ট্রফি জিততেই বাংলা ফুটবল দলের প্রতি উদার হলেন মুখ্যমন্ত্রী

বাংলার ফুটবল (Bengal Football) ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচিত হয়েছে। ৩৩তম সন্তোষ ট্রফি (Santosh Trophy) জিতে বাংলা ফুটবল দল (Bengal Football Team) আবারও ভারতের ফুটবল…

Mamata Banerjee with Bengal Football Team after win Santosh Trophy Final

বাংলার ফুটবল (Bengal Football) ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচিত হয়েছে। ৩৩তম সন্তোষ ট্রফি (Santosh Trophy) জিতে বাংলা ফুটবল দল (Bengal Football Team) আবারও ভারতের ফুটবল (India Football) মানচিত্রে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। গত ৩১ ডিসেম্বর হায়দরাবাদের (Hyderabad) গাচিবৌলি স্টেডিয়ামে কেরালাকে (Kerala) ১-০ গোলে হারিয়ে দীর্ঘ ৭ বছর পর সন্তোষ ট্রফির শিরোপা ঘরে তোলে বাংলা (Bengal)। এই ঐতিহাসিক জয়ে যেমন রাজ্যবাসীর মুখে হাসি ফুটেছে, তেমনই বাংলার ফুটবল সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে আরও একবার বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছে। এই ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দেওয়ার পাশাপাশি আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister) মমতা বন্দোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)।

একী কাণ্ড! মুম্বাই সিটির ক্লাব ইতিহাসে ওডিশার কোচ লোবেরা?

   

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অর্জনের জন্য রাজ্য ফুটবল দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং তাদের সম্মান জানিয়ে ২রা জানুয়ারি এক বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। তিনি বলেন, “বাংলায় ফুটবল শুধু একটি খেলা নয়, এটি আমাদের রক্তের সঙ্গে মিশে থাকা এক অমূল্য ঐতিহ্য। বাংলার ফুটবলপ্রেমী জনগণের কাছে ফুটবল হল গর্ব, আবেগ এবং আত্মপরিচয়ের প্রতীক।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “বাংলার ফুটবল দল ভারতসেরা হওয়ার পর যে উচ্ছ্বাস ও গর্ব রাজ্যবাসীর মধ্যে দেখা যাচ্ছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। কোচ সঞ্জয় সেনের নেতৃত্বে আমাদের ফুটবলাররা যেভাবে দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজেদের প্রমাণ করেছে, তাতে আমরা সবাই গর্বিত।”

শুটিং রেঞ্জ ছেড়ে রুপালি পর্দায় পা রাখছেন মনু?

ফুটবলারদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশেষ প্রশংসা ছিল। তিনি বলেন, “বাংলার ফুটবলাররা অধিকাংশই গ্রাম থেকে উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে যে শৃঙ্খলা, পরিশ্রম এবং শক্তি রয়েছে, তা প্রশংসনীয়। তারা দারিদ্র্য ও আর্থিক কষ্ট সত্ত্বেও ক্রীড়া ক্ষেত্রে নিজেদের মেধা ও প্রতিভা প্রমাণ করেছে। এদের মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।”

ফুটবল দল ও কোচ সঞ্জয় সেনের জন্য একদিকে আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে, অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রতিভাবান ফুটবলারদের জন্য চাকরির প্রস্তাবও দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি বাংলার ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের কাছে এই ফুটবলারদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেব। এরা একদিন যদি ভালো প্রশিক্ষণ পায়, ভালো খাবার-দাবার পায়, তবে একদিন বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে এবং আমাদের রাজ্য ও দেশকে সম্মানিত করবে।”

বছরের প্রথম ম্যাচে নর্থইস্টকে সমীহ মহামেডান কোচ চেরনিশভের?

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু ফুটবলারদের সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানানোই নয়, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ টাকার আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। এতে করে ফুটবলাররা আরও উৎসাহিত হবে এবং তাদের আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে। বাংলার ফুটবল দলকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একই সঙ্গে প্রশংসা করেছেন এবং ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী হয়েছেন। তিনি বলেন, “ফুটবলারদের যদি আরও ভালো প্রশিক্ষণ, উপকরণ এবং সুযোগ দেওয়া যায়, তাহলে একদিন বাংলা ফুটবল দল বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে।”

এছাড়া, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার যুবসমাজের মধ্যে খেলার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করার জন্য ফুটবলের প্রতি আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আরও উন্নত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, খেলাধুলার সুযোগ এবং সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে বাংলার ফুটবলকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর দৃঢ় প্রত্যয় রয়েছে।

কেন্দ্রের ব্লুপ্রিন্ট! সীমান্ত দিয়ে লোক ঢোকাচ্ছে BSF, বিস্ফোরক মমতা

বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখানো এই ফুটবলাররা, যারা তাদের কঠোর পরিশ্রম ও একাগ্রতায় বাংলার ফুটবলকে এই শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে, তাদের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে, বাংলার ফুটবল আরও উচ্চতায় পৌঁছাবে, এমনটাই প্রত্যাশা।

বাংলা ফুটবল দলের কোচ সঞ্জয় সেন আগেই বলেছিলেন, “আমাদের অপরাজিত থাকা মূল্যহীন হয়ে যেত যদি ফাইনাল না জিততাম।” তাঁর এই দৃঢ় মনোবল ছিল দলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। ফাইনালে এই কঠিন মানসিকতার কারণে বাংলাকে প্রথম থেকেই এগিয়ে থাকতে সাহায্য করেছে। তিনি আরও যোগ করেছিলেন, “বাংলা ট্রফি না জিতলে কোন অর্থই ছিল না। আমরা হারতে রাজি ছিলাম না, তাই পরিশ্রম করতে থাকলাম।”

এবার বাংলার ফুটবল দল নিশ্চয়ই ইতিহাসের পাতায় সোনালী অক্ষরে লেখা থাকবে। এই জয়ের মাধ্যমে বাংলার ফুটবল বিশ্বে আবারও প্রমাণিত হল যে তারা এখন শুধু অতীতের সাফল্যের জন্য পরিচিত নয়, বরং ভবিষ্যতের এক শক্তিশালী দল হিসেবে উঠে এসেছে। ২০২৫ সালের এই জয় বাংলা ফুটবলের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।