AFC Asian Cup: মোহনবাগানের এই পাঁচ ফুটবলারই এখন জাতীয় কোচ স্টিমাচের তুরুপের তাস

একটা সময় জাতীয় দলে দাপাদাপি ছিল মোহন-ইস্ট ফুটবলারদের। প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ ফুটবলারই কলকাতার দুই প্রধানের প্রতিনিধিত্ব করতেন। যার মধ্যে আবার আধিক্য ছিল বাঙালি ফুটবলারদেরই। আসলে…

Igor Stimac

একটা সময় জাতীয় দলে দাপাদাপি ছিল মোহন-ইস্ট ফুটবলারদের। প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ ফুটবলারই কলকাতার দুই প্রধানের প্রতিনিধিত্ব করতেন। যার মধ্যে আবার আধিক্য ছিল বাঙালি ফুটবলারদেরই। আসলে দেশের ফুটবল বলতে তখন বাংলাকেই ধরা হত। এখন সেই গৌরব অনেকটাই মলিন। তবে দুই প্রধানের না হলেও, এটিকে মোহনবাগান (Mohun Bagan) সমর্থকরা গর্ব করে বলতেই পারেন, ভারতীয় দলের প্রথম এগারোয় অর্ধেক খেলোয়াড়ই তাঁদের ক্লাবের ফুটবলার।

আসন্ন এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের আগে ভারতীয় কোচ ইগর স্টিমাচ তাঁর দলের রক্ষণ ও আক্রমণ বিভাগের খুঁটিনাটি নিয়ে যতই চিন্তায় থাকুন, সবুজ-মেরুন শিবিরের পাঁচ খেলোয়াড়কে ছাড়া তাঁর পক্ষে দল নামানো বেশ কঠিন। রক্ষণের তিন প্রহরী প্রীতম কোটাল, সন্দেশ ঝিঙ্গন ও শুভাশিস বোস এবং আক্রমণ বিভাগে লিস্টন কোলাসো ও মনবীর সিংকে মাঠের বাইরে রেখে তিনি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের তিনটি ম্যাচে দল নামাবেন বলে মনে হয় না।

afc asian cup india

গত মাসের শেষে জর্ডনের বিরুদ্ধে শেষ ফ্রেন্ডলি ম্যাচে কোলাসোকে চোটের জন্য নামাতে পারেননি ভারতীয় কোচ। কিন্তু প্রথম এগারোয় ছিলেন বাকি চারজনই। তার আগেই এএফসি কাপের গ্রুপ লিগে পরপর ম্যাচ খেলেছিলেন সবুজ মেরুন শিবিরের এই তারকারা। ফলে ভারতীয় দলের প্রস্তুতি শিবিরে থাকতে পারেননি কেউই। ভারতীয় দলের সতীর্থদের সঙ্গে বোঝাপড়া তৈরির জন্য একসঙ্গে যেটুকু অনুশীলন প্রয়োজন ছিল, তার ছিটেফোঁটাও করতে পারেননি তাঁরা। সে জন্যই স্টিমাচ সাংবাদিকদের কাছে বলেছিলেন, ‍‘এটিকে মোহনবাগানের ফুটবলাররা যেহেতু দলের সঙ্গে পরে যোগ দেবে, তাই ওদের এই ম্যাচে মাঠে নামাব কি না, তা পরে ভেবে দেখব।’

স্টিমাচের এই ইঙ্গিতে একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়, সবুজ-মেরুন শিবিরের ফুটবলারদের সম্ভবত খেলাবেন না ভারতীয় কোচ। কিন্তু দেখা যায় ম্যাচের প্রথম এগারোয় সন্দেশ, প্রীতম, শুভাশিসরা যেমন রয়েছেন, তেমনই আক্রমণে মনবীরকে রাখা হয়। হাল্কা চোটের জন্য কোলাসোকে বিশ্রাম দেওয়া হয়। তিনি ফিট থাকলে হয়তো তাঁকেও প্রথম এগারোয় রাখা হত। মার্চে বেলারুশের বিরুদ্ধে ০-৩-এ হারা ম্যাচেও প্রীতম, সন্দেশ ও মনবীরকে খেলান স্টিমাচ। সেই ম্যাচে কোলাসো ও শুভাশিসকে চোটের জন্য পাননি ক্রোট কোচ। সেই সফরের প্রথম ম্যাচে অবশ্য বাহরিনের বিরুদ্ধে পাঁচজনই প্রথম এগারোয় ছিলেন।

