ATK Mohun Bagan : শুধু ওগবেচে নয়, পুরো হায়দরাবাদ দলকে নিয়ে পরিকল্পনা বাগান কোচের

ডার্বি জয়ের পর মুম্বইয়ের কাছে হোঁচট খেয়েছে এটিকে মোহনবাগান (ATK Mohun Bagan)। এবার সামনে লিগ টেবিলের শীর্ষে থাকা হায়দরাবাদ এফসি। মঙ্গলবার বাগানের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হায়দরাবাদ।…

Juan Ferrando

ডার্বি জয়ের পর মুম্বইয়ের কাছে হোঁচট খেয়েছে এটিকে মোহনবাগান (ATK Mohun Bagan)। এবার সামনে লিগ টেবিলের শীর্ষে থাকা হায়দরাবাদ এফসি। মঙ্গলবার বাগানের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হায়দরাবাদ। বিপক্ষ কঠিন হলেও, অপ্রতিরোধ্য একেবারেই নয়। ১৪ ম্যাচে মাত্র সাতটিতে জয়ের মুখ দেখেছে তারা। যেখানে ১২ ম্যাচ খেলা মোহনবাগানের জয় পাঁচ ম্যাচে। দুই ম্যাচ কম খেলা সবুজ-মেরুন (২০) বাহিনী ঠিক ছয় পয়েন্টেই পিছিয়ে রয়েছে হায়দরাবাদের (২৬) থেকে। অর্থাৎ পরবর্তী দু’টি ম্যাচ জিতলেই দক্ষিণ ভারতের দলটিকে ছুঁয়ে ফেলবে কলকাতার জায়ান্টরা।

মুম্বই সিটি এফসির বিরুদ্ধে জয়ের দোরগোড়া থেকে ফিরে এসেছে পালতোলা নৌকা। তবে বরাবরের শক্ত গাঁট মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে সেদিন দলের খেলায় বেজায় খুশি এটিকে মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ জুয়ান ফেরান্দো। তিনি মনে করেন, কঠিন পরিস্থিতিতে দলের ছেলেরা যথাসাধ্য পারফর্ম করার চেষ্টা করছেন। হায়দরাবাদ যথেষ্ট শক্তিশালী মেনে নিয়েও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।

হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে প্রথম লেগের সাক্ষাতে শেষ মুহূর্তের গোলে জয় হাতছাড়া হয়েছিল মোহনবাগানের। বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়ার পর ফেরান্দোর দাবি, ‍‘এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। সব দলই বিভিন্ন দিক দিয়ে বদলে গিয়েছে। এর মধ্যে অনেক কিছু হয়ে গিয়েছে। কোয়ারান্টাইন, চোট-আঘাত। গত ম্যাচে যে পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছিল এটিকে মোহনবাগান, এ বার সেটা এক রকম হবে না।’ এই ম্যাচের পরিকল্পনা নিয়ে স্প্যানিয়ার্ড বললেন, ‍‘পরিকল্পনা অন্য রকম হলেও আমাদের স্টাইল সবারই জানা। আমরা পায়ে বল রাখতে চাই, জায়গা বার করতে চাই। জায়গা কাজে লাগিয়ে আক্রমণে উঠতে চাই। ওড়িশা, এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ছেলেদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে আমি খুশি। আমরা এখন আগের চেয়ে বেশি সুযোগ তৈরি করছি, যেটা ভালো। এ ভাবেই তো গোল আসবে।’

হায়দরাবাদের শক্তি সম্পর্কে ফেরান্দোর বিশ্লেষণ, ‍‘ওরা টিম গেম খেলে। ওদের দর্শন, পরিকল্পনা সব একই রকম। ওরা যা করে একসঙ্গেই করে। তার ওপর ওগবেচের মতো ফরোয়ার্ড আছে ওদের দলে, যে এখন আগুনে ফর্মে আছে। প্রায় প্রতি ম্যাচেই গোল করছে ও। একজন ২০-২৫ বছরের ছেলের মতো খেলছে। জুয়ানানকে নিয়ে গড়া ওদের রক্ষণ বেশ শক্তিশালী। মাঝমাঠে জোয়াও ভিক্টর যে রকম সাহায্য করে দলকে, তেমনই আকাশ মিশ্র ফুল ব্যাকের মতো খেলে। এডু ফাঁকা জায়গা পেলেই তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। অনেক কিছুই আছে যা ওদের ভালো ফুটবল খেলতে সাহায্য করে।’ বাগান কোচের বক্তব্যেই পরিষ্কার, বিপক্ষ দলকে নিয়ে যথেষ্ট কাটাছেঁড়া করেছেন তিনি।

চলতি আইএসএলে দুরন্ত ফর্মে রয়েছেন ওগবেচে। যে কোনও দলের ডিফেন্ডারদের কাছেই দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছেন তিনি। এই বিদেশি ফরোয়ার্ড থামানোর উপায় জানতে চাওয়া হলে ফেরান্দোর ডাকাবুকো জবাব, ‍‘শুধু ওগবেচেকে নিয়ে পরিকল্পনা করে তো লাভ নেই। ওদের দলে অনেক ভালো খেলোয়াড় রয়েছে, যাদের আটকানোর কথাও ভাবতে হবে আমাদের। ওগবেচে তারকা ঠিকই। কিন্তু তার পিছনে ওর গোটা দলটা আছে, যাদের আটকাতে না পারলে কোনও লাভ নেই।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‍‘আমার মনে হয় আক্রমণই রক্ষণের সবচেয়ে ভালো উপায়। তবে আমরা যদি আক্রমণে উঠি, তা হলে আমাদের রক্ষণকেও শক্তপোক্ত থাকতে হবে।’

মিসপাসের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে বাগান ফুটবলারদের। এই নিয়ে অবশ্য বেশি মাথা ঘামাতে নারাজ স্প্যানিশ কোচ। বললেন, ‍‘আমরা জিততে চাই। তাই গোল করতে চাই। গোল করতে হলে জায়গা বানাতে হবে, যে জায়গা প্রতিপক্ষ ছাড়ছে, সেই জায়গা কাজে লাগাতে হবে এবং আক্রমণে উঠতে হবে। আমরা যে স্টাইলে খেলি, সেটা খুব একটা সোজা নয়। গত এক মাস ধরে এই স্টাইল নিয়ে কাজ করছি আমরা, যার মধ্যে ২০ দিন কেটে গিয়েছে কোয়ারান্টাইনেই। তবু আমরা চেষ্টা করছি প্রতি দিন উন্নতি করার এবং তা করবও।’ 

ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করে নায়ক বনে গিয়েছিলেন কিয়ান নাসিরি। তবুও গত ম্যাচে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে তাঁকে খেলা শেষ পাঁচ মিনিট মাঠে নামান ফেরান্দো। এই নিয়ে অবশ্য সমালোচনার ঝড় উঠেছিল বঙ্গ ফুটবলে। এদিন ফেরান্দোকে সরাসরি জিজ্ঞেস করা হয়, নাসিরিকে কি সেদিন আগে নামালে ভালো হত? তাঁর সোজাসাপটা উত্তর, ‍‘না, একেবারেই না। প্রথমত, কিয়ান একশো শতাংশ ফিট নয়। ওর হাঁটুতে কিছু সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া নতুন স্টাইলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ওর অনেকটা সময় লাগবে। ওকে বিশেষ মুহূর্তে নামানো যেতে পারে, যেমন এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে আমরা ওকে নামিয়েছিলাম সিস্টেম বদল করার জন্য। তাতে ওর ভূমিকা ছিল। কিন্তু মুম্বই ম্যাচে সিস্টেম বদলে যে সিস্টেমে খেলি, তাতে ওকে তেমন প্রয়োজন ছিল না। তাই ওকে নামিয়ে চোটের ঝুঁকি বাড়ানোর কোনও মানে ছিল না। ওর সুরক্ষার দিকটাও আমাদের দেখতে হবে।’

দলের বাকি ফুটবলারদের নিয়ে বেশ আশাবাদী ফেরান্দো। তিনি বলেন, ‍‘ফুটবলারদের ওপর শতকরা একশো ভাগ আস্থা রয়েছে আমার। দীপ টাঙরি বিপক্ষকে চাপে রাখার জন্য যথেষ্ট ভালো। ওকে উন্নতি করতে হবে ঠিকই, তবে ও ও স্বাভাবিক খেলাটাই খেলে। আশুতোষ মহেতার আক্রমণে ওঠার দক্ষতা ভালো। যখন শুভাশিসের চোট ছিল এবং ওকে লেফট ব্যাক হিসাবে খেলতে হয়েছিল। তখন ওর পারফরম্যান্স দারুণ ছিল। মনবীর খুবই ভালো ফুটবলার। তবে ওদের সমস্যাটা পারফরম্যান্স সংক্রান্ত নয়, কৌশল গলদ রয়েছে কিছুটা। এটা আমারই কাজ, ওদের উন্নতি করতে সাহায্য করা।’ গত ম্যাচে মাঝপথেই ডেভিড উইলিয়ামসকে বসাতে হয়েছিল চোটের জন্য। তাঁর চোট কতটা গুরুতর, তা বেশ উদ্বেগে বাগান সমর্থকরা। এই বিষয়ে পরিষ্কার ভাবে কিছু বললেন না কোচও। শুধু জানালেন, অনেক খেলোয়াড়ই এখনও মাঠে নামার মতো একশো শতাংশ অবস্থায় নেই।

বেশ কিছু ম্যাচে জয়ের দোরগোড়া থেকে ফিরে আসতে হয়েছে মোহনবাগানকে। এই অবস্থায় ফের লিগের শীর্ষস্থান দখল করার সম্ভাবনা কতটা? ফেরান্দোর বললেন, ‍‘এটাই আমাদের লক্ষ্য। প্রতি ম্যাচে তিন পয়েন্টের জন্য নামছি আমরা। পরের দুটো ম্যাচ খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরের দুটো ম্যাচে জিততে পারলে আমরা লিগ টেবলের শীর্ষে পৌঁছে যাব। তবে বেশি দূর ভাবলে আমাদের ওপর চাপ বাড়তে পারে। তার চেয়ে বরং পরের ম্যাচ নিয়েই বেশি ভাবা যাক। প্রতি ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে হবে। শেষ ছ’টা ম্যাচে শক্তিশালী দলগুলোর বিরুদ্ধেই খেলতে হবে আমাদের। তবে এখন বিপক্ষদের নিয়ে বেশি ভেবে লাভ নেই। নিজেদের নিয়েই বেশি ভাবতে হবে। নিজেদের ওপরই ফোকাস করতে হবে বেশি।’