ব্যাটিং ব্যর্থতার দায় স্বীকার করলেন KKR অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে!

আইপিএল ২০২৫-এর ১২তম ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের (এমআই) কাছে ৮ উইকেটে পরাজিত হয়ে হতাশায় ডুবে গেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর)। সোমবার (৩১ মার্চ) ওয়াংখেড়ে…

Ajinkya Rahane

আইপিএল ২০২৫-এর ১২তম ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের (এমআই) কাছে ৮ উইকেটে পরাজিত হয়ে হতাশায় ডুবে গেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর)। সোমবার (৩১ মার্চ) ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে কেকেআর মাত্র ১১৬ রানে গুটিয়ে যায়। মুম্বইয়ের তরুণ পেসার অশ্বনী কুমার তার অভিষেক ম্যাচে ৪/২৪-এর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে কেকেআরের ব্যাটিং লাইনআপকে ধ্বংস করে দেন। ম্যাচ শেষে কেকেআর অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে (Ajinkya Rahane) দলের ‘সামষ্টিক ব্যাটিং ব্যর্থতা’-কে পরাজয়ের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

   

Ajinkya Rahane এর হতাশার স্বীকারোক্তি

ম্যাচ-পরবর্তী সাক্ষাৎকারে হতাশ রাহানে বলেন, “এটি আমাদের সামষ্টিক ব্যাটিং ব্যর্থতা। টসের সময় আমি বলেছিলাম, এটি ব্যাট করার জন্য ভালো উইকেট। এই উইকেটে ১৮০-১৯০ রান হলে ভালো হতো। এখানে খুব ভালো বাউন্স আছে। কখনও কখনও আপনাকে গতি এবং বাউন্সের সঠিক ব্যবহার করতে হয়। আমাদের এই ম্যাচ থেকে খুব দ্রুত শিক্ষা নিতে হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “বোলিংয়ে আমরা বেশি কিছু করতে পারিনি। বোলাররা তাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বোর্ডে রান ছিল না। আমরা উইকেট হারাতে থাকি। পাওয়ারপ্লেতে চার উইকেট পড়ে যাওয়ায় ইনিংস সামলানো এবং বড় রান তোলা কঠিন হয়ে পড়ে। পার্টনারশিপ দরকার ছিল। একজন ব্যাটসম্যানকে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে হতো।”

Advertisements

অশ্বনী কুমারের বিধ্বংসী বোলিং

ম্যাচে কেকেআরের ধসের পিছনে মূল ভূমিকা পালন করেন মুম্বইয়ের ২৩ বছর বয়সী বাঁহাতি পেসার অশ্বনী কুমার। তার প্রথম বলেই আউট হন অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে (১১)। এরপর তিনি রিঙ্কু সিং (১৭), ইমপ্যাক্ট সাব মনীশ পান্ডে (১৭) এবং আন্দ্রে রাসেলের (৫) মতো গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়ে কেকেআরের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। দীপক চাহার (২/১৯) এবং ট্রেন্ট বোল্ট (১/২৩) পাওয়ারপ্লেতে প্রাথমিক ধাক্কা দেওয়ার পর অশ্বনী তার ঝড়ো বোলিং দিয়ে কেকেআরকে আর ফিরতে দেননি। এই পারফরম্যান্সের মাধ্যমে তিনি আইপিএল অভিষেকে চার উইকেট নেওয়া প্রথম ভারতীয় বোলার হিসেবে ইতিহাস গড়েন।

কেকেআরের শুরুটা ছিল ভয়াবহ। প্রথম দুই ওভারে ওপেনার কুইন্টন ডি কক (১) এবং সুনীল নারিন (০) আউট হন। পাওয়ারপ্লে শেষে কেকেআরের স্কোর ছিল ৪১/৪। ওয়াংখেড়ের তাজা উইকেটে নতুন বলে বাউন্স এবং সুইং ছিল, যার সুযোগ মুম্বইয়ের বোলাররা পুরোপুরি কাজে লাগায়। কেকেআর ব্যাটসম্যানদের অ্যাপ্লিকেশনের অভাব এই সুযোগকে আরও বাড়িয়ে দেয়। অঙ্গকৃষ রঘুবংশী ১৬ বলে ২৬ রান করে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন।

