দলের পদাধিকারীদের নিশানা তৃণমূল নেতা দেবাংশুর

তৃণমূল যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যের (Debangshu Bhattacharya) এক ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে শাসকদলের অন্দরমহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তিনি দলের…

TMC Leader Debangshu Bhattacharya Criticizes CPM Over Jadavpur Incident

তৃণমূল যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যের (Debangshu Bhattacharya) এক ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে শাসকদলের অন্দরমহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তিনি দলের জনপ্রতিনিধি এবং পদাধিকারীদের কার্যত তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বিরোধীদের একের পর এক আক্রমণের শিকার হচ্ছেন, তখন দলে অনেকেই নিশ্চুপ থাকেন বলে অভিযোগ তুলেছেন দেবাংশু। তাঁর মতে, লড়াইয়ের সময় দলের অনেকে ‘ঘুমিয়ে পড়েন’, অথচ পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের গলায় দৃঢ়তা থাকে।

   

নেত্রীকে অসম্মানের সময় চুপ কেন?

দেবাংশু তার পোস্টে লেখেন, “নেত্রীর অনুমোদনেই কেউ নির্বাচিত সদস্য, কেউ বা বড় পদের অধিকারী হয়েছেন। সেই নেত্রীর অসম্মানের সময় মুখ না খোলা বিশ্বাসঘাতকতার সামিল।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যুদ্ধের সময় কেন চুপ থাকেন? কোথায় হারিয়ে যান? কেন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেন না? অথচ পদের দাবি জানানোর সময় সবাই মুখর হয়ে ওঠেন!”

Advertisements

তাঁর বক্তব্য অনুসারে, অনুষ্ঠান মঞ্চে বড় বড় ফুলের স্তবক গ্রহণ করতে এবং উত্তরীয় গলায় পরতে কোনো অসুবিধা হয় না, অথচ দলের সংