গ্যালারি পর্যন্ত পৌঁছতে না পারা হাততালিতেই সুপারম্যান বিদায়

দুটো পাশাপাশি ছবি। বৃহস্পতিবারের সকাল। কিন্তু, কত-কত পার্থক্য! দিল্লির ফিরোজ শা কোটলায় দিল্লির হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে খেলতে নামলেন বিরাট কোহলি। প্রায় এক যুগ পরে। সকাল…

Wriddhiman Saha's Last Ranjit Trophy Match at Eden Gardens

দুটো পাশাপাশি ছবি। বৃহস্পতিবারের সকাল। কিন্তু, কত-কত পার্থক্য! দিল্লির ফিরোজ শা কোটলায় দিল্লির হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে খেলতে নামলেন বিরাট কোহলি। প্রায় এক যুগ পরে। সকাল থেকেই ভাইরাল হল ছবিগুলো। বিরাটের খেলা দেখার জন্য স্টেডিয়ামের বাইরে লম্বা থেকে লম্বা লাইন! একটা সময়ে পরিস্থিতি এমন জায়গায় চলে গেল যে, পদপিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়ে গিয়েছিল! আর একটা ছোটখাটো কুম্ভমেলা ফিরে এলে অবাক হওয়ার কিছু ছিল না!

জাম্পকাট করে চলে আসুন ইডেন গার্ডেন্সে। সেই বৃহস্পতিবারের সকাল। সেই রঞ্জি ট্রফি। সেই বাইশ গজের যুদ্ধ। যেখানে, জীবনের শেষবারের মতো খেলতে নামলেন ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha)। পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে এই ম্যাচের পরেই তিনি তুলে রাখবেন ব্যাট-প্যাড।

   

সেখানে! ইডেন গার্ডেন্সের গ্যালারিতে সারা দিনে হাতে গোনা সত্তর-আশিজন দর্শক। কর্মকর্তা-পুলিশ মিলিয়ে বড়জোড় দুশো! ম্যাচের আগে দু’ধারে লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকা টিমের গার্ড অফ অনার। সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় শাল এবং উত্তরীয় দিয়ে জানালেন সম্মান। একটু হাততালি। ব্যাস, এটুকুই।

কেন? ঋদ্ধিমানের এই শেষ ম্যাচকে কি আরও একটু স্মরণীয় করে রাখা যেত না? আরও একটু অন্যরকম ভাবনা-চিন্তা করতে পারত না সিএবি? কথা উঠতে পারে ঋদ্ধিমান সাহা আর বিরাট কোহলি কি এক হল? বিরাটকে দেখতে ধুন্ধুমার হবে, এটাইতো স্বাভাবিক!’ ঠিক। বিরাট এবং ঋদ্ধিমান দু’জনেই দেশের হয়ে খেললেও খ্যাতি বা সাফল্যে কখনওই এক নয়। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর শেষ ম্যাচ ইডেনে খেললেও গ্যালারি উপচে পড়ত। কারণ, সৌরভের মত বাঙালি ক্রিকেটার আর জন্মাবে না। কিন্তু বিরাটের জন্য আয়োজন করেছে তার রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা। বিসিসিআই করেনি। সেখানে সিএবি কিছুই করল না। কথায় বলে বাংলা আজ যা ভাবে দেশ কাল করে। সেই ভাবনাটাও ভাবতে পারলেন না সিএবি কর্তারা। ‘করা তো দূর কি বাত’।

ঋদ্ধিমান সাহা বাংলার ঘরের ছেলে। অন্য রাজ্য থেকে এসে বাংলার হয়ে খেলেনি। কিংবদন্তি পঙ্কজ রায়ের পরে এবং ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা নক্ষত্র সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পরে ৪০ টেস্ট খেলা ক্রিকেটার আর কে আছেন? ঋদ্ধিমান সাহা ছাড়া?

ক্রিকেট বোদ্ধারা বলছেন, বাংলা টিমের যা অবস্থা, আগামী দশকে ৪০ টেস্ট তো ছেড়ে দিন, পাঁচটা টেস্ট খেলা বাঙালি ক্রিকেটারও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাই প্রশ্ন উঠছে ঋদ্ধিমান সাহার জন্য আরও একটু কি ঝাঁপাতে পারত না সিএবি! আরও একটু ভালোভাবে প্রচার তো করাই যেত। সবাইকে আমন্ত্রণ জানানোই যেত। বিভিন্ন ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্পের ছাত্রদের এনে বলা যেত যে, ‘ওই দ্যাখো ঋদ্ধিমান সাহা। শিলিগুড়ি থেকে উঠে এসে দেশের অন্যতম সেরা উইকেটকিপার হয়েছেন। তোমাদেরও একদিন ও রকম হতে হবে।’ কারণ, বাংলা থেকে ঋদ্ধিমান সাহার মতো ক্রিকেটার কিন্তু রোজ অবসর নেবেন না।

একটা ফুলের তোড়া আর মাঠ থেকে গ্যালারি পর্যন্ত পৌঁছতে না পারা হাততালির শব্দেই শেষ হয়ে গেল সব কিছু!