মঙ্গলে অবতরণের জন্য প্রস্তুত ইসরো! কবে উৎক্ষেপণ হবে ‘মঙ্গলযান–২’?

ISRO Mangalyaan 2 Mars Landing

বারো বছর আগে ইতিহাস গড়েছিল ভারত। সেই ‘মঙ্গলযান’ অভিযানের হাত ধরেই মহাকাশ গবেষণায় ভারতীয় বিজ্ঞানীদের নাম পৌঁছে গিয়েছিল বিশ্বের দরজায়। আর এবার, সেই ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচনার পথে ইসরো।

Advertisements

ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে, ২০৩০ সালে মঙ্গলে অবতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত। অভিযানের নাম, ‘মঙ্গলযান–২’।

   

বুধবার এক ভাষণে ইসরো চেয়ারম্যান ড. ভি. নারায়ণন জানান, ২০৩০ সালের মধ্যেই এই উচ্চাভিলাষী মিশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। এই অভিযানের মাধ্যমে ভারত প্রথমবারের মতো অন্য গ্রহে সফট ল্যান্ডিংয়ের চেষ্টা করবে।

 মঙ্গলযানের উত্তরাধিকার, আরও উচ্চাভিলাষী মিশন

২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর উৎক্ষেপিত হয়েছিল ভারতের প্রথম মঙ্গল অভিযান— Mars Orbiter Mission (MOM)। সেই ‘মঙ্গলযান’ই ভারতকে এনে দিয়েছিল এক অনন্য মর্যাদা— প্রথম এশীয় দেশ হিসেবে মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ এবং বিশ্বে প্রথম দেশ হিসেবে একবারেই সফলতা।

সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে কার্যকর থাকা সেই মঙ্গলযান পাঠিয়েছিল মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল, খনিজ গঠন ও পৃষ্ঠতলের অমূল্য তথ্য। ২০২২ সালে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও তার সাফল্য ভারতের মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছে।

এবার লক্ষ্য মঙ্গলের মাটি ISRO Mangalyaan 2 Mars Landing

ইসরোর নতুন অভিযানে শুধু কক্ষপথ নয়, এবার মাটিতেও পা রাখবে ভারতীয় প্রযুক্তি। ‘মঙ্গলযান–২’-এর লক্ষ্য— মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশের পাশাপাশি সফল সফট ল্যান্ডিং। মিশনে থাকবে অরবিটার, ল্যান্ডার, এমনকি সম্ভাব্যভাবে একটি রোভারও যুক্ত হতে পারে।

ইসরো জানিয়েছে, মঙ্গলের পাতলা বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে সুনির্দিষ্ট অবতরণের জন্য তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রপালশন, নেভিগেশন ও অটো-ল্যান্ডিং সিস্টেম।

Advertisements

একজন জ্যেষ্ঠ ইসরো কর্মকর্তা বলেন, “মঙ্গলযান–২ শুধু একটি মহাকাশযান নয়, এটি হবে ভারতের আন্তঃগ্রহ অভিযানের এক নতুন সূচনা।”

 আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত

ইসরোর স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার (SAC) ও বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টার (VSSC)-এ ইতিমধ্যেই প্রাথমিক নকশা ও গবেষণা শুরু হয়েছে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দিকেও নজর দিচ্ছে— ঠিক যেমন চন্দ্রযান–৩ বা নিসার মিশনে করেছিল।

বিভিন্ন দেশের মহাকাশ সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে বৈজ্ঞানিক তথ্য ও প্রযুক্তি ভাগ করে নেওয়ার পরিকল্পনাও চলছে।

মঙ্গলের মাটিতে ভারতের স্বপ্ন

যদি মঙ্গলযান–২ সফল হয়, তবে ভারত মঙ্গলে অবতরণকারী বিশ্বের চতুর্থ দেশ হবে, আমেরিকা, চিন ও প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের পর।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অভিযান ভারতের গভীর মহাকাশ অনুসন্ধান, স্বয়ংক্রিয় নেভিগেশন ও ভূ-পৃষ্ঠ বিশ্লেষণ-এর সক্ষমতাকে আরও উঁচু স্তরে নিয়ে যাবে।

২০৩০ সালে যখন মঙ্গলযান–২ মঙ্গলের মাটিতে নামবে, সেটি শুধু একটি মিশন হবে না, সেটি হবে একটি জাতির বৈজ্ঞানিক সাহস, দূরদৃষ্টি ও অদম্য স্বপ্নের প্রতীক।