বাংলা ভাষীদের উপর দেশের একাধিক রাজ্যে হেনস্তা, ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR), এবং বাংলাদেশে পুশব্যাকের ঘটনা নিয়ে তুঙ্গে উত্তেজনা। এই আবহেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘আধ্যাত্মিক জন্ম’ সংক্রান্ত পুরনো মন্তব্যকে হাতিয়ার করে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের বর্ষীয়ান সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (TMC MP Kalyan Banerjee)। মোদিকে নিশানা করে তিনি বলেন, “যাঁর জৈবিক জন্মই হয়নি, তিনি কোনও দেশের নাগরিক নন, তাঁকে দেবদেবীর জগতেই পাঠানো উচিত।”
শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার একটি সোশাল মিডিয়া পোস্টে লেখেন, “উনি নিজেই বলেছেন, ওঁর জন্ম বায়োলজিক্যাল নয়। ঈশ্বরের দূত উনি। যদি তাই হয়, তাহলে তো তিনি কোনও দেশের নাগরিক নন, অতিন্দ্রীয় জগতের বাসিন্দা! তাঁকে তো সেই দেবদেবীর জগতে পুশব্যাক করা উচিত।”
এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে তীব্র আলোড়ন। প্রসঙ্গত, গত বছর এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছিলেন, “মা বেঁচে থাকতে মনে হত, আমি হয়তো জৈবিকভাবে জন্মেছি। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর আমি নিশ্চিত, আমাকে ঈশ্বর পাঠিয়েছেন বিশেষ কাজে।”
কল্যাণের দাবি, “যদি মোদির জৈবিক জন্মই না হয়ে থাকে, তবে তাঁর নাগরিকত্ব কি প্রশ্নের মুখে নয়? যদি জন্ম না হয়, তবে তো তিনি দেশের নাগরিকও নন। তাহলে তাঁর নাম ভোটার তালিকায় কীভাবে থাকে?”
এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। তৃণমূল সাংসদের কটাক্ষ আরও একধাপ এগিয়ে যায়— “মা কালীরও তো বায়োলজিক্যাল জন্ম হয়নি, তা বলে কি তিনি ভারতীয় নাগরিক? তাহলে মোদিকেও তো পুশব্যাক করে ‘দেবলোক’ পাঠানো উচিত!”
তবে এখানেই থেমে থাকেননি কল্যাণ। তিনি বিহারে ভোটের আগে SIR প্রক্রিয়াকে সামনে টেনে এনেছেন। তাঁর অভিযোগ, “এই নিবিড় সংশোধনের নামে বাংলাভাষীদের নিশানা করা হচ্ছে। যাঁরা বাইরের রাজ্যে থাকেন, তাঁদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এটা গণতন্ত্রে চলতে পারে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমি যদি দিল্লিতে থাকি, আর সমীক্ষার সময় বাড়িতে না থাকি, তাহলে কি আমি আর ভারতীয় নই? এটা হাস্যকর!”
বাংলা ভাষীদের হেনস্তার প্রসঙ্গ টেনে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারকে একাধিক প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। তিনি দাবি করেন, “ভারতীয় নাগরিকত্ব শুধুমাত্র ভোটে অংশগ্রহণ বা এক জায়গায় বসবাস করার উপর নির্ভর করে না। এদেশের প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব।”
সামগ্রিকভাবে, কল্যাণের এই মন্তব্য নতুন করে উসকে দিয়েছে মোদির পুরনো বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক। পাশাপাশি নাগরিকত্ব এবং ভোটার তালিকা সংক্রান্ত বিষয়ে বিরোধী দলগুলির ক্ষোভ যে ক্রমশ বাড়ছে, তাও স্পষ্ট হয়ে উঠছে এই পোস্টের মাধ্যমে।