স্টিফেনের উচিত ডার্বির জন্য কোনও প্রাক্তনের পরামর্শ নেওয়াঃ ডগলাস

বাসকর, চিমা ওকোরি থেকে বর্তমানের লিয়ান্দ্রো বা পোগবা বা অ্যালেক্স। গত ৪২ বছরে কলকাতা এবং ভারতীয় ফুটবলে প্রচুর বিদেশি ফুটবলার খেলে গিয়েছেন। তার মধ্যেই তিনি…

বাসকর, চিমা ওকোরি থেকে বর্তমানের লিয়ান্দ্রো বা পোগবা বা অ্যালেক্স। গত ৪২ বছরে কলকাতা এবং ভারতীয় ফুটবলে প্রচুর বিদেশি ফুটবলার খেলে গিয়েছেন। তার মধ্যেই তিনি কিন্ত উজ্জ্বল তার ঈর্ষণীয় পরিসংখ্যানের জন্য। ভারতীয় ফুটবলে ১২ বছর খেলে তার ঝুলিতে ট্রফির সংখ্যা ১৩টি! চিমা আর হোসে র্যাখমিরেজ ব্যারেটো ছাড়া ভারতে খেলে যাওয়া আর কোনও বিদেশির এই পরিসংখ্যান আছে কি না সন্দেহ। এখানেই শেষ নয়। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের কলকাতা ডার্বি ম্যাচ তিনি ১২ বছরে কখনও হারেননি! দুই প্রধানের কোনও দলের জার্সিতেই নয়!

এই কীর্তির অধিকারী একমাত্র তিনি, ডগলাস সিলভা। রবিবার ডুরান্ড কাপে এই মরশুমের প্রথম কলকাতা ডার্বি। সেই ম্যাচের টিকিট নিয়ে ইতিমধ্যে হাহাকার সমর্থকদের মধ্যে। ১৫ হাজার ৪২০ কিলোমিটার দূরে ব্রাজিলের সাও পাওলো। শুক্রবার রাতে তাকে ফোন করে ডার্বি ম্যাচ নিয়ে কথা বলার সময় মনে হল সেখানে বসেও ৪৮ বছরের ব্রাজিলিয়ান সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার চোখ বুঁজে দেখতে পাচ্ছেন ডার্বি-ম্যাচের উন্মাদনার ছবি! এক নিঃশ্বাসে তার স্মৃতিচারণ, “দু’দুবার ডুরান্ড কাপে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে জিতেছিলাম। একটা ছিল ফাইনাল। চন্দন দাস জয়ের গোলটা করেছিল শেষ মুহূর্তে।”

রবিবার আবার সেই ডার্বি। ম্যাচ নিয়ে উন্মাদনা প্রায় সাতের দশকের মত। কারণ আছে। প্রায় তিন বছর পর সমর্থকদের উপস্থিতিতে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ডার্বি ম্যাচ হচ্ছে। ডগলাস প্রথমে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিলেন, ডার্বি ম্যাচের ফলাফল আগে থেকে বলা যায় না। সবসময় এই ম্যাচ ৫০-৫০। তারপরও দু’দলের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলার সময় ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডারের চাঁচাছোলা মন্তব্য, “স্টিফেন কনস্ট্যানটাইনের উচিত ছিল বড় ম্যাচের দু’দিন বা একদিন আগে ইস্টবেঙ্গলের দু’-একজন প্রাক্তন তারকাকে ক্লাবে ডাকা। এরকম তারকাদের ডাকা উচিত ছিল যাদের একাধিক ডার্বি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। কারণ, এই ম্যাচ প্রচণ্ড মানসিক চাপের ম্যাচ। যে ফুটবলার পারবে ৬০ হাজার দর্শকের গর্জন সামলে নিজের সেরাটা দিতে, সে-ই সফল হবে। স্টিফেন একা কি পারবে ফুটবলারদের মোটিভেট করতে? এই চর্চাটা ব্রাজিলে, ইউরোপে আমি খুব দেখেছি। যে কোনও বড় ম্যাচের আগের দিন বা তার আগের দিন দলের প্র্যাক্টিসে আসেন সেই ক্লাবেরই প্রাক্তন কোনও তারকা। কোচের সঙ্গে তিনি আলোচনা করেন, তাকে পরামর্শও দেন। কারও কোনও ইগো নেই। ভারতে এই চর্চা খুব একটা দেখিনি আমি।”

ডগলাসের বিশ্লেষণে, “মোহনবাগানের প্রস্তুতি ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে কিন্তু ভাল। এএফসি কাপের আঞ্চলিক পর্বে ওরা ভাল জায়গায় রয়েছে। ভারতীয় ফুটবলারও গত মরশুমের তুলনায় খুব বদলায়নি। তাই ওদের খেলায় বোঝাপড়া ইস্টবেঙ্গলের তুলনায় উন্নত হবে বলেই মনে হয়। এমনকী রয় কৃষ্ণের না থাকাটাও খুব একটা বোধ হবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ গত মরশুম থেকে ওদের কোচ হুয়ান ফেরান্দো কিন্তু দলগত ফুটবলটাকেই ফুটবলারদের খেলায় রপ্ত করে দিয়েছেন। তাই এখন মোহনবাগান ম্যাচে যে কেউ গোল করতে পারে। তুলনামূলকভাবে, ইস্টবেঙ্গলের প্রস্তুতি কিন্তু এখনও দানা বাঁধেনি। ডুরান্ডেই দেখলাম স্টিফেনকে দলগঠন নিয়ে পরীক্ষা করতে।

তার মানে এখনও প্রথম ১১ তৈরি হয়নি। দ্বিতীয়ত, ডার্বি ম্যাচ খেলার যে মানসিক চাপ সেটা কিন্তু মূলত ভারতীয় ফুটবলারদের ওপর বেশি পড়ে। ভারতীয় ফুটবলারদের পারফরম্যান্সই এই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেয়। ইস্টবেঙ্গলে আসা ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে অধিকাংশই নতুন, এই মরশুমে প্রথম এসেছে। তারা কীভাবে অনুপ্রাণিত হবে ডার্বি ম্যাচের জন্য জানি না। ইস্টবেঙ্গলে আসা এই মরশুমের বিদেশিরা খারাপ নয়। কিন্তু আসল হচ্ছে ভারতীয় ফুটবলারদের বোঝাপড়া। সেটা অল্পদিনের অনুশীলনে কতটা তৈরি হবে জানি না।”