ভারতের মহিলাদের টি-২০ বিশ্বকাপের (T20 World Cup) সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন বড়সড় ধাক্কা খেল, যখন হরমনপ্রীত কৌরের নেতৃত্বাধীন দল গ্রুপ ‘এ’-র শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৯ রানে পরাজিত হল। এই পরাজয়ের ফলে ভারতের সেমিফাইনালে পৌঁছানোর আশা এখন অন্য দলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যদিও ভারত গ্রুপ ‘এ’-তে অস্ট্রেলিয়ার পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, সেমিফাইনালে পৌঁছানোর জন্য ভারতকে অপেক্ষা করতে হবে নিউ জিল্যান্ড এবং পাকিস্তানের ম্যাচের ফলাফলের উপর।
পাকিস্তান যদি নিউ জিল্যান্ডকে পরাজিত করে, তবে ভারত সেমিফাইনালে যেতে পারে, তবে শর্ত থাকে যে পাকিস্তান বড় ব্যবধানে জয়লাভ করতে পারবে না। বড় ব্যবধানে পাকিস্তানের জয় হলে, ফাতিমা সানার নেতৃত্বাধীন দল সরাসরি সেমিফাইনালে পৌঁছে যাবে।
ভারতের এই পরাজয়ের পর, ভারতীয় ক্রিকেটার পুনম রাউতের একটি পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। পুনম রাউত ২০১৭ সালে ভারতের মহিলাদের বিশ্বকাপ ফাইনালের রানার্স-আপ দলের সদস্য ছিলেন এবং হরমনপ্রীতের সঙ্গে বহু ম্যাচ খেলেছেন। রাউত তার পোস্টে লেখেন, “১০০টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা থাকা মানে ০ অভিজ্ঞতা.. যদি তা বড় ম্যাচে কাজে না আসে।” তার এই পোস্টের পর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে, এবং অনেকে অনুমান করছেন যে এই পোস্টের লক্ষ্যবস্তু কে।
হরমনপ্রীতের হতাশা: সুযোগ হাতছাড়া এবং বড় ম্যাচে ব্যর্থতা
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতীয় দলের এই হতাশাজনক পরাজয়ের পর, হরমনপ্রীত কৌর তার হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে তার এবং দীপ্তি শর্মার মধ্যে ৬৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ পার্টনারশিপ হলেও তারা সুযোগগুলোকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেননি। তিনি বলেন, “আমরা যখন ব্যাট করছিলাম, কিছু সহজ বল মারতে পারিনি। আমরা অস্ট্রেলিয়া থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। যা কিছু আমাদের হাতে ছিল, আমরা তা করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না।”
হরমনপ্রীত এবং দীপ্তি শর্মার জুটি ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিল এবং ভারত জয়ের পথে ছিল। তবে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৪ রান প্রয়োজন ছিল। কিন্তু অ্যানাবেল সাদারল্যান্ডের শেষ ওভারে ভারতের চারটি উইকেট পড়ে যায়, যার মধ্যে দুটি রান আউট ছিল। এর ফলে ভারত জয়ের কাছাকাছি গিয়েও ব্যর্থ হয়।
পুনম রাউতের তির্যক মন্তব্য: অভিজ্ঞতার অভাব?
ভারতের এই পরাজয়ের পর পুনম রাউতের মন্তব্য বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। “১০০টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা থাকা মানে ০ অভিজ্ঞতা.. যদি তা বড় ম্যাচে কাজে না আসে”—রাউতের এই পোস্টে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে হয়তো দলের কিছু সদস্য বড় ম্যাচে অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও রাউত সরাসরি কারো নাম উল্লেখ করেননি, তবে তার এই মন্তব্য দলের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, পুনমের পোস্টটি ঠিক কাকে লক্ষ্য করে ছিল। দলের সিনিয়র সদস্যদের দায়িত্ব এবং অভিজ্ঞতা বড় ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এমন পরিস্থিতিতে রাউতের এই মন্তব্য ইঙ্গিতবাহী এবং তা দলের ভেতরের উত্তেজনার প্রকাশ হতে পারে।
Having 100 matches experience = 0 experience..
if it’s can’t be applied in big games.— Punam Raut (@raut_punam) October 14, 2024
ভারতের চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
হরমনপ্রীত কৌরের দলের এই পরাজয় ভারতের জন্য কঠিন সময় বয়ে এনেছে। অস্ট্রেলিয়া যে অত্যন্ত অভিজ্ঞ এবং প্রতিযোগিতামূলক দল, তা হরমনপ্রীত নিজেই স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “তাদের পুরো দলই পারফর্ম করে; তারা কয়েকজন খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভর করে না, তাদের অনেক অলরাউন্ডার রয়েছে যারা দলকে সাহায্য করে। তারা সহজে রান দেয়নি এবং আমাদের জন্য ম্যাচটি কঠিন করে তুলেছে।”
ভারতীয় দলের ব্যাটিং লাইনআপের ব্যর্থতা এবং গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে চাপ সামলাতে না পারা ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলির মধ্যে একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, মধ্য ওভারে স্কোরিং রেট কমে যাওয়া এবং ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞতা বড় পার্থক্য গড়ে দেয়।
যদিও ভারতীয় দল এখনও সেমিফাইনালের দৌড়ে আছে, তবে তাদের জন্য কাজ কঠিন হয়ে পড়েছে। পাকিস্তান যদি নিউ জিল্যান্ডকে পরাজিত করে এবং বড় ব্যবধানে না জেতে, তাহলে ভারত সেমিফাইনালে যেতে পারবে। কিন্তু, পাকিস্তান বড় ব্যবধানে জয়লাভ করলে তাদের সেমিফাইনালে ওঠা কঠিন হয়ে যাবে।
ভারতীয় দল একটি কঠিন সময় পার করছে এবং পুনম রাউতের তির্যক মন্তব্য পরিস্থিতির জটিলতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। দলকে এখন ভবিষ্যতের জন্য নতুন পরিকল্পনা এবং কৌশল নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। হরমনপ্রীত কৌরের নেতৃত্বে ভারতীয় দল যদি বড় ম্যাচগুলিতে অভিজ্ঞতা এবং চাপ সামলাতে সক্ষম হয়, তবে তারা ভবিষ্যতে আরও ভালো ফলাফল করতে পারবে।