বর্তমানে ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে রেফারির ভূমিকা নিয়ে ক্রমশ বিতর্কের (Controversial Refereeing) সৃষ্টি হচ্ছে। গত কয়েক বছরে একাধিকবার ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্লাবগুলি। ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL) হোক কিংবা আইলিগ, এই দুটি প্রতিযোগিতায় একাধিকবার রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মূলত যেসব সিদ্ধান্তে একটি দল স্পষ্টতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেইসব ক্ষেত্রেই ফেডারেশনের ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ দানা বাঁধে। আর এই কারণেই সাম্প্রতিক কালে “ভিএআর” (ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি) প্রযুক্তি ব্যবহারের দাবি উঠলেও বাস্তবে তা এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি।
গত কয়েক মরসুমে দেশের জনপ্রিয় তিন ক্লাব ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, ও মহামেডান স্পোর্টিং একাধিকবার রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছে। বিশেষ করে মরসুমের দ্বিতীয় ডার্বি ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল দলকেই একটি বিতর্কিত পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত হতে হয়। সেই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের গ্রীক ফরোয়ার্ড দিমিত্রিওস ডায়মান্তাকসকে মহামেডানের এক ডিফেন্ডার বক্সের ভিতর স্পষ্টভাবে ফাউল করে ফেলে দেন। স্বাভাবিকভাবেই ইস্টবেঙ্গল পেনাল্টির দাবি জানালেও, রেফারি হরিশ কুন্ডু তা নাকচ করে দেন। ফলে ফ্যানদের মধ্যেও প্রবল ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সমর্থকরা মনে করেন, এই রকম গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে রেফারির একটি ভুল সিদ্ধান্ত ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণে বড় প্রভাব ফেলে।
এই পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কার্যকরী সমিতির বৈঠকে রেফারিং ইস্যু নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, খুব শীঘ্রই অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ)-এর সভাপতির সঙ্গে রেফারির সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য আবেদন জানানো হবে। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের এক আধিকারিক জানান, “রেফারির ভুল সিদ্ধান্ত আমাদের ক্লাবকে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর সুরাহা হওয়া অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে বড় ম্যাচগুলোতে আমরা আর এইরকম বিতর্কিত সিদ্ধান্ত চাই না। আমরা চাই সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিক।”
এছাড়া, বৈঠকে যুব ফুটবলারদের উন্নতি এবং পরিকাঠামোগত উন্নতির উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্মকর্তারা মনে করছেন, দলের মানসিক দৃঢ়তা বাড়াতে বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন। তাই যুব ফুটবলারদের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি সিনিয়র ও জুনিয়র দুই দলের ফুটবলারদের মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এদিকে, ভারতীয় ফুটবলে ভিএআর প্রযুক্তি নিয়ে বিতর্ক চলছে। বিশ্বের বহু দেশে আজ ভিএআর চালু হয়েছে এবং তা রেফারির ভুল সংশোধনের ক্ষেত্রে কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞই মনে করছেন, ভারতীয় ফুটবলে ভিএআর চালু হলে ম্যাচের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত অনেকাংশে কমে যাবে এবং খেলোয়াড়, ক্লাব ও সমর্থকদের মধ্যে এই ধরনের ক্ষোভও প্রশমিত হবে।
ফেডারেশনের কাছে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে জানাতে চায় ইস্টবেঙ্গল। ক্লাবের কর্মকর্তাদের মতে, “রেফারির ভুল সিদ্ধান্ত বারবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও, মাঠের মধ্যে খেলোয়াড়রা প্রায়শই মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়। তাই আমরা চাই, এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে রেফারিং নিয়ে ন্যায্য ব্যবস্থা গ্রহণ হোক।”
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্মকর্তারা আরও জানান, রেফারির এমন সব বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা না নিলে দলগুলির প্রতি সুবিচার হবে না এবং ভারতীয় ফুটবলের মানও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এক্ষেত্রে ফেডারেশনের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের এই পদক্ষেপ কি আদৌ কিছু ফল বয়ে আনবে? ফুটবল বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সমাধানের জন্য ফেডারেশনকে অবশ্যই রেফারির ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে এবং ভিএআর চালুর মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে নজর দিতে হবে।