Pritam Kotal and Shubhashis

এই তিন ম্যাচেই ভারত হারায় এটিকে মোহনবাগানের পাঁচ তারকার পারফরম্যান্স নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। কয়েকজন ফুটবল বিশেষজ্ঞের মতে, ক্লাব দলে যে ভূমিকা পালন করেন এই পাঁচ ফুটবলার, ভারতীয় দলের হয়ে খেলার সময় তাঁরা সব সময় এই ভূমিকা পালন করার সুযোগ পান না। ফলে তাঁদের মানিয়ে নিতে কিছুটা হলেও সমস্যা হয়। এ কথা যদিও প্রীতম বা সন্দেশের ক্ষেত্রে তেমন ভাবে প্রযোজ্য নয়। তবে শুভাশিস, কোলাসো ও মনবীরকে প্রায়ই এই সমস্যায় পড়তে হয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও এই ফুটবলাররা নিজেরা কখনও এই সমস্যার কথা বলেননি। পেশাদার ফুটবলার হিসেবে তাঁরা যে কোনও জায়গায় খেলতে তৈরি।

আসন্ন এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বেও দলের স্টপার হিসেবে সন্দেশ ও প্রীতম যেমন অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন, তেমনই সাইড ব্যাক বা উইঙ্গার হিসেবে যে কোনও কোচই শুভাশিসকে শুরু থেকে নামাতে চাইবেন। আর লিস্টন কোলাসো যে দলে থাকেন ও তিনি যদি ফিট থাকেন, তা হলে সেই দলের আক্রমণ বিভাগে তিনি এক নম্বর বাছাই হয়ে উঠবেনই। যে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে উইং দিয়ে বল নিয়ে উঠে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে কঠিন জায়গা থেকে জালে বল জড়িয়ে দেন তিনি, তা যে কোনও গোলকিপারের কাছেই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে। তবে মনবীর গোলের সামনে আরও নিখুঁত ও কার্যকরী হয়ে না উঠতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে তাঁকে ভারতীয় তথা ক্লাব দলে সুযোগ খোয়াতে হতে পারে।

আসলে মনবীর গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হলেও গোলের সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে কিন্তু যথেষ্ট পারদর্শী। বাগানের কোচ হুয়ান ফেরান্দো যেমন বলেন, ‍‘একজন ফরোয়ার্ডকে যে সবসময় গোল করেই কার্যকরী হয়ে উঠতে হবে, তার কোনও মানে নেই। গোলের সুযোগ তৈরি করাটাও তাঁর কাজ। সে দিক থেকে মনবীর যথেষ্ট কার্যকরী।’ স্টিমাচ তাঁর সঙ্গে একমত। সেই কারণেই গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলেও নিয়মিত তাঁকে প্রথম দলে রাখেন। ভারতীয় দল যখন আক্রমণে উঠছে এবং প্রতিপক্ষ যখন ভারতীয়দের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে দ্রুত কাউন্টার অ্যাটাকে উঠছে, তখন ডিফেন্ডাররা নিজেদের ঘর সামলানোর জন্য প্রতিপক্ষের গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নেমে আসতে পারছেন না। স্টিমাচের মতো এই সমস্যা এটিকে মোহনবাগান কোচেরও যথেষ্ট দুশ্চিন্তার কারণ। এই ডিফেন্ডাররা যে ফেরান্দোর দলেরও ঘর সামলান।

ছোটখাটো খামতিগগুলো কতটা শোধরানো গেল, সেটা একটা বড় প্রশ্ন, যার উত্তর ম্যাচে পাওয়া যাবে। তবে মোহনবাগানের ফুটবলারদের ওপর যে তাঁকে আস্থা রাখতেই হবে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।