ভারতীয় ফুটবলে সংকট! আইএসএল ২০২৫-২৬ মরশুম নিয়ে অনিশ্চয়তায় কল্যাণ

ISL 2025-26 Crisis: ভারতীয় ফুটবল বর্তমানে একটি গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের (এআইএফএফ) সভাপতি কল্যাণ চৌবে এই সংকটের জন্য “কিছু স্বঘোষিত…

AIFF President Kalyan Chaubey Addresses ISL 2025-26 Crisis

ISL 2025-26 Crisis: ভারতীয় ফুটবল বর্তমানে একটি গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের (এআইএফএফ) সভাপতি কল্যাণ চৌবে এই সংকটের জন্য “কিছু স্বঘোষিত সংস্কারকদের স্বার্থপরায়ণ উদ্দেশ্য”কে দায়ী করেছেন। রবিবার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি ভারতের শীর্ষ ফুটবল লিগ, ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল)-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেন। গত ১১ জুলাই ফুটবল স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (এফএসডিএল), যারা আইএসএল আয়োজনের জন্য এআইএফএফ-এর আর্থিক অংশীদার, ২০২৫-২৬ মরশুমকে “স্থগিত” রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পেছনে মূল কারণ হলো ২০১০ সালে এআইএফএফ-এর সঙ্গে স্বাক্ষরিত মাস্টার রাইটস এগ্রিমেন্ট (এমআরএ)-এর নবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা। এই সিদ্ধান্তের ফলে তিনটি ক্লাব—চেন্নাইয়িন এফসি, বেঙ্গালুরু এফসি এবং ওড়িশা এফসি—হয় প্রথম দলের কার্যক্রম স্থগিত করেছে, নয়তো খেলোয়াড় ও স্টাফদের বেতন বন্ধ করেছে।

কল্যাণ চৌবে পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এটা সত্য যে আমরা একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, যার জন্য আমরা দায়ী নই। কিছু স্বার্থপরায়ণ সংস্কারক এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আমি বিশ্বাস করি, ঈশ্বরের কৃপায় আমরা সকলে মিলে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব।” তিনি আরও জানান, এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তবে তিনি এই সংকটের জন্য কাউকে সরাসরি দায়ী করেননি, বরং পরোক্ষভাবে কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।

   

আইএসএল-এর ১৩টি ক্লাবের মধ্যে ১১টি—বেঙ্গালুরু এফসি, মুম্বই সিটি এফসি, মহমেদান এসসি, এফসি গোয়া, পাঞ্জাব এফসি, নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি, কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি, চেন্নাইয়িন এফসি, হায়দ্রাবাদ এফসি, ওড়িশা এফসি এবং জামশেদপুর এফসি—এআইএফএফ-এর কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছে যে, ভারতীয় ফুটবলের বর্তমান পরিস্থিতি সুপ্রিম কোর্টের নজরে না আনলে তারা নিজেরা আইনি পথে যাবে। এই চিঠিতে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এবং ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের স্বাক্ষর ছিল না। চৌবে এই চিঠি পাওয়ার বিষয়ে অবাক হয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, “৭ আগস্ট দিল্লিতে ১৩টি ক্লাবের সিইওদের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। তাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই চিঠি পাওয়া আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। এই ধরনের যোগাযোগ এড়ানো যেত।” তিনি আরও জানান, এআইএফএফ ফুটবলের উন্নয়নের জন্য সবকিছু করবে, যার মধ্যে খেলোয়াড়দের জন্য ম্যাচের সময় নিশ্চিত করাও রয়েছে।

এআইএফএফ কি এককভাবে আইএসএল আয়োজন করতে পারবে? এই প্রশ্নের উত্তরে চৌবে বলেন, “সব বিকল্পই খোলা আছে। তবে, সকল স্টেকহোল্ডারদের সম্মিলিত চুক্তি এবং সিদ্ধান্তই ভালো হবে।” তিনি ক্লাবগুলোর সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার অনুরোধকেও উড়িয়ে দেননি। তিনি জানান, “আমরা এই সম্ভাবনার উপর আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। এরপর আমরা আবার ক্লাবগুলোর সঙ্গে বৈঠক করতে পারি, তবে তা ১৭ আগস্টের পরেই হবে।” তিনি আরও বলেন, “এটি আমাদের কার্যনির্বাহী কমিটির তৃতীয় বছর, এবং প্রথমবারের মতো সব ক্লাবের সিইওরা আমাদের সঙ্গে একত্রে বৈঠক করেছেন। আমরা তাদের স্বাগত জানিয়েছি এবং পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করেছি।”

Advertisements

আইএসএল-এর ইতিবাচক প্রভাবের কথা উল্লেখ করে চৌবে বলেন, “এই লিগ ভারতীয় ফুটবলে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। স্টেডিয়ামের অবকাঠামো, খেলার মাঠ, খেলোয়াড়দের বেতন, প্রযোজনা ও সম্প্রচার, মানসম্পন্ন বিদেশি কোচ ও খেলোয়াড়, আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব এবং ক্রিকেট ও সিনেমা জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে ব্র্যান্ডের উন্নতি হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, যদি এই বিনিয়োগ অব্যাহত থাকে এবং যুব উন্নয়নের উপর জোর দেওয়া হয়, তবে আগামী ১০ বছরে ভারতীয় জাতীয় দলের র‍্যাঙ্কিং এবং পারফরম্যান্স উন্নত হবে।”

২০২৪-২৫ মরশুমের আইএসএল গত ২১ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছিল। বর্তমানে ডুরান্ড কাপ ২০২৫ নকআউট পর্যায়ে রয়েছে, তবে আইএসএল-এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত থাকায় ক্লাবগুলো দল গঠন নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে। এআইএফএফ এবং এফএসডিএল-এর মধ্যে এমআরএ নবায়ন নিয়ে আলোচনা ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছিল, কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এআইএফএফ কোনো নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে, ১১টি ক্লাবের চিঠি এআইএফএফ-এর উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। তারা জানিয়েছে, “এই আইনি অনিশ্চয়তা এবং প্রশাসনিক শূন্যতা ভারতীয় ফুটবল ইকোসিস্টেমে অপূরণীয় ক্ষতি করতে পারে। ক্লাবগুলো পরিকল্পনা বা বিনিয়োগ করতে পারছে না, বাণিজ্যিক চুক্তি স্থগিত রয়েছে, এবং হাজার হাজার খেলোয়াড়, স্টাফ এবং স্টেকহোল্ডারদের জীবিকা ঝুঁকির মুখে।”

এআইএফএফ ৭ আগস্ট জানিয়েছিল, সুপার কাপের তারিখ চূড়ান্ত করতে ক্লাবগুলোর সঙ্গে আরেকটি বৈঠক হবে, যা সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে পারে। এটি খেলোয়াড়দের প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের সুযোগ দেবে। চৌবে জানান, আইএসএল-এর ফরম্যাট বা সময়সূচীতে পরিবর্তন আনা হতে পারে। তবে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। এই সংকটের মধ্যে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এবং ইস্টবেঙ্গলের মতো ক্লাবগুলো চিঠিতে স্বাক্ষর না করায় ভারতীয় ফুটবলে বিভাজনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এআইএফএফ-এর পরবর্তী পদক্ষেপ এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।