মুম্বইয়ের সহজ জয়

১১৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মুম্বই রায়ান রিকেলটনের অপরাজিত ৬২ রানের উপর ভর করে মাত্র ১২.৫ ওভারে জয় ছিনিয়ে নেয়। রিকেলটনের ইনিংসে ছিল ৫টি চার এবং ৩টি ছক্কা। রোহিত শর্মা ১৩ রান করে আউট হলেও, উইল জ্যাকস (১৮*) এবং সূর্যকুমার যাদব (১২*) অপরাজিত থেকে দলকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেন। কেকেআরের বোলাররা, বিশেষ করে স্পেন্সার জনসন, হর্ষিত রানা এবং বরুণ চক্রবর্তী, কোনো প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হন।

কেকেআরের ব্যাটিং ধসের বিশ্লেষণ

রাহানের মন্তব্য থেকে স্পষ্ট, কেকেআরের ব্যাটিং লাইনআপ এই ম্যাচে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ওয়াংখেড়ের উইকেটে বাউন্স এবং গতি থাকলেও, এটি ব্যাটিংয়ের জন্য অনুকূল ছিল। রাহানে মনে করেন, ১৮০-১৯০ রান হলে ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সম্ভব হতো। কিন্তু পাওয়ারপ্লেতে চার উইকেট হারানো এবং পরবর্তীতে কোনো বড় পার্টনারশিপ না গড়তে পারা কেকেআরের পরাজয় নিশ্চিত করে। রিঙ্কু সিং, আন্দ্রে রাসেলের মতো বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হওয়ায় দলের মধ্যে হতাশা আরও বেড়েছে।

অশ্বনী কুমারের উত্থান

এই ম্যাচে মুম্বইয়ের নায়ক ছিলেন অশ্বনী কুমার। পাঞ্জাবের এই তরুণ বোলার তার প্রথম আইপিএল ম্যাচেই ইতিহাস গড়ে ক্রিকেট বিশ্বে আলোড়ন তুলেছেন। তার বৈচিত্র্যময় বোলিং এবং চাপের মুখে শান্ত থাকার ক্ষমতা তাকে বিশেষ করে তুলেছে। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, “আমি শুধু উইকেটে বল করার চেষ্টা করেছি। হার্দিক ভাই আমাকে সাহস দিয়েছেন।” তার এই পারফরম্যান্স মুম্বইকে মরশুমের প্রথম জয় এনে দিয়েছে এবং তাকে ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

কেকেআরের চ্যালেঞ্জ

ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে কেকেআরের এই হার তাদের সমর্থকদের মনে হতাশা জন্ম দিয়েছে। এই মরশুমে একটি জয় এবং দুটি হার নিয়ে তারা পয়েন্ট টেবিলে পিছিয়ে পড়েছে। রাহানের নেতৃত্বে ব্যাটিংয়ে দুর্বলতা এবং বোলিংয়ে অক্ষমতা দলের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী ম্যাচগুলোতে ফিরে আসতে হলে তাদের দ্রুত পরিকল্পনা করতে হবে। রাহানে বলেন, “আমাদের শিখতে হবে এবং দ্রুত ফিরে আসতে হবে।” তবে, এই ব্যর্থতা দলের আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানতে পারে।

মুম্বইয়ের প্রত্যাবর্তন

অন্যদিকে, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এই জয়ের মাধ্যমে তাদের মরশুমের প্রথম পয়েন্ট অর্জন করেছে। প্রথম দুই ম্যাচে হারের পর এই জয় তাদের মনোবল বাড়িয়েছে। হার্দিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বে দলটি এখন নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। রিকেলটনের ফর্ম এবং অশ্বনী কুমারের উত্থান মুম্বইকে শিরোপার দৌড়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে।

এই ম্যাচ কেকেআরের জন্য একটি শিক্ষা এবং মুম্বইয়ের জন্য একটি প্রেরণা। অশ্বনী কুমারের ঝড়ো অভিষেক আইপিএল ২০২৫-কে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলেছে। কেকেআরের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ—তারা কি এই হার থেকে শিক্ষা নিয়ে ফিরে আসতে পারবে? অন্যদিকে, মুম্বই কি এই গতিকে ধরে রাখতে পারবে? সময়ই এর উত্তর দেবে। তবে, এই ম্যাচ ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে দীর্ঘদিন মনে থাকবে।