারতে বাংলা, বাঙালি এবং ফুটবল যখন মুক্তি আন্দোলনের বহ্নিশিখা প্রজ্জ্বলিত করে তুলছে, ওই সময়ে ফুটবল খেলার বল গড়ানোর মাঠে বিভেদের কাঁটা বিছিয়ে দেওয়া হয় সুচতুর কৌশলে। প্রথমবার কলকাতা ময়দানে ব্রিটিশ ভারতে প্রতিবাদে মশাল হাতে নিয়ে প্রতিরোধের পথে হাটে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব প্রতিষ্ঠান শিরদাঁড়া সোজা রেখে।
চল্লিশের দশকে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের খেলোয়াড় আব্দুল কাদের বক্স এর এই কথাগুলো আজও প্রাসঙ্গিক।শুধু প্রতিষ্ঠান কেনো, পৃথিবীর সমস্ত মাতৃভূমির সম্মান রক্ষার্থে এই চিন্তাধারা যদি কার্যক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়, তাহলে হয়তো পৃথিবী থেকে এই জাতি বিদ্বেষ, এই সাম্প্রদায়িক হানাহানি দূর হবে, নয়তো নয়।
সালটা ১৯৪০, বাংলা জুড়ে তখন সাম্প্রদায়িক হানাহানি চলছে। মুসলিম লীগের সাথে জড়িত কয়েকজন মহামেডান ক্লাবের কর্মকর্তা অভিযোগের ভিত্তিতে ব্রিটিশ শাসিত আই. এফ. এ. কলকাতা লীগে মহামেডান ক্লাবের খেলা স্থগিত করে দিয়েছিল। তার আগের বছরই ব্রিটিশ শাসিত আই. এফ. এ.’র অন্যায়ের প্রতিবাদে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব, মহামেডান এবং কালীঘাট জোট বেঁধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। আই. এফ. এ. তাদের সাসপেন্ড করলে ওই ত্রয়ী ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠান দমে না গিয়ে বি. এফ. এ. নামে আলাদা সংস্থা তৈরি করে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলো ব্রিটিশ শাসিত আই. এফ. এ’কে।
অবশেষে আই. এফ. এ. ক্ষমা চেয়ে তাদের দোষ স্বীকার করতে বাধ্য হয়৷ ১৯৪০ এর এই হঠকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যখন কোনো ক্লাব সামান্য প্রতিবাদটুকু দেখানোর সাহস পায়নি, ওই সময়ে দাঁড়িয়ে গর্জে উঠেছিলো ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। ক্লাব প্রেসিডেন্ট নলিনী রঞ্জন সরকার দীপ্ত কন্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, “খেলার মাঠে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ তৈরি করার অপচেষ্টা তারা মানবেন না, মহামেডান স্পোর্টিং’কে খেলায় নিতে হবেই, আর যতক্ষণ না সেটা হচ্ছে সর্বাত্মক তারা আন্দোলন গড়ে তুলবেন।”
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের লাগাতার প্রতিবাদে পিছু শেষ অবধি পিছু হঠল আই. এফ. এ। লিগে সব দলের যখন প্রায় ৮ টা থেকে ১০টি করে খেলা হয়ে গিয়েছে, তখন তারা বাধ্য হল মহামেডান স্পোর্টিং’কে লিগে অন্তর্ভুক্তি করতে। জয় হলো ফুটবলের, জয় হলো মনুষ্যত্বের, জয় হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির। মুখ থুবড়ে পড়লো বিভাজনের ঘৃণ্য চক্রান্ত। দেরিতে শুরু করেও সমস্ত খেলা খেলে ওই বছর মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লীগ চ্যাম্পিয়নের শিরোপা অর্জন করে।
ফুটবল মাঠ হোক বা দেশের ভূমি – সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিই পারে সব কিছুকে রক্ষা করতে, সমস্ত বাঁধা-বিঘ্ন দূর করে বিজয়ীর শিরোপা ছিনিয়ে আনতে৷