আইপিএল ২০২৬–এর (IPL 2026) আগে ট্রান্সফার মার্কেট জমে উঠেছে। আর সেই উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দিল শুক্রবারের বড় ঘোষণা—শার্দুল ঠাকুরকে লখনউ সুপার জায়ান্টস (LSG) থেকে ট্রেড করে নিয়ে নিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (MI)। ভারতীয় প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। বহুদিন ধরেই দলের বোলিং ইউনিট শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, আর সেই পরিকল্পনায় শার্দুলের নাম ছিল প্রথম সারিতে। অবশেষে সরকারি ঘোষণা এল, আর মুহূর্তেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ল ক্রিকেটমহলে।
শার্দুল ঠাকুর ভারতীয় ক্রিকেটে এখন বহু অভিজ্ঞ এক নাম। দেশের হয়ে টেস্ট, ওডিআই এবং টি-২০—তিন ফরম্যাটেই নিজের দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা, ম্যাচের গতি বদলে দেওয়া স্পেল এবং ব্যাট হাতে লোয়ার-মিডল অর্ডারে মূল্যবান রান—এই তিন গুণ মিলে শার্দুলকে বলা হয় ‘Lord Shardul’। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মতো বড় এবং ঐতিহ্যবাহী ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছে এমন বহুমুখী একজন ভারতীয় পেসার নিঃসন্দেহে বড় সম্পদ।
এই ট্রেড কেন এত তাৎপর্যপূর্ণ, তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, লখনউ সুপার জায়ান্টস গত কয়েক মৌসুমে শার্দুলকে নিয়মিতভাবে খেলানোর সুযোগ বেশি দেয়নি। দলের ব্যাটিং-বোলিং কম্বিনেশন অনেক সময়ই শার্দুলকে প্রথম একাদশের বাইরে রেখেছিল। ফলে নতুন দলে এসে শার্দুলের নিজের জন্যও নতুন করে উঠে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স গত বছর তাদের ডেথ ওভার বোলিং এবং অল-রাউন্ডার বিভাগের ঘাটতি নিয়ে সমস্যায় ভুগেছিল। জোফ্রা আর্চারকে হারানোর পর সেই ঘাটতি আরও বাড়ে। ঠিক সেই জায়গাটিই শার্দুল ঠাকুর নিখুঁতভাবে পূরণ করতে পারেন।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলতে নামার মধ্যে বিশেষ আবেগও রয়েছে। কারণ শার্দুল মহারাষ্ট্রের ছেলে এবং মুম্বইয়ের ক্রিকেট সারকেলে তাঁর উত্থান হয়েছে। প্রথমবার নয়—আগে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে অসাধারণ সাফল্য পাওয়ার পর বহুবার শোনা গিয়েছিল মুম্বই তাঁকে দলে নিতে চায়। তবে এবার LSG–র সঙ্গে আলোচনার পর সেই সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ নিল। MI ফ্র্যাঞ্চাইজি সূত্রের খবর, শার্দুলকে ঘিরে দলের ভবিষ্যৎ বোলিং কোর তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষ করে ভারতীয় পেসারদের মধ্যে অভিজ্ঞতা ও ম্যাচ জয়ের মানসিকতা—দুটোই শার্দুলের মধ্যে রয়েছে।
অনেকেই প্রশ্ন তুলছিলেন—মুম্বই ইন্ডিয়ান্স কেন হঠাৎ শার্দুলকে ট্রেড করল? তার উত্তর পাওয়া যাচ্ছে দলগত কৌশলে। মুম্বইয়ের বর্তমান বোলিং শক্তি তরুণ পেসারদের নিয়ে গঠিত—আকাশ মধওয়াল, অর্জুন তেন্ডুলকর, জেসন বেহরেনডর্ফ বা অন্যান্য বিদেশি বিকল্প। কিন্তু তাদের অভিজ্ঞতা এখনো সীমিত। হার্দিক পান্ডিয়া আবার পুরোপুরি ফিট হলে মিডিল ওভার বোল করতে পারেন, কিন্তু দল এমন একজনকে চেয়েছিল যে নতুন বল, মিডিল ওভার এবং ডেথ—তিনটাই সামলাতে পারবে। শার্দুল সেই চাহিদার জন্য আদর্শ।
🚨 NEWS 🚨
Shardul Thakur has been traded to @mipaltan from @LucknowIPL.
More Details 👉 https://t.co/drd5BdO3fS#TATAIPL | @imShard pic.twitter.com/fG7QcIP07U
— IndianPremierLeague (@IPL) November 13, 2025
LSG কেন তাঁকে ছাড়ল? দলের ঘনিষ্ঠ সূত্র মতে, লখনউ সুপার জায়ান্টস এবার তুলনামূলকভাবে তরুণ বোলারদের ওপর বেশি ভরসা করতে চাইছে এবং তাদের বিদেশি পেসারদের কেন্দ্রে রেখে নতুন ব্যালান্স গড়ছে। ফলে শার্দুলকে ট্রেড করে অর্থনৈতিক জায়গা এবং স্কোয়াড স্পেস পাওয়া গেছে, যা তারা নিলামে নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজে লাগাতে পারবে।
শার্দুলকে পেয়ে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়ার কৌশলেও নতুন মাত্রা যোগ হবে। MI–র থিঙ্ক ট্যাঙ্ক জানাচ্ছে, তাঁরা শার্দুলকে শুধু পেসার নয়, একজন কার্যকর অলরাউন্ডার হিসেবেই ব্যবহার করতে চান। Wankhede–র উইকেটে বল সুইং করে, আর ব্যাটে লাইনে আসলে তা উড়েও যায়—এই দুই বৈশিষ্ট্য শার্দুলের জন্য উপযুক্ত হবে।
ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ট্রেড আইপিএলের অন্যতম সেরা মুভ হতে পারে। দলবদলের পর শার্দুল সাধারণত নিজের সেরাটা দেন, যেমনটি দেখা গিয়েছিল চেন্নাইয়ে। MI–র হয়ে বড় ম্যাচে তাঁর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। একই সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজি এখন ভারতীয় প্রতিভা দিয়ে একটি শক্তিশালী কোর তৈরি করছে—ঋত্বিক শোকিন, তিলক বর্মা, নেহাল ওয়াধেরা, ঈশান কিষান, এবং এবার শার্দুল ঠাকুর—সব মিলিয়ে দল এক নতুন ভারসাম্য অর্জন করছে।
ট্রেডের এই ঘোষণা আসার পর ক্রিকেটমহলে এবং সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। মুম্বই সমর্থকদের আনন্দের সীমা নেই। অনেকেই লিখেছেন—“Lord Shardul is back with a bang!” আবার কেউ লিখেছেন—“MI finally gets a game-changer Indian pacer.” অন্যদিকে লখনউ সমর্থকদের একাংশ এই সিদ্ধান্তে হতাশ হলেও তারা নতুন পরিকল্পনার প্রতি আস্থা রাখার কথা বলেছে।
সব মিলিয়ে শার্দুল ঠাকুরের মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে যোগদান আইপিএল ২০২৫–এর আগে সবচেয়ে আলোচিত এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ট্রেডগুলির একটি হয়ে রইল। আসন্ন মৌসুমের পারফরম্যান্সই বলে দেবে, MI–র এই সিদ্ধান্ত কতটা সফল হয়, তবে ক্রিকেটমহল ইতিমধ্যেই বলছে—“This could be the trade of the season.”


