Wooden satellite: চোখ ধাঁধানো জাপানি প্রযুক্তি, মহাকাশে যাবে কাঠের স্যাটেলাইট!

মেটালের ব্যবহার অনেক তো হল। এবার আকাশে যাবে কাঠের তৈরি স্যাটেলাইট। এমন ভাবনা নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন জাপানের কিছু বিজ্ঞানী। নাসার সাথে মিলে তারা বানাচ্ছেন…

মেটালের ব্যবহার অনেক তো হল। এবার আকাশে যাবে কাঠের তৈরি স্যাটেলাইট। এমন ভাবনা নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন জাপানের কিছু বিজ্ঞানী। নাসার সাথে মিলে তারা বানাচ্ছেন কাঠের তৈরি উপগ্রহ। মূলত আকাশের স্যাটেলাইটগুলো নানা ধরনের ধাতব পদার্থে তৈরি। অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার হয় বেশি কারণ সেটি হালকা,সস্তায় টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী। এইসব ধাতু কে সরিয়েই এবার কাঠের ব্যবহার হবে। আর এর পেছিনে আছে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ।

আমাদের বায়ুমন্ডল নানা স্তরে সাজানো থাকে। স্ট্র্যেটোস্ফিয়ার ঠিক তেমনই একটি স্তর। এই স্তরে আছে উপকারী সেই ওজ়োন লেয়ার যা আমাদের সকলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওজ়োন লেয়ার এক চাদরের মত জিনিস যা সূর্যের আলট্রা-ভাওলেট রস্মিকে পৃথিবীতে আসতে দেয় না। সূর্যের এই রস্মিটি মানুষের জন্য ক্ষতিকর। চোখ ও ত্বকের ক্ষতি করে থাকে। অন্ধত্ব, ক্যান্সারও হতে পারে সহজেই। অথচ যত স্যাটেলাইট চলে যায়, ওই ওজ়োনের স্তরকে মহা ঝুঁকিতে ফেলে। স্যাটেলাইটগুলো একসময় ধ্বংস হয়ে যায়। সেই ধ্বংসস্তুপ তখন বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়ে। এই স্তুপের মাঝে ধাতব কণা থাকে, সেগুলো পৃথিবীর ওজ়োন লেয়ারকে নষ্ট করতে পারে। এই চিন্তা থেকে আগামীদিনের স্যাটেলাইটে ধাতুর বদলে কাঠ ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কাঠ বায়োলজিক্যাল বস্তু। মহাকাশ থেকে ধ্বংস হয়ে বায়ুমণ্ডলে ঢুকে গেলে নানা প্রক্রিয়ায় কাঠ গ্যাসে পরিণত হয়। কিন্তু ধাতু পুরো উল্টো। বায়ুমন্ডলে সেটি রয়ে যায় সুক্ষ্ণ কণা হিসেবে। আর এই কণা গুলোই ওজ়োন স্তরের ক্ষতি করতে পারে। বছর চারেক ধরেই এই বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে জাপানে। কিউটো ইউনিভার্সিটির কোজি মোরাটা রয়েছেন এই কর্মযোগের পেছনে। ইতিমধ্যেই কাঠের নমুনা তারা আকাশে পাঠিয়ে দেখেছেন। এবারে বানাচ্ছেন পুরো আস্ত একটি স্যাটেলাইট যেটা পাঠানো হবে আগামী বছর নাগাদ। কাঠের তৈরি এই পরীক্ষামূলক স্যাটেলাইট লিঙ্গুসেট নামে পরিচিত। লিঙ্গুসেট বানানো হবে ম্যাঙ্গোলিয়া কাঠ দিয়ে।

তবে এই সম্মান পেতে অন্য অনেক কাঠ প্রজাতির সঙ্গে লড়ে এসেছে ম্যাঙ্গোলিয়া। লিঙ্গুসেট এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায় আছে। মহাকাশে কতটা নিরাপদ হবে এর ব্যবহার মূলত সেই বিষয়টিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। তবে প্রাথমিক পরীক্ষায় এর মাঝে সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে সে। লিঙ্গুসেটের লঞ্চিং ২০২৪ এর প্রথম দিকেই করতে চান সংস্লিষ্টরা। নাসার সঙ্গে থাকায় কাজে-কর্মে বেশ সুবিধাই হয়েছে বিজ্ঞানীদের। স্যাটেলাইটটি চলে গেলে অন্তত ছয় মাস তার গতিবিধি পরীক্ষা করা হবে। মহাকাশে তাপমাত্রার প্রচুর বদল ঘটে। কাঠের স্যাটেলাইটটি এই বদলের মাঝে টিকে থাকছে কিনা এবারে মূলত সেটি দেখতে চান বিজ্ঞানীরা। এছাড়াও মহাকাশে নানা রেডিও ওয়েব আর ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড আছে। সেসবের প্রতি লিঙ্গুসেট ঠিক কেমন আচরণ করছে সেটিও বেশ ভাল করে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

স্যাটেলাইট চালাতে যেসব সেমি-কন্ডাক্টর আর্থ চিপের ব্যবহার হয় সেগুলোকে কাঠ সুরক্ষা দিচ্ছে কিনা সে বিষয়টিও দেখা হবে। যদিও কাঠ তুলনামূলক অনেক সস্তা বস্তু তবুও এটি নতুন প্রজেক্ট বলে এরই মাঝে বাজেটকে ছাড়িয়ে গেছে লিঙ্গুসেট। তবে বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস প্রজেক্টটি যদি সফল হয়ে যায় তবে আরও সাশ্রয়ী হবে এমন কাঠের তৈরি স্যাটেলাইট।