কুমোরটুলিতে মা দুর্গার ‘জয়েন্ট ফ্যামিলি’ ভেঙেছিলেন খোদ নেতাজিই!

Kolkata Durga Puja: দেশকে ব্রিটিশ শোষণের বেড়াজাল থেকে, মুক্তি দেওয়ার জন্য তিনি যে কি অসাধ্য সাধন করেছিলেন, তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু যেটা অনেকেই জানিনা,…

Unveiling the Untold History of Kumartuli Sarbojanin

Kolkata Durga Puja: দেশকে ব্রিটিশ শোষণের বেড়াজাল থেকে, মুক্তি দেওয়ার জন্য তিনি যে কি অসাধ্য সাধন করেছিলেন, তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু যেটা অনেকেই জানিনা, এক চালার বেড়াজাল থেকে মা দুর্গার পরিবারকে মুক্ত করে আধুনিক ঘরানার প্রতিমার প্রচলনে অন্যতম কারিগর ছিলেন সুভাষচন্দ্র! যদিও সেটা তিনি করেছিলেন অনেকটা পরিস্থিতির প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে!

১৯৩৮ সালে কুমোরটুলি সর্বজনীন দুর্গোৎসবের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করা হয়, প্রাক্তন মেয়র এবং বিখ্যাত কংগ্রেস নেতা সুভাষচন্দ্র বসুকে। কিন্তু পুজো কমিটির সভাপতি হিসেবে থাকা আইনজীবী স্যার হরিশংকর পাল ছিলেন একটু ব্রিটিশ পন্থী। চরম ব্রিটিশ বিরোধী সুভাষ চন্দ্রের সঙ্গে মতানৈক্য হবার আশঙ্কায়, তিনি সভাপতি পদ ছেড়ে দেন এবং সেই বছর প্রথম কুমোরটুলি সার্বজনীন এর সভাপতি হন সুভাষচন্দ্র বোস।

   

খুব সুন্দর এবং সুচারুভাবেই পূজার আয়োজন হোলো। চতুর্থীতেই মন্ডপে এসে গেল বিখ্যাত মৃৎশিল্পী গোপেশ্বর পালের তৈরি অপরূপ একচালা মাতৃ প্রতিমা! কিন্তু অঘটন ঘটল পঞ্চমীর বিকেলে! বিধ্বংসী আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল প্রতিমা সহ পুরো পুজো মণ্ডপ! অসহায় নেতাজি তখন ছুটলেন শিল্পী গোপেশ্বর এর কাছে। আবদার জানালেন এক রাতের মধ্যেই আবার মাতৃ প্রতিমা তৈরি করে দেওয়ার!

এমনতর আবদার শুনে, শিল্পী গোপেশ্বর পালের তখন আকাশ থেকে পড়ার পালা! এক রাত তো দূর, গোটা একদিনেও কি করে এ কাজ সম্ভব!
এ কাজেও মুশকিল আসান করে দিলেন খোদ নেতাজিই! তিনি প্রস্তাব দিলেন, দুর্গা এবং তার চার পুত্র কন্যাকে, আলাদা আলাদা চালায় তৈরি করা হোক। দূর্গা প্রতিমা তৈরি করুক স্বয়ং গোপেশ্বর, কুমোরটুলির অন্যান্য বাকি মৃৎ শিল্পীরা তৈরি করুক বাকি প্রতিমাগুলি।

সুভাষ চন্দ্রের এই প্রস্তাবে সারা কুমোরটুলি জুড়ে হৈ হৈ পড়ে গেল। প্রত্যেকটি মৃৎ শিল্পী এবং তাদের কারিগরেরা যে যার সাধ্যের সর্বোচ্চ সীমায় গিয়ে, এক রাতের মধ্যেই আবার তৈরি করলেন নতুন মাতৃ প্রতিমা! পাঁচ চালায় পৃথকভাবে তৈরি সেই প্রতিমা যেন আগের থেকেও আরো অনিন্দ্য সুন্দর হল!

ইতিমধ্যেই ক্লাবের সদস্যরাও আবার নিজেরা হাত লাগিয়ে নতুন করে পুজো প্যান্ডেল দাঁড় করিয়ে ফেলেছিলেন! এক রাতের মধ্যেই কৃত্রিম পাহাড়ের উপরে যুদ্ধ ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছিল, আর সেই যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে, দেবী মহামায়া, মহিষাসুর নিধনে মত্ত! গোটা কলকাতা, সেইবার এই ছকভাঙ্গা পুজো দেখবার জন্য ভিড় করেছিল কুমোরটুলির রাস্তায়!

মা দুর্গার সংসারের এই ভাঙন ধরানো নিয়ে, বিতর্ক যে কম হয়েছিল তাও নয়! কিন্তু নেতাজি বা গোপেশ্বর, কেউই কোনো বিতর্ককে আমল দেননি। এবং কলকাতার প্রতিমা শিল্প জগতের মোড় ঘোরানো আধুনিকতার সেই যে শুরু হয়েছিলো, শতবর্ষ পেরিয়ে সেই ঘরানা আজও স্বমহিমায় অধিষ্ঠান করছে বাংলার মন্ডপে মন্ডপে।