সুনীল ছেত্ৰীরা (Sunil Chhetri) আজ শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের (Bangladesh) বিরুদ্ধে এএফসি এশিয়ান কাপ (AFC Asian Cup 2027 Qualifiers) ২০২৭ কোয়ালিফায়ারের গ্রুপ সি-র প্রথম ম্যাচে মাঠে নামছে। ব্লু টাইগার্স তাদের কোয়ালিফায়ার অভিযান একটি দুর্দান্ত শুরু দিয়ে শুরু করতে মরিয়া। সম্প্রতি মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ৩-০ গোলের জয়ের পর আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ভারতীয় ফুটবল দল (India Football Team)। ওই ম্যাচে রাহুল ভেকে, লিস্টন কোলাসো এবং সুনীল ছেত্রী হেড করে গোল করেছিলেন। এই জয় ছিল ম্যানোলো মার্কুয়েজ (Manolo Marquez) অধীনে ভারতের পাঁচ ম্যাচে প্রথম জয় এবং ৪৮৯ দিনের জয়হীন রেকর্ডের অবসান। এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই ফর্ম ধরে রাখতে চায় তারা।
ভারত ও বাংলাদেশ শেষবার মুখোমুখি হয়েছিল ২০২১ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধনী ম্যাচে। সেই ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল, যেখানে বাংলাদেশের ইয়াসিন আরাফাত ৭৪ মিনিটে একটি অপ্রত্যাশিত গোল করে সমতা ফিরিয়েছিলেন। এবার বাংলাদেশ, যারা বেঙ্গল টাইগার্স নামে পরিচিত, ২০২৫ সালে তাদের প্রথম জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে। তাদের দলে নতুন সংযোজন প্রাক্তন প্রিমিয়ার লিগ মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী এই ম্যাচে তাদের সম্ভাবনাকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।
৪০ বছর বয়সী প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী, যিনি সম্প্রতি মালদ্বীপের বিরুদ্ধে জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, আজকের ম্যাচে খেলবেন বলে আশা করা হচ্ছে। মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ম্যাচটি কার্যত সুনীলের জন্য একটা ওয়ার্ম আপ ছিল বলাই বাহুল্য। সুনীল ছেত্রীর কামব্যাক এই বাংলাদেশ ম্যাচ লক্ষ্য করে তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। বিশেষ করে ভারত বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্ককে কেন্দ্র করে ভারত কখনোই এই ম্যাচটিকে হালকা ভাবে নেয়নি। তাই জেতার জন্য সুনীল যে ব্রহ্মহাস্ত্র তা বুঝেই তাকে কামব্যাক করিয়েছেন মার্কুয়েজ।
সুনীল ছেত্রী গত ১৯ মার্চ মালদ্বীপের বিপক্ষে তিনি তাঁর ৯৫তম আন্তর্জাতিক গোলটি করেছেন এবং তাঁর পুরনো ফর্মে ফিরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এখন তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ গোলের জন্য মুখিয়ে আছেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১০০ গোলের মাইলফলক থেকে তিনি মাত্র পাঁচ গোল দূরে। এই ম্যাচ তাঁর জন্য সেই লক্ষ্যের দিকে আরেকটি পদক্ষেপ হতে পারে। ছেত্রীকে তাঁর সেরা ছন্দে থাকতে হবে যদি তিনি ভারতকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান।
২০২৭ সালে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিতব্য এএফসি এশিয়ান কাপে জায়গা করে নেওয়ার লক্ষ্যে ছেত্রী পুরো শক্তি নিয়ে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবেন। ভারতের দলের গুণমান বিবেচনা করলে, রেড অ্যান্ড গ্রিন নামে পরিচিত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের খুব বেশি কষ্ট না করেই জয় ছিনিয়ে নেওয়ার কথা। তবে বাংলাদেশের নতুন তারকা হামজা চৌধুরী এই ম্যাচটিকে সহজ করে দেবেন না। শেফিল্ড ইউনাইটেডের এই মিডফিল্ডার, যিনি লিসেস্টার সিটির হয়ে প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন, বাংলাদেশের মধ্যমাঠে শক্তি ও গতি যোগ করেছেন। তাঁর উপস্থিতি বাংলাদেশকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।
ভারত বর্তমানে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১২৬তম স্থানে রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ ১৮৫তম। দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ের রেকর্ডেও ভারত এগিয়ে—২৮টি ম্যাচের মধ্যে ভারত ১৪টিতে জিতেছে, বাংলাদেশ ৪টিতে এবং ১০টি ড্র হয়েছে। বাংলাদেশের শেষ জয় এসেছিল ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে। ভারতের মাটিতে তারা কখনোই ব্লু টাইগার্সকে হারাতে পারেনি। তবে এবার হামজার উপস্থিতি এই ম্যাচে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
ম্যানোলো মার্কেজের দল গত সপ্তাহে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে দাপট দেখিয়েছে। তিনটি হেডার গোলের মাধ্যমে তারা সেট-পিসে তাদের শক্তি প্রমাণ করেছে। রাহুল ভেকে এবং সুনীল ছেত্রীর মতো খেলোয়াড়দের উঁচুতে বল ধরার ক্ষমতা ভারতের জন্য বড় সম্পদ। মার্কেজ এই ম্যাচেও সেট-পিস থেকে গোলের আশা করছেন। তবে দলে কিছু চোটের সমস্যা রয়েছে। ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ মালদ্বীপ ম্যাচে চোট পেয়েছেন এবং এই ম্যাচে খেলতে পারবেন না। তাঁর জায়গায় উদান্ত সিং এবং ম্যাকার্টন নিকসন দলে যোগ দিয়েছেন।
বাংলাদেশের কোচ জাভিয়ের ক্যাবরেরা তাঁর দলের প্রস্তুতি নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। হামজা ছাড়াও দলে জামাল ভূঁইয়া এবং তারিক কাজির মতো ইউরোপে জন্ম নেওয়া খেলোয়াড় রয়েছেন, যারা দলের শক্তি বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ২০২৪ সালে বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে ব্যর্থ হলেও, বছরের
শেষে দুটি প্রীতি ম্যাচ জিতে ফিরেছে। তারা ভারতের বিরুদ্ধে চমক দেখাতে চাইবে।
ছেত্রীর জন্য এই ম্যাচটি শুধু দলের জয়ের জন্যই নয়, ব্যক্তিগত মাইলফলকের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ১০০ গোলের স্বপ্ন তাঁকে আরও উদ্বুদ্ধ করবে। ভারত যদি তাদের গুণমান কাজে লাগাতে পারে, তবে তারা বাংলাদেশকে হারিয়ে গ্রুপে শীর্ষে থাকার দাবি জানাতে পারবে। তবে হামজা চৌধুরীর উপস্থিতি এই লড়াইকে কঠিন করে তুলতে পারে। শিলংয়ে আজকের এই ম্যাচটি দুই দলের জন্যই একটি বড় পরীক্ষা হতে চলেছে।