ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের সব হিসাব নিকেষ ওলট-পালট করে দিলেন শাহবাজ আহমেদ এবং অভিষেক পোড়েল। ব্যাট হাতে দুই তরুণ তুর্কির দাপটে রঞ্জি ট্রফিতে (Ranji Trophy) জয় দিয়ে শুরু করল বাংলা। বরোদাকে ৪ উইকেটে হারাল অরুণ লালের শিষ্যরা।
রবিবার ম্যাচের চতুর্থ দিন জয়ের সমীকরণটা খুব একটা সহজ ছিল না বাংলার সামনে। চতুর্থ তথা শেষ দিনে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২০৩ রান। হাতে আটটি উইকেট। প্রথম ইনিংসে যে ভাবে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল বাংলার ব্যাটিং লাইনআপ, তাতে অনেকেই বাজি ধরেছিলেন বরোদার পক্ষে। তবে আশার আলো একটাই ছিল, ৭৯ রান করে ক্রিজে টিকে ছিলেন অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরণ। সঙ্গে ছিলেন অভিজ্ঞ অনুষ্টুপ মজুমদার।
কিন্তু এদিন ম্যাচের শুরুতেই ছন্দপতন। মাত্র দুই বল খেলে আর কোনও রান যোগ করতে পারেননি অভিমন্যু। তিনি ফিরে যাওয়ার পর অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন, বঙ্গ ব্রিগেডের হার স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। ম্যাচটি ধীরে ধীরে এগোচ্ছিলও সেই দিকে। বহু যুদ্ধের নায়ক সুদীপ চট্টোপাধ্যায় ১৮ রানে ফিরে যান। এরপর ৩৩ করে অনুষ্টুপও প্যাভিলিয়নে ফেরেন। বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি (৩৭) ক্রিজে সেট হয়ে গিয়ে উইকেট চুড়ে দিয়ে আসেন। ‘মন্ত্রীমশাই’ যখন আউট হন, তখনও বাংলার জয়ের জন্য ১০০-র ওপর রান প্রয়োজন। বাইশগজে তখন আগুন ঝড়াচ্ছেন ধ্রুব প্যাটেল-অভিমন্যু রাজপুতরা।
খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তোলার কাজ শুরু করেন শাহবাজ আহমেদ। তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দেন এই ম্যাচেই রঞ্জি অভিষেক হওয়া অভিষেক পোড়েল। অভিষেক ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখলেন তিনি। তার থেকেও বড় বিষয়, মাত্র ১৯ বছর বয়সে যে ধরনের ইস্পাত কঠিন মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি, তা দেখে মুগ্ধ ভারতীয় ক্রিকেট মহল। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটারের মধ্যে যে ভবিষ্যতের তারকা হয়ে ওঠার সমস্ত রকম মসলা মজুত আছে, তার প্রমাণও দিলেন অভিষেক। চাপের মুখে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। তাঁর করা এদিনের ৫৩ রান কোনও সেঞ্চুরি বা দ্বিশতরানের থেকে কম নয়। আর শাহবাজের তো আলাদা করে প্রশাংসা করতেই হবে। সুযোগ পেলেই বলের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও দলকে সাহায্য করেন তিনি। এদিনও বাংলার ত্রাতা হয়ে দাঁড়ালেন ২৭ বছরের বাঁহাতি অলরাউন্ডার। ৭১ রানে থাকলেন। রঞ্জি অভিযানে দলকে এনে দিলেন গুরুত্বপূর্ণ চারটি পয়েন্ট। সেইসঙ্গে ম্যাচের সেরাও নির্বাচিত হয়েছেন শাহবাজ।
ম্যাচ শেষে সিএবি সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া বলেন, ‘তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতার দারুণ সংমিশ্রণ রয়েছে এই বাংলা দলে। অভিষেক পোড়েলদের মতো তরুণদের দেখে দারুণ লাগছে। দুর্দান্ত খেলেছে ও এবং অভিষেক ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখল। শাহবাজ দেখিয়ে দিল ক্রিকেটের যে কোনও ফরম্যাটে ও কত বড় ফিনিশার। অভিমন্যু সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছে। দলের ওপর বিশ্বাস রেখেছে। আগামী ম্যাচগুলির জন্য শুভেচ্ছা জানাই।’ সচিব স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘একটা স্মরণীয় জয় উপহার দেওয়ার জন্য বাংলা দলকে অভিনন্দন। বিশেষ করে আমি অভিষেক পোড়েলের কথা বলতে চাই, যে অভিষেক ম্যাচে অমূল্য অপরাজিত অর্ধশতরান উপহার দিয়েছে। সেইসঙ্গে অভিমন্যু, শাহবাজ এবং কোচ অরুণ লালকেও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’