ATK Mohun Bagan: অতীত ভুলে দলকে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্র দিলেন মোহনবাগান কোচ

শীর্ষে স্থানে লিগ শেষ করা বা লিগ শিল্ড জয়ের একমাত্র শর্ত ছিল, লিগের শেষ ম্যাচে অন্তত দুই গোলে জামশেদপুর এফসিকে হারানো। তা তো হয়ইনি, উলটে…

Juan Ferrando

শীর্ষে স্থানে লিগ শেষ করা বা লিগ শিল্ড জয়ের একমাত্র শর্ত ছিল, লিগের শেষ ম্যাচে অন্তত দুই গোলে জামশেদপুর এফসিকে হারানো। তা তো হয়ইনি, উলটে ম্যাচটি হেরে বসে এটিকে মোহনবাগান। হাতছাড়া হয় লিগ শিল্ড। সেইসঙ্গে ফুটবলারদের মনোবলও এখন তলানীতে ঠেকেছে। এই অবস্থায় শনিবার আইএসএলের সেমিফাইনালে প্রথম লেগের ম্যাচে হায়দরাবাদ এফসির মুখোমুখি হচ্ছে মোহনবাগান।

বিষয়টি অবশ্য একেবারে অজানা নয় হেডস্যার জুয়ান ফেরান্দোর। তাই ম্যাচের পরদিন তিনি জানিয়েছিলেন, সবার আগে দলকে চাঙ্গা করাই হবে তাঁর প্রধান লক্ষ্য। তবে সবুজ-মেরুন ফুটবলারদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে কিছুটা চিন্তিত হলেও স্প্যানিশ কোচ মনে করেন, অতীত ভুলে সামনের দিকে তাকানোই ভালো। প্রতিটি নক আউট ম্যাচের প্রতি মুহূর্তে মনোনিবেশ করতে হবে দলের ছেলেদের। লিগ পর্বে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষাতে দু’বার এগিয়ে গিয়ে ড্র করে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল বাগানকে। তবে ফিরতি লেগে হায়দরাবাদ এফসিকে হারিয়েছিল তারা। সেই আত্মবিশ্বাসকেই হাতিয়ার করতে পারে বাগান শিবির।

বিপক্ষ দল সম্পর্কে সবুজ-মেরুনের সারথি বলেন, ‍‘আমরা জানি যে, খুব ভালো একটা দলের বিরুদ্ধে মাঠে নামছি। এই মরসুমটা খুব ভালো কেটেছে ওদের। কুড়িটা ম্যাচ খেলা হয়ে যাওয়ার পরে হায়দরাবাদ বোধহয় খুব একটা চাপ নিয়ে খেলতে চাইবে না, বরং ফুটবলটাকে উপভোগ করার কথা মাথায় নিয়ে মাঠে নামবে। সে জন্যই ওরা ভালো দল। তবে এই ম্যাচে জিততে তো চাইবেই ওরা। উন্নত ফুটবলও খেলবে।’ লিগ পর্যায়ে হায়দরাবাদ হারাতে পারেনি। সেমিফাইনালে কি মানসিক ভাবে একটু এগিয়ে থেকে নামবে পালতোলা নৌকা? ফেরান্দোর উত্তর, ‍‘সে রকম কোনও বাড়তি সুবিধা নিয়ে মাঠে নামা কঠিন হবে। আগের ম্যাচে কী হয়েছে, কতটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে, সম্প্রতি দু-তিনটে ম্যাচে কেমন খেলেছি, এগুলোর প্রভাব খুব একটা পড়বে বলে মনে হয় না। তাই কোনও বাড়তি সুবিধা পাব বলে মনে হয় না।’

দুটো সেমিফাইনালে ১৮০ মিনিটের লড়াই। এই বিষয়ে স্প্যানিশ কোচের বক্তব্য, ‍‘আমাদের সামনে এখন দুটো ম্যাচ। প্রতি ম্যাচই জিততে হবে আমাদের, এমনই মানসিকতা রয়েছে আমাদের দলে। দুটো ম্যাচে আলাদা পরিকল্পনা নেই। আশা করি আমাদের ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন সত্যি হবে।’ বিদেশিদের পাশাপাশি হায়দরাবাদের অনিকেত যাদব, আশিস রাই, আকাশ মিশ্র, নিখিল পূজারিদের মতো ভারতীয় ফুটবলাররাও দারুণ ফর্মে রয়েছেন। প্রতিপক্ষ ফুটবলারদের প্রশংসা করতেও ভুললেন না ফেরান্দো। বললেন, ‍‘ওরা প্রত্যেকেই যথেষ্ট উন্নতি করেছে। তবে যারা ওদের খুঁজে বের করেছেন, সেই স্কাউটদের প্রশংসা করতেই হবে। এই খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স সম্পর্কে ওদের ভালো ধারণা আছে। এছাড়া ওদের কোচ এবং কোচিং স্টাফও এদের যথেষ্ট ভালো ভাবে তৈরি করেছে। তার ফল ওরা পেয়েছে। আমাদেরও সুমিত, রানা, অভিষেকদেরও সে ভাবেই তৈরি করতে হবে। কারণ, ওদের প্রতিভা রয়েছে।’

হায়দরাবাদের বার্থোলোমিউ ওগবেচে প্রতি দলের কাছেই ত্রাস হয়ে উঠেছেন। ওগেবেচে আটকানোর পরিকল্পনা নিয়ে অবশ্য প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি রয় কৃষ্ণা, লিস্টন কোলাসোদের হেডস্যার। শুধু জানালেন, ‍‘ওকে আটকানোর অবশ্যই পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু সেটা এখন বলা যাবে না। তবে সত্যি বলতে, আমরা শুধু নিজেদের খেলা নিয়েই ভাবছি। কী ভাবে নিজেদের পায়ে বল রাখতে হবে, জায়গা বের করতে হবে, আক্রমণে উঠতে হবে।’ চলতি মরসুমে রয় কৃষ্ণাকে সেরকম চেনা ছন্দে পাওয়া যাচ্ছে না। এই বিষয়ে ফেরান্দোর দাবি, ‍‘শুধু রয় কেন, সবার সঙ্গেই কথা হয়। এই মরসুমটা প্রত্যেকের কাছেই খুব কঠিন ছিল। কোভিড, চোট-আঘাতে অনেকেই দলের বাইরে ছিল।’ 

জামশেদপুরকে ম্যাচকে অতীত ভেবে শুধুমাত্র বর্তমান ও ভবিষ্যতেই ফোকাস করতে চান ফেরান্দো। তিনি বলেন, ‘সত্যিই গত ম্যাচে আমাদের পারফরম্যান্স ভালো ছিল না। তবে ফুটবলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা অতীত, যাকে বদলানো যায় না। অবশ্যই আমরা অতীত থেকে শিক্ষা নিতে পারি। সেই চেষ্টাই করছি। তবে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা আমাদেরই হাতে। আমরা অনুশীলনে সে জন্য মনোনিবেশ করছি।’ পরিসংখ্যান বলছে, সেটপিস থেকে এই মরসুমে সেভাবে ফসল তুলতে পারেননি বাগান মনবীর সিং-ডেভিড উইলিয়ামসরা। যদিও এই বিষয়ে নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নন সবুজ-মেরুন বস। তাঁর পরিষ্কার যুক্তি, ‍‘সেটপিস থেকে গোল করার বিষয়ে আমরা হয়তো পিছিয়ে আছি। কিন্তু এখন এই একটা ছোট ব্যাপার নিয়ে পড়ে থাকার সময় নেই আমাদের হাতে। ফুটবলে তো শুধু সেটপিস নেই, আরও অনেক ছোটখাটো ব্যাপার আছে, যেগুলোতে নজর দেওয়া দরকার। কিছু কিছু ব্যাপারে বদল আনা দরকার ঠিকই। কিন্তু বেশি প্র্যাকটিস সেশন যদি না পাওয়া যায়, তা হলে হঠাৎ করে বদল আনা কঠিন।’

লিগশিল্ড হাতছাড়া হওয়ার পরে দলের ছেলেদের কী ভাবে উজ্জীবিত করছেন জানতে চাওয়া হলে স্প্যানিয়ার্ড বলেন, ‍‘একই কথা বলব। এটা এখন অতীত। যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। সেমিফাইনাল ও তার পরে ফাইনাল এখন আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ। তার পরে এএফসি কাপ আছে। আমাদের সামনে এখন অনেক কিছু রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‍‘নক আউট মানেই কঠিন লড়াই। যে কোনও ফলই হতে পারে। যেখানে একটা বা দুটো ম্যাচেই নিষ্পত্তি হয়ে যাবে, সেখানে যে কোনও ফল হতে পারে। এমন নয় যে সামনে কুড়িটা ম্যাচ আছে সামলে নেওয়া যাবে। তাই প্রতিটি মুহূর্তে মনসংযোগ নিখুঁত থাকতে হবে এবং সারা ম্যাচে ফোকাসড থাকাটা খুবই জরুরি।’

হুগো বুমৌসের চোট সম্পর্কে ফেরান্দো জানান, এই সপ্তাহে দলের সঙ্গে অনুশীলন শুরু করেছে বাগানের বিদেশি তারকা। তবে সুসাই এবং অভিলাষের চোট এখনও সেরে ওঠেনি বলেও জানালেন তিনি। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে বুমৌসকে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ফেরান্দো।