Nepal Durga Puja: হিমালয় কন্যার দেশে দুর্গা বরণ, নেপালে শুরু দাসিন

কাঠমাণ্ডুর (Kathmandu) তুন্ডিখেল (Tundikhel) ময়দান থেকে বারবার গর্জন করল কামান। হিমালয় কন্যা নেপাল (Nepal) সরকারিভাবে দেবী দুর্গা (Durga) বরণ করল। নেপালে শুরু বিখ্যাত বড়া দাসিন…

কাঠমাণ্ডুর (Kathmandu) তুন্ডিখেল (Tundikhel) ময়দান থেকে বারবার গর্জন করল কামান। হিমালয় কন্যা নেপাল (Nepal) সরকারিভাবে দেবী দুর্গা (Durga) বরণ করল। নেপালে শুরু বিখ্যাত বড়া দাসিন (Dashain) উৎসব। সেই উৎসবের সূচনা হয় সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজ ও রাষ্ট্রপতির অভিবাদন দিয়ে।

নেপালের সংবাদমাধ্যমে খবর, দাসিন উপলক্ষে রাজধানী কাঠমাণ্ডুর সর্বত্র বিদেশি পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়বে। স্থানীয় বাসিন্দারা চিরাচরিত প্রথায় দুর্গা বরণ করবেন। রবিবার দাশিনের অন্যতম পর্ব ফুলপাতি। প্রথা অনুসরণ করে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি বিদ্যাদেবী ভাণ্ডারি সেনাবহিনীকে অভিবাদন জানান।

• নেপালের দুর্গা বরণ অভিনব। এটি দাসিন নামে পরিচিত।
• বিশ্বে একমাত্র এ দেশেই দুর্গা বরণ হয় সামরিক অভিবাদনে।
• রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে দেবী দুর্গাকে রাষ্ট্রীয় সালাম দেয় নেপালি আর্মি।

দুর্গাপূজা নেপালে ‘দাসিন’ নামে সুপরিচিত। এই দাসিন উৎসবের অন্যতম হল ফুলপাতি অনুষ্ঠান। কাঠমাণ্ডু প্রদক্ষিণ করা ঘট তুন্ডিখেল ময়দানে আসতেই নেপালি আর্মি সামরিক রীতিতে সেটিকে অভিবাদন জানায়।
অনুষ্ঠানটির নাম ‘ফুলপাতি’। সপ্তমীর সকালে দেবী দুর্গার ঘট নিয়ে নেপালি সেনা বিশেষ কুচকাওয়াজ করবে। পুরো অনুষ্ঠানটি হবে তুন্ডিখেল ময়দানে। অনুষ্ঠানে থাকবে নেপালের রাষ্ট্রপতি ও রাজ পরিবারের সদস্যরা।

মূলত দাসিন নেপালের উৎসে হলেও। ভারতের দিকে নেপালি ভাষীরা দাসিন পালন করেন। নেপাল সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং জেলা, সিকিম, বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের অঞ্চলগুলিতে দাসিন পালিত হয়। নেপালের জনসংখ্যার বৃহত্তম অংশ হিন্দু। দ্বিতীয় স্থানে আছে বৌদ্ধরা। কিছু অংশে রয়েছেন মুসলিমরা। সব উৎসবেই নেপালিরা অংশ নেন। আন্তর্জাতিক পর্যটনের অতি গুরুত্বপূর্ণ দেশটির দুর্গাপূজা হয় বিশেষ রীতিতে। সেটি দেখতে বহু পর্যটক আসেন নেপালে

চিন ও ভারতের মাঝে নেপাল মূলত পর্যটন শিল্প ভিত্তিক দেশ। তবে নেপাল বারবার রক্তাক্ত রাজনৈতিক পথ বেছে নিয়েছে। রাজতন্ত্র বনাম গণতন্ত্রের সংঘর্ষে রাাজার শাসন শেষে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হয়। কখনও নেপালি কংগ্রেস কখনও নেপালি কমিউনিস্ট পার্টি এদেশের ক্ষমতায় বসেছে।

বড় দাসিন উৎসব (Bada Dashain Festival) উপলক্ষে আজ সারা দেশে রীতি অনুযায়ী ঘরে ঘরে তোলা হচ্ছে ফুলপাটি (Fulpati)। ফুলপাটি হল ফুল, পাতা এবং বিভিন্ন গাছের ফলের একটি ভাণ্ডার যা শুভ বলে বিবেচিত হয়, বড় দাসিন উৎসবের সপ্তম দিনে দাসিন ঘরে অভিষিক্ত হয়। দাসিন ঘর, হনুমানধোকা দরবারে (Hanumandhoka Durbur) অভিষেক করার জন্য বৈদিক রীতি অনুসারে ফুলপাটি কাঠমান্ডুতে আনা হয়।
হনুমানধোকা দরবারে, গুরুজ্যুকো প্লাটুন, নেপাল সেনাবাহিনী, নেপাল পুলিশ, এবং সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী নেপাল এবং সিভিল সার্ভিসের উচ্চপদস্থ আধিকারিক, আশা গুর্জা দল, ব্যান্ড সঙ্গীত, পঞ্চবাজা, সজ্জিত কলসিউলিস, এবং একটি শোভাযাত্রা সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফুলপতি নিয়ে জামাল থেকে হনুমান ঢোকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

নেপাল ক্যালেন্ডার নির্ধারণ কমিটির মতে ফুলপাতি ঘরে তোলার জন্য কোনও শুভ সময় লাগে না। ঘাটাস্থান (Ghatasthapana) থেকে দাসিন উৎসব শুরু হলেও ফুলপতির দিন থেকেই উৎসবে বিশেষ জৌলুস দেখা যায়। একইভাবে, ফুলপতি সম্বলিত একটি পালকি গোর্খা দরবারের দশাইংঘর থেকে কাঠমান্ডুর হনুমানধোকা দরবারে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাঠানো হচ্ছে। সময়-সম্মানিত ঐতিহ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দাসিন ঘর, হনুমানধোকা দরবারে অভিষিক্ত হওয়ার জন্য বৈদিক রীতি অনুসারে ফুলপতি কাঠমান্ডুতে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেই সময় থেকে গোর্খার রাজা পৃথ্বী নারায়ণ শাহ কাঠমান্ডুর হনুমানধোকা দরবার থেকে তার শাসন শুরু করার সময় থেকেই এই ঐতিহ্যের মূল খুঁজে পাওয়া যায়। এরপর থেকে, নেপালিদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড় দাসিন উৎসবের সপ্তম দিনে প্রতি বছর গোর্খা দশইনঘর থেকে ফুলপতি বহনকারী একটি পালকি পাঠানো হয়। গোর্খা দরবারের সহকারীরা ফুলপতিকে সাটিপিপালের ফুলপতি চৌতারা নামক স্থানে নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে কাঠমান্ডু পর্যন্ত নিয়ে যায়।

আজ থেকে সমস্ত সরকারী বা বেসরকারী অফিস বন্ধ হয়ে গেছে যা মানুষকে তাদের নিজ নিজ পৈত্রিক বাড়িতে ফিরে যেতে এবং দুর্গা ভবানীর পাশাপাশি তাদের প্রবীণদের কাছ থেকে আশীর্বাদ নিতে উত্সাহিত করে।