Earth-Sun Distance: পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব, যা গড়ে প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার (বা ১ অ্যাস্ট্রোনমিকাল ইউনিট), মাপার জন্য কোন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে জানেন? এই পরিমাপ করার উল্লেখযোগ্য একটি পদ্ধতি হল পারাল্যাক্স মেথড এবং কেপলারের সূত্র। এখানে এই মাপার পদ্ধতির একটি সারসংক্ষেপ দেওয়া হল।
১. পারাল্যাক্স পদ্ধতি:
প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিদরা পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থেকে সূর্যের কাছাকাছি কোনও গ্রহ (যেমন শুক্র বা মঙ্গল) পর্যবেক্ষণ করতেন। একই বস্তুকে ভিন্ন অবস্থান থেকে দেখলে তার আপাত অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন ঘটে, যা পারাল্যাক্স এফেক্ট নামে পরিচিত। এই পারাল্যাক্স কোণটি (গ্রহের অবস্থানের পরিবর্তন) পরিমাপ করে জ্যোতির্বিদরা ত্রিকোণমিতি ব্যবহার করে গ্রহের দূরত্ব নির্ণয় করতেন। এরপর কেপলারের সূত্র ব্যবহার করে গ্রহ এবং সূর্যের দূরত্ব থেকে পৃথিবী-সূর্যের দূরত্ব নির্ণয় করা হয়।
২. ট্রানজিট পদ্ধতি:
১৭৬১ এবং ১৭৬৯ সালে শুক্র গ্রহ যখন সূর্যের সামনে দিয়ে অতিক্রম করছিল, তখন বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর ভিন্ন স্থান থেকে এই ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করেন। শুক্র গ্রহের ট্রানজিট থেকে গ্রহটির গতির উপর ভিত্তি করে সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যবর্তী দূরত্ব হিসাব করা হয়।
৩. কেপলারের সূত্র:
জোহানেস কেপলার গ্রহগুলোর গতির ওপর ভিত্তি করে সূত্র প্রণয়ন করেছিলেন। কেপলারের তৃতীয় সূত্রে বলা হয়, একটি গ্রহের কক্ষপথের গড় দূরত্ব (অ্যাস্ট্রোনমিকাল ইউনিট) এবং তার কক্ষপথ সম্পন্ন করার সময়ের (অরবিটাল পিরিয়ড) মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে।
এই সূত্রের মাধ্যমে, অন্য গ্রহের কক্ষপথ এবং সময় থেকে পৃথিবী-সূর্যের দূরত্ব নির্ণয় করা সম্ভব হয়।
৪. রাডার পদ্ধতি:
আধুনিক যুগে, রাডার সিগন্যাল ব্যবহার করে কাছাকাছি গ্রহ (যেমন মঙ্গল বা শুক্র) পর্যন্ত সময় নির্ণয় করা হয়। আলো বা রাডার সিগন্যালের গতি জানা থাকায়, গ্রহের দূরত্ব থেকে কেপলারের সূত্র প্রয়োগ করে সূর্যের দূরত্ব বের করা সম্ভব হয়। প্রাচীন এবং আধুনিক পদ্ধতির সংমিশ্রণে বিজ্ঞানীরা পৃথিবী-সূর্যের দূরত্ব অত্যন্ত নির্ভুলভাবে মাপতে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমানে এই দূরত্ব প্রায় ১৪৯,৫৯৭,৮৭০.৭ কিলোমিটার হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।