স্মরজিৎ জানা। দুর্বার মহিলা সমণ্বয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা। সোনাগাছির যৌনকর্মীদের প্রাণপুরুষ। যৌনকর্মীদের সুস্থ জীবনে ফেরানোর লড়াইয়ে তার প্রতিষ্ঠিত এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অবদান বহুবছর আগেই আন্তর্জাতিক হয়ে গিয়েছে।
যৌনকর্মীদের ছেলেমেয়েদেরও সুস্থ জীবন উপহার দেওয়ার উদ্যোগে দুর্বার মহিলা সমণ্বয় কমিটির আর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস দুর্বার স্পোর্টস অ্যাকাডেমি। দক্ষিণ ২৪ পরগণার বারুইপুরের কাছে রামনগরে ২০১১-য় যাত্রা শুরু হয়েছিল দুর্বার স্পোর্টস অ্যাকাডেমির। যদিও অ্যাকাডেমি আবাসিক হয়েছিল তার চার বছর পর, ২০১৫-য়। বর্তমানে এই ফুটবল স্কুলে ৫০টি ছাত্র। যাদের বয়স শুরু ১২ থেকে অনূর্ধ্ব-১৬। ৫০ জনের মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি যৌনকর্মীর ছেলে। এদের সঙ্গে রয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা ছেলেরা। সুন্দরবন, জঙ্গলমহল, আমলাশোলের মত জায়গা থেকেও অনেক ছেলে দুর্বার স্পোর্টস অ্যাকাডেমির স্কুলের ছাত্র। এর পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে ২৫ জন মেয়েকে নিয়ে মহিলা ফুটবল দল। লক্ষ্য আগামী মরশুমে আইএফএ পরিচালিত মহিলা ফুটবল লিগে খেলা।
দুর্বার নিয়মিত অনূর্ধ্ব-১৩ আই লিগে অংশ নেয়। ২০১৬-১৭ য় দুর্বারের অনূর্ধ্ব-১৬-র ছেলেরা ডেনমার্কে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ডানা কাপের সেমিফাইনালে উঠেছিল। করোনা মহামারীর আগে শেষবার হওয়া ২০১৯-এর অনূর্ধ্ব-১৩ ও অনূর্ধ্ব-১৫ আই লিগের আঞ্চলিক লিগে দুর্বার স্পোর্টস অ্যাকাডেমি রানার্স হয়েছিল। দু’বছর পর আবার বয়সভিত্তিক আই লিগ শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু ফেডারেশনের নির্বাসনে এই লিগ হয়তো পিছিয়ে যাবে বা হবে না। কিন্ত দুর্বারের ট্রেনিং চলছে।
স্মরজিৎ জানার প্রয়াণের পর এখন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন প্রতীম রায়। সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন কোয়েস-ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন সিইও সঞ্জিত সেন। তারপরেও অ্যাকাডেমিতে তৈরি হয়েছে। ফুটবলারদের জন্য সংস্থার সারাবছরের খরচ আনুমানিক ৬ লক্ষ টাকা। অ্যাকাডেমির ফুটবল কোচ বিশ্বজিৎ মজুমদার এই প্রসঙ্গে বললেন, “আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে দুর্বার স্পোর্টস অ্যাকাডেমির নামে নিজেদের একটি ক্লাব তৈরি করা। সেই ক্লাব আইএফএ-র পঞ্চম বা চতুর্থ ডিভিশন থেকে খেলবে। ২০১৬-১৭ থেকে আমাদের অনেক ছেলে কলকাতা লিগের তৃতীয় এবং দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলছে। একটি তৃতীয় ডিভিশনের ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় ডিভিশন উঠতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও নিয়েছিল। তাতে আমাদের ছেলেদের নাম হয়নি। নিজেদের ক্লাব খেললে নামও আমাদের হবে। কিন্তু নিজেদের ক্লাব তৈরি করে কলকাতা লিগে খেলতে হলে স্পনসরের প্রয়োজন। আর্থিক সংকটের জন্য সেটা পারা যাছে না।” অ্যাকাডেমির ছেলেদের দৈনিক টিফিন, কিট, জার্সি দিতেও মাঝে মাঝে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও রোটারি ক্লাব সম্প্রতি এগিয়ে এসেছে। ফুটবলারদের কিট দিচ্ছে তারা।
কিন্তু স্মরজিৎ জানার অভাব বার বার অনুভূত হচ্ছে বর্তমানের কর্তাদের। বিশ্বজিৎ মজুমদারের কথায়, “জানা স্যারের অভাব ভীষণভাবে বোধ করছি আমরা। তবে ওনার তৈরি করা কোর-দল আপ্রাণ চেষ্টা করছে আর্থিক অনুদান জোগাড় করার। দেখা যাক।”