দায়িত্বের লড়াইয়ে দুর্দান্ত জয়, শোকের মাঝেও নায়ক অর্ণব

মাঠের সবুজ গালিচায় ফুটবলের টানটান উত্তেজনা। প্রতিপক্ষ কলকাতা ময়দানের (Kolkata Football) ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। তাদের বিপক্ষে জিততে গেলে চাই অতিমানবীয় পারফরম্যান্স। আর সেই…

Arnab Das Shines in Kolkata Football: PathaChakra’s Heroic Win Over East Bengal in CFL 2025

মাঠের সবুজ গালিচায় ফুটবলের টানটান উত্তেজনা। প্রতিপক্ষ কলকাতা ময়দানের (Kolkata Football) ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। তাদের বিপক্ষে জিততে গেলে চাই অতিমানবীয় পারফরম্যান্স। আর সেই কঠিন কাজটাই করলেন পাঠচক্র ফুটবল ক্লাবের (Mamoni Group Patha Chakra) তরুণ গোলকিপার (Goalkeeper) অর্ণব দাস (Arnab Das)। কিন্তু এদিনের জয় কেবল জয় নয়। এক মানুষের ভেতরের লড়াইয়ের জয়, দায়িত্ববোধের জয়, আর হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা শোককে শক্তিতে রূপান্তর করার এক নিদর্শন।

মাত্র দেড়দিন আগে অর্ণব হারিয়েছেন মা’কে। মায়ের মৃত্যুর বেদনাকে সঙ্গী করেই সোমবার তিনি নামেন অনুশীলনে। আর মঙ্গলবার ইস্টবেঙ্গলের বিপক্ষে ম্যাচে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন কোচকে। সাদা থান পরে এসেছিলেন মাঠে। ম্যাচ শুরুর আগে সেই শোকবস্ত্র খুলে জার্সি পরে মাঠে নামেন। খেলা শেষে ফের সেই সাদা থানেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।

   

২২ বছরের অর্ণবের জীবনের মঞ্চে এ যেন এক মর্মস্পর্শী নাটক। জানা গিয়েছে চার বছর আগেই বাবাকে হারান। এবার মা। এখন ঘরে কেউ অপেক্ষা করেন না তাঁর জন্য। কিন্তু অর্ণব জানেন, মাঠে তাঁর কর্তব্য রয়েছে। দলের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা রয়েছে। আর সেই দায়িত্ববোধই তাঁকে মাঠে নিয়ে এসেছে।

মঙ্গলবার বারাকপুরে আয়োজিত কলকাতা লিগের ম্যাচে পাঠচক্রের মুখোমুখি হয় ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের প্রথম থেকেই লাল-হলুদ শিবির একের পর এক আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু প্রতিটি আক্রমণের সামনে হয়ে দাঁড়ান অর্ণব। বল গড়াতে দেননি জালে একবারও। তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্সে ভর করে ১-০ গোলে জয় পায় পাঠচক্র। ক্লিনশিট নিশ্চিত করেন এই তরুণ গোলরক্ষক, হয়ে ওঠেন ম্যাচের নায়ক।

ম্যাচ শেষে, গ্যালারির দিকে গিয়ে দর্শকদের সামনে কাঁদলেন অর্ণব। কান্নায় ধুয়ে গেল জয় উদযাপনের সব রঙ। ম্যাচ শেষে সতীর্থ ডেভিড জানান, তাঁর করা একমাত্র গোলটি তিনি উৎসর্গ করছেন অর্ণবের মা-বাবাকে। অর্ণব নিজেও এই জয় উৎসর্গ করেন তাঁর প্রয়াত অভিভাবকদের।

Advertisements

এই ম্যাচের আরেকটি অনন্য দিক ছিল সতীর্থদের মানবিকতা। জানা গিয়েছে জয় উদযাপন করতে পাঠচক্রের বিনিয়োগকারী সংস্থা মামনি গ্রুপের তরফে নামী রেস্তরাঁয় বিরিয়ানি খাওয়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু অর্ণবের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন দলের সব ফুটবলার। তাঁরা বরং অনুরোধ করেন, সেই অর্থ যেন অর্ণবের মায়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে ব্যয় করা হয়।

অর্ণবের এমন লড়াইয়ের কাহিনি মনে করিয়ে দেয় অতীতের কিছু ঘটনা। যেমন, চার বছর আগে পিয়ারলেসের গোলরক্ষক আকাশ মুখোপাধ্যায় বাবার মৃতদেহ বাড়িতে রেখে খেলতে নেমেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের বিপক্ষে। মাথায় ব্যান্ডেজ পরে শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়াই করেছিলেন। কিংবা মোহনবাগানের বাসুদেব মণ্ডল, যিনি বাবার মৃত্যুর পরেও মাঠে নেমেছিলেন দলকে জেতাতে।

এদিন অর্ণব যেন সেই উত্তরসূরি হয়ে উঠলেন। এক নতুন মানচিত্র আঁকলেন সাহস আর দায়িত্ববোধের। তাঁর সতীর্থরা যেমন তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন, তেমনি দলের কোচ, কর্মকর্তা এবং বিনিয়োগকারী সংস্থা সবাই মিলে গড়ে তুলেছেন সহানুভূতির এক অসাধারণ ছবি।

পাঠচক্রের হয়ে এই মরসুমে এখন পর্যন্ত চারটি ম্যাচে অংশ নিয়েছেন অর্ণব। চার ম্যাচেই গোল না খেয়ে ক্লিনশিট রেখেছেন। তাঁর চোখে এখন একটাই স্বপ্ন বড় ক্লাবের জার্সি গায়ে চাপানো।