ATK Mohun Bagan : লাস্ট বয় হলেও নর্থ ইস্টকে হালকাভাবে নিতে নারাজ মোহনবাগান কোচ

লিগ টেবিলের প্রথম চারে নিজেদের অবস্থান পাকা করতে আর দু’টি জয় প্রয়োজন এটিকে মোহনবাগানের (ATK Mohun Bagan)। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে শনিবার লিগ তালিকায় লাস্ট বয়…

লিগ টেবিলের প্রথম চারে নিজেদের অবস্থান পাকা করতে আর দু’টি জয় প্রয়োজন এটিকে মোহনবাগানের (ATK Mohun Bagan)। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে শনিবার লিগ তালিকায় লাস্ট বয় নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে জুয়ান ফেরান্দোর দল।

চলতি প্রতিযোগিতায় ১৬ ম্যাচ খেলে মাত্র দু’টিতে জিতেছে নর্থ ইস্ট। চারটিতে ড্র এবং বাকি ১০ ম্যাচেই হারের মুখ দেখেছে পাহাড়ের দলটি। শুধু তাই নয়, এখনও পর্যন্ত টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৩৫টি গোল হজম করেছে তারা। অন্যদিকে, ১৩ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট সংগ্রহ করা মোহনবাগান আতমবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছে। কারণ, গত ম্যাচে লিগ টেবিলের ফার্স্ট বয় হায়দরাবাদ এফসিকে সহজেই হারিয়েছে তারা। নর্থ ইস্টকে হারাতে পারলেই লিগ শীর্ষে চলে যাবে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। তবে এদিন অনায়াসে তিন পয়েন্ট চলে আসবে ঝুলিতে, এমনটা মনে করেন না বাগানের স্প্যানিশ কোচ। তার অন্যতম দু’টি কারণ হল প্রস্তুতির জন্য সময়ের অভাব এবং দলের চোট-আঘাত।

চলতি টুর্নামেন্টের লিগ পর্বে এখনও সাতটি ম্যাচ বাকি রয়েছে মোহনবাগানের। তার দুর্বলতম প্রতিপক্ষ হিসাবে নর্থ ইস্টের বিরুদ্ধে কি বাড়তি সুবিধা পাবে দল। মানতে নারাজ ফেরান্দো। পরিষ্কার বলে দিলেন, ‍‘না, একেবারেই না। শেষ সাতটা ম্যাচে কোনও বাড়তি সুবিধা পাব না আমরা। সবাই তিন পয়েন্টের জন্যই খেলবে। আপাতত ছ’টা দল শেষ চারে থাকার দৌড়ে আছে। কয়েকটা দলের হাফ চান্স রয়েছে। শেষের দিকে ফুটবলাররাও তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করে। কারণ, এই সময়ে তাদের চুক্তিবৃদ্ধির বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করে ক্লাবগুলো। নতুন অফার পাওয়ারও ব্যাপার থাকে এই সময়ের পরেই। সবারই ব্যক্তিগত লক্ষ্য থাকে। তাই কেউই খারাপ খেলতে চায় না।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‍‘প্রত্যেকটা ম্যাচেই বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা থাকে। এক ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার পক্ষপাতি নই আমি। খেলার ধরনটা একই থাকবে। পায়ে বল রাখা, জায়গা নিয়ন্ত্রণ করা, জায়গা পেলে আক্রমণে ওঠো, পজিশনাল অ্যাটাক, বিপক্ষকে চাপে রাখা। এটা আমাদের খেলার স্টাইল। কিন্তু পরিকল্পনায়, মানে ছোট খাটো ব্যাপারে পরিবর্তন আনাটা জরুরি। উইঙ্গার, সেন্টার ব্যাকদের অবস্থান—এইসব ব্যাপারগুলোতে একটু অদলবদল করতেই হবে।’

প্রতিপক্ষের যেহেতু কিছু হারানোর নেই, তাহলে কি ওরা অল আউট যাবে? সহমত পোষণ করে স্প্যানিয়ার্ড বললেন, ‍‘হ্যাঁ, ওরা সেটা করতেই পারে। তবে আমাদের চোট-আঘাত সমস্যা রয়েছে। রয়, উইলিয়ামস, কার্ল, হুগো, সুসাই, অমরিন্দর, টাঙরি, কিয়ান— এদের সবার চোট। কয়েকজনের কোয়ারান্টাইন থেকে বেরিয়ে অনুশীলনের তীব্রতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে। অল্প সময়ে রিকভারিটাও ঠিক মতো হয় না। অনুশীলনে ছোটখাটো চোট তো হয়েই থাকে। তবে আমাদের মেডিক্যাল স্টাফ ভালো কাজ করছে। খেলোয়াড়দের ঠিকমতো রিকভার করতে ভালো সাহায্য করছে। সে জন্য আমি খুশি। বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই ফিট আছে। দেখা যাক ম্যাচের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত ওরা আরও কতটা ফিট হয়ে ওঠে।’

নর্থইস্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা দেশর্ন ব্রাউন সম্পর্কে ফেরান্দো বলেন, ‍‘আমরা যখন হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলাম, তখন ওগবেচে, মুম্বইয়ের ক্ষেত্রে ইগর অ্যঙ্গুলোকে নিয়েও একই প্রশ্ন উঠেছিল। এরা প্রত্যেকেই ভালো খেলোয়াড়। লিগের এই শেষ পর্বটা খেলোয়াড়দের পক্ষে খুবই কঠিন। এই সময়ে ফোকাস নড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে ব্রাউনদের মতো খেলোয়াড়রা সবসময় আক্রমণাত্মক মেজাজে থাকে। ওদের জায়গা ছাড়লেই ওরা তা কাজে লাগিয়ে গোল করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। তবে তিন পয়েন্ট পাওয়ার জন্য আমাদের ৯০ মিনিট ধরে নিজেদের স্টাইল বজায় রেখে খেলতে হবে। ছোটখাটো বিষয়ে মনোনিবেশ করতে হবে।’ সন্দেশ ঝিঙ্ঘানকে নর্থ ইস্টের বিরুদ্ধে দেখা যাবে কি না জিজ্ঞেস করা হলে বাগান সারথির উত্তর, ‍‘সন্দেশকে নিয়ে অনেক কথাই বলেছি। ও জানুয়ারির মাঝামাঝি আমাদের শিবিরে যোগ দেয়। কোভিড পজিটিভও ছিল। সেই সময় ১০-১২ দিন ঘরবন্দি ছিল। তার পরে আবার কোয়ারান্টাইন শুরু হয়। জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে অনুশীলন শুরু করে ও। ওর এখন প্রাক-মরসুমের মতো অবস্থা। প্রাক মরসুমে সাধারণত ক্রমশ ৩০, ৪৫, ৬০ তার পরে ৯০ মিনিট ম্যাচ টাইম দেওয়া হয় খেলোয়াড়দের। ওকে এখন যদি ৫০ মিনিট ম্যাচের তীব্রতার মধ্যে খেলতে নামাই, সেটা ওর পক্ষে মোটেই ভালো হবে না। তবে ও ইদানিং অনুশীলনে পরিশ্রম করছে। তাই ওকে একটা সুযোগ দেওয়ার কথা ভেবে দেখা যেতে পারে। কারণ, ও আমাদের দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। দলকে ও সাহায্য করতেও মরিয়া।’

প্রবীর দাসের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নিয়ে সবুজ-মেরুন হেডস্যার বলেন, ‍‘দলের ছেলেদের সামগ্রিক পারফরম্যান্স নিয়ে আমি খুশি। কারণ, এই কঠিন পরিস্থিতিতে পরিকল্পনা অনুযায়ী ভালো খেলা বেশ কঠিন। এমনিতেই এই স্টাইলে খেলা মোটেই সোজা নয়। তবু ওরা কিন্তু ভালো খেলছে, জিতছেও। তাই এই পরিস্থিতিতে ওরা আমার কাছে এক-একজন নায়ক।’ কিয়ান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‍‘আমি খুশি যে, ও ধীরে ধীরে উন্নতি করছে। গত ম্যাচে কার্লের পরিবর্তে ওকে নামিয়ে আমরা ৪-৪-২ ছকে চলে যাই। কিয়ানকে আমি বোঝাই, এই সিস্টেমে তোমার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওদের সেন্টার ব্যাকের পিছনে থাকার চেষ্টা করো। জায়গা নিয়ন্ত্রণ করাটাও খুবই জরুরি। ও কিন্তু দারুন কাজ করেছে। লিস্টন ও মনবীরকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য ওর যে ভাবে মুভ করা দরকার ছিল, সেগুলো নিখুঁত ভাবে করেছে। এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে তিন গোল করার জন্য সমর্থকেরা যে ওকে নিয়ে খুব খুশি, তা আমি জানি। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সেরা তিন খেলোয়াড়ের মধ্যে ওকে রাখতে পেরে আমিও খুব খুশি। বিপক্ষকে চাপে রাখা ও নিজের অবস্থানের ক্ষেত্রে ওকে আরও উন্নতি করতে হবে। অনুশীলনে ওকে বোঝালে ও খুব ভালো বুঝতে পারে। ছোটখাটো ব্যাপারগুলো খুব ভালো বুঝে নেয় ও। এটা ওর এবং দলের পক্ষে খুব ভালো। দলে ১৫-১৬ জন ভালোমানের খেলোয়াড় থাকলে, একজন কোচের পক্ষে সেটা খুবই সুবিধাজনক।’

চলতি মরসুমে মোহবাগানের সর্বোচ্চ স্কোরার লিস্টনকে ফেরান্দো বললেন, ‍‘ও একজন ভালো ফিনিশার। আমরা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপের সেমিফাইনালে লুকাকুকে দেখেছি কী ভাবে পরপর দুটো সহজ সুযোগ হাতছাড়া করার পর সবচেয়ে কঠিন সুযোগটা থেকে গোল করে। লিস্টনের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সে রকমই হয়েছে। তবে আমার কাছে সুযোগ তৈরি করতে পারাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। ও সহজ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। কারণ, হয়তো আসল সময়ে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারছে না। ওকে এই বিষয়ে আরও উন্নতি করতে হবে। অনুশীলনে ওকে এই ব্যাপারটা শোধরাতে হবে।’ টানা ম্যাচ খেলে চলেছে কলকাতার জায়ান্ট ক্লাবটি। আগামিদিনেও সেরকমই সূচি। তাই ফেরান্দো দাওয়াই, ‍‘এখন খেলো, রিকভার করো আবার খেলো—এ ভাবেই এগোতে হবে আমাদের। নর্থইস্টের বিরুদ্ধে ম্যাচের পর রবিবার রিকভারি। সোমবার অনুশীলন। মঙ্গলবার আবার ম্যাচ। অনুশীলনে দলকে তৈরি করা এখন খুবই কঠিন। কারণ, খেলোয়াড়রা সবাই খুব ক্লান্ত। মেডিক্যাল স্টাফের কাছে এটা বড় চ্যালেঞ্জ। গোয়ার পরে আমাদের ম্যাচ পড়বে কেরালার বিরুদ্ধে। আমার কাছেও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, ছোটখাটো কিছু বিষয় ঠিক রাখার জন্য সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। সব কিছু নিয়ে এখন কাজ করার সময় নেই।’

প্রথম চারে শেষ করতে হলে এখন অন্তত কত পয়েন্ট পেতে হবে বলে আপনার মনে হয়? ফেরান্দোর চটজলদি উত্তর, ‍‘আমার মনে হয় ৩০-৩৫ পয়েন্ট পেলে সেরা চারে থাকা নিশ্চিত করা যাবে। তবে আমরা লিগ টেবলের শীর্ষে থেকেই শেষ করতে চাই। সে জন্য ৩৮ পয়েন্ট পেতেই হবে আমাদের। সেইসঙ্গে গোলপার্থক্যও বাড়িয়ে রাখতে হবে।’