ছোটবেলার কোনো ঘটনা কখন কখন জীবনের দিকবদল ঘটায়। ব্রিসন ফার্নান্দেজের (Brison Fernandes) ফুটবল জীবনের শুরুটা হয়েছিল একটি ফ্যান্সি ড্রেস প্রতিযোগিতায়। তখন সে কিন্ডারগার্টেনের ছাত্র। বাবা তাকে ব্রাজিল জাতীয় দলের হলুদ জার্সি পরিয়ে ফুটবলার সাজিয়েছিলেন। পায়ে ফুটবল বুট, মুখে ফুটবলারের হাসি—সেদিন থেকেই তার স্বপ্ন জন্ম নেয়, সে ফুটবলার হবে।
দশ বছরেরও বেশি সময় পর, ২০২১ সালে ব্রিসন সই করে এফসি গোয়ার (FC Goa) রিজার্ভ দলে। এরপর কঠোর পরিশ্রম ও প্রতিভার জোরে ধীরে ধীরে মূল দলে জায়গা করে নেন। ২০২৪-২৫ মরসুমে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL) তার পারফরম্যান্স সকলের নজর কাড়ে। ২৪ ম্যাচে ৭টি গোল এবং ২টি অ্যাসিস্ট করে তিনি অর্জন করেন ‘এমার্জিং প্লেয়ার অব দ্য সিজন’-এর খেতাব। ভারতীয়দের মধ্যে গোলসংখ্যায় তার চেয়ে এগিয়ে ছিল শুধু সুনীল ছেত্রী (১৪ গোল)।
সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তিনি পৌঁছে গেছেন ২০২৫ সুপার কাপ (Super Cup 2025) ফাইনালে। সেমিফাইনালে মোহনসুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে গোয়ার জয়সূচক গোলটি করেন তিনিই। সামনে ফাইনাল—জামশেদপুর এফসির (Jamshedpur FC) বিরুদ্ধে, ৩ মে।
ব্রিসন তার এই সাফল্যের পেছনে বড় কৃতিত্ব দেন এফসি গোয়ার কোচ মানোলো মার্কুয়েজকে। তিনি বলেন, “কোচ সবসময় আমার প্রতি বিশ্বাস রেখেছেন। শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও তিনি আমার উন্নতির জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন—ডায়েট, রিকভারি, মেন্টাল হেলথ—সব কিছু নিয়ে। তিনিই আমাকে একটি সম্পূর্ণ ফুটবলার হিসেবে গড়ে তুলেছেন।”
মানোলো মার্কুয়েজকও তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ব্রিসন একজন সত্যিকারের গোয়ার ফুটবলার। ওর মধ্যে খেলার প্রতি ভালোবাসা আছে, আনন্দ আছে। গত মরসুমে কিছু অনিশ্চয়তা থাকলেও, এখন ও সেটা কাটিয়ে উঠেছে। আমি ওকে বলি, মাথা নিচু রেখে কাজ করে যাও—ওর সামনে অনেক বড় ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।”
দক্ষিণ গোয়ার লাউতোলিম গ্রামে জন্ম ব্রিসনের। ছোটবেলা থেকেই বড়দের সঙ্গে খেলে খেলে তৈরি হয়েছে তার আত্মবিশ্বাস। স্কুল পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১২ দলে খেলার পর, সালগাঁওকার এফসির অনূর্ধ্ব-১৪ দলে নাম লেখান। পরে এফসি গোয়ার যুব দলে যোগ দিয়ে ২০২১ সালে ডুরান্ড কাপ জয় করেন, যা তার প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র সিনিয়র ট্রফি।
তবে তার কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় মাইলফলক ছিল জাতীয় দলে প্রথমবার সুযোগ পাওয়া। ২০২৭ এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারে বাংলাদেশর বিরুদ্ধে ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন তিনি। ম্যাচটি গোলশূন্যভাবে শেষ হলেও, ব্রিসনের জন্য এটি ছিল এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
“প্রথমে একটু নার্ভাস ছিলাম। তবে ২-৩টি পাস দেওয়ার পর নিজেকে স্বস্তিতে লাগছিল। ক্লাব কোচের পরিচিত মুখ (মার্কেজ) থাকায় মানিয়ে নিতে সুবিধা হয়,” জানান ব্রিসন।
বর্তমান জাতীয় দলের সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, “সব কিছু রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। ধৈর্য ধরতে হবে। আমি নিশ্চিত, আমরা উন্নতি করব।”
আজ সে আর কোনো মঞ্চে অভিনয় করছে না, বাস্তবেই ফুটবলার। দেশের প্রতিনিধিত্ব করা, ক্লাবের হয়ে শিরোপা জয়—সব স্বপ্ন এখন বাস্তব। সামনে নতুন ফাইনাল, নতুন সুযোগ। ব্রিসন জানেন, স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিল একটা ছোট প্রতিযোগিতা থেকে—আজ সেই স্বপ্নের মাঝেই সে বাস করছে।