করোনার জের: শোভাবাজার রাজবাড়িতে প্রবেশে নিষেধ

নিউজ ডেস্ক, কলকাতা: উত্তর কলকাতার ঐতিহ্যবাহী পুজো মানেই শোভাবাজার রাজবাড়ির (Sobhabazar Rajbari) পুজো। যে পুজো দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন, আবেগের টানে, বনেদিয়ানার টানে।…

Sobhabazar Rajbari

নিউজ ডেস্ক, কলকাতা: উত্তর কলকাতার ঐতিহ্যবাহী পুজো মানেই শোভাবাজার রাজবাড়ির (Sobhabazar Rajbari) পুজো। যে পুজো দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন, আবেগের টানে, বনেদিয়ানার টানে। তবে বিগত বছরের মতন এবারও ছোট রাজবাড়ির পুজো দেখার সুযোগ মিলছে না দর্শকদের। তবে শোভাবাজারের ছোট রাজবাড়ির ফেসবুক পেজে পুজোর লাইভ দেখানো হবে বলেই জানা যাচ্ছে। 

১৭৫৭ সালে রাজবাড়ির পুজো শুরু করেছিলেন রাজা নবকৃষ্ণ দেব। বলা যেতে পারে কলকাতায় প্রথম মহাসমারহে দুর্গোৎসব শুরু করেছিলেন নবকৃষ্ণ। হাজার হাজার টাকা খরচ করে রাজবাড়িতে বসিয়েছিলেন মজলিস। তবে পুজোর নিয়মনিষ্ঠায় কোন খামতি ছিলনা নবকৃষ্ণ দেবের। ভিয়েন বসিয়ে আজও হরেক রকম মিষ্টি তৈরি করা হয় রাজবাড়িতে।

   

পরিবারের বর্তমান সদস্যরা প্রাচীন রীতিনীতি মেনেই পুজো করে আসছেন। তবে বিগত বছর থেকেই রাজবাড়ির পুজো দেখার অনুমতি মিলছে না আপামর সাধারণ মানুষের। তার মূল কারণ হল করোনা ভাইরাস। আর এবছরও তার অন্যথা হল না, রাজবাড়ির তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হল এবছরও কোন সাধারণ মানুষকে শোভাবাজার রাজবাড়িতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যাবে না। এবারও পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। করোনার সংক্রমণকে রুখতে রাজবাড়ির এহেন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন নেট নাগরিকরা।

Sobhabazar Rajbari

রাজা নবকৃষ্ণের পিতা রামচরণ ছিলেন নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর কালেক্টর। পরে হন কটকের দেওয়ান। কিন্তু তিনি বর্গিদের হাতে মারা যাওয়ার পরে তাঁর বিধবা স্ত্রী তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়েকে নিয়ে কলকাতার কাছে গোবিন্দপুর অঞ্চলে (এখনকার ফোর্ট উইলিয়াম) পালিয়ে আসেন। রামচরণের কনিষ্ঠ পুত্র নবকৃষ্ণ মায়ের উৎসাহে ইংরেজি, ফারসি ও আরবি শেখেন এবং তার ফলে প্রথমে ওয়ারেন হেস্টিংসের ফারসি শিক্ষক নিযুক্ত হলেন।

পরে নিজের যোগ্যতা ও বুদ্ধি বলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মুনশির পদ লাভ করলেন। লর্ড ক্লাইভ তখন কোম্পানির প্রভাবশালী ব্যক্তি। নবকৃষ্ণ ক্রমে তাঁর কাছের লোক হয়ে ওঠেন। উত্তর কলকাতার শোভাবাজার অঞ্চলে তৎকালীন বড় ব্যবসায়ী শোভারাম বসাকের কাছ থেকে একটি প্রাসাদোপম বাড়ি নবকৃষ্ণ কিনেছিলেন আগেই। পলাশির যুদ্ধের পর সেই প্রাসাদের সঙ্গে নবকৃষ্ণ তৈরি করান দেওয়ানখানা, নাচঘর, লাইব্রেরি, নহবতখানা ইত্যাদি। আর একটি সুবিশাল সাত খিলানের ঠাকুরদালান।

যুদ্ধজয়ের স্মারক হিসাবে তিনি ওই বছরেই ওই দালানে সূচনা করেন দুর্গোৎসবের। কলকাতার মানুষ সেই প্রথম দেখল, দুর্গাপুজোর মোচ্ছব কাকে বলে। রাজা নবকৃষ্ণই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুর্গোৎসবে সাহেবদের নিমন্ত্রণ করে নিয়ে আসেন। তাতে আমন্ত্রিতের তালিকায় ছিলেন লর্ড ক্লাইভের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
১৮৯৭ সালে বিবেকানন্দ শিকাগো বিশ্ব ধর্ম মহাসভা থেকে ফেরার পর তাঁকে এখানেই রাজা বিনয়কৃষ্ণ দেব বাহাদুর আনুষ্ঠানিক ভাবে সম্মানিত করেন