Durga Puja: টেমস নদীর জলে স্নান করে ব্যানার্জি বাড়ির কলা বৌ

লন্ডনের টেমসের জলে স্নান করে কলাবউ, বালির বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো হয় সাত দেশের নদীর জলে। ফোর্ট উইলিয়ামের কোর্ট অ্যান্ড জুডিকেচারের আইনজীবী ছিলেন জগৎচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। ইংরেজ…

লন্ডনের টেমসের জলে স্নান করে কলাবউ, বালির বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো হয় সাত দেশের নদীর জলে। ফোর্ট উইলিয়ামের কোর্ট অ্যান্ড জুডিকেচারের আইনজীবী ছিলেন জগৎচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। ইংরেজ আমলের আইনজীবী। রাশভারী, নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ। বালির শান্তিরাম রোডের তিন মহলা বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোর দায়িত্বটা তিনিই সামলাতেন। পুরনো পুজো, নিয়মও অনেক। উমা সেখানে মহিষমর্দিনী নন, বাড়ির মেয়ে। পরবর্তী সময়ে নিয়মে বদল এল। তৎকালীন সংস্কারবদ্ধ বাঙালি সমাজে ব্যতিক্রমী ভাবনার দৃষ্টান্ত রাখল বালির বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার।

বোধন সেরে উমাকে ঘরে তোলা হয়েছে। ষষ্ঠী পেরিয়ে সপ্তমীর সকাল। নবপত্রিকা স্নানের তোড়জোড় চলছে। এই বাড়ির রীতি, গঙ্গায় গিয়ে নয় ঠাকুরদালানেই গঙ্গা জলে স্নান করানো হবে কলাবউকে। বাড়ির মেয়েরা তখনও অবগুন্ঠনের আড়ালে। বাড়ির চৌকাঠ পাড়া করার আদেশ নেই। গঙ্গা জলের ঘটি তুলে ধরতেই বাধ সাধলেন জগৎচন্দ্র। নবপত্রিকার অঞ্জলি হবে বিশ্বের নানা দেশের নদীর জলে।

আত্মীয়-অনাত্মীয়দের অবাক করে দিয়ে সে দিন নবপত্রিকা স্নান করানো হয় গঙ্গা ও টেমস নদীর জলে। সেই শুরু। কখনও টেমস, কখনও মিশরের নীল নদ বা চিনের হোয়াংফু নদীর জলে কলাবউ স্নান করানোর রীতি চলে আসছে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে। ইংরেজ আমলের সংস্কারবদ্ধ বনেদিয়ানায় যে অন্য রকম ভাবনার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলেন জগৎচন্দ্র, আজ সেটাই বালির বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজোর সেরা আকর্ষণ।

সপ্তমীর সকালে নবপত্রিকা স্নান দেখতে ঠাকুরদালানে ভিড় জমান বহু মানুষ। গঙ্গার জলের সঙ্গে যখন টেমস আর নীল নদের জল মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়, উলুধ্বনি দিয়ে ওঠেন বাড়ির মহিলারা। শারদ ভোরে চণ্ডীপাঠের মন্ত্রের সঙ্গে কোথায় যেন এক হয়ে যায় বাংলা, লন্ডন, মিশর। কর্মসূত্রে বা পড়াশোনার জন্য বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির অনেক সদস্যই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন বিশ্বের নানা দেশে। পুজোয় সকলকে বাড়ি ফিরতেই হয়। যে যেখানেই থাকুক, দায়িত্ব নিয়ে সেখানকার নদীর জল নিয়ে আসেন।

গঙ্গা জলের মতো টেমস নদীর জল বাড়িতেই জমা করা থাকে। পুজো হয় পুরোপুরি বৈষ্ণব মতে। পশু বলির বদলে চাল, কুমড়ো, শশা, আখ এই সবই বলি হয়। ভোগের থালাতেও তাই নিরামিষের আয়োজন। সপ্তমী থেকে নবমী পাত পেড়ে খাওয়ানো হয় বাড়ির আত্মীয় থেকে অনাত্মীয়দের। শেষ পাতে নানা রকম মিষ্টির চল রয়েছে। নিজের হাতে ভোগ বেড়ে দেন বাড়ির মহিলারা। জন্মাষ্টমীর দিনেই কাঠামো পুজো হয়ে যায়। একচালের প্রতিমার আগে মাটির সাজ ছিল। এখন সোনার সাজ। বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে কাঁধে চেপে বিসর্জনে যান দুর্গা। সেই রীতি চালু করেছিলেন জগৎচন্দ্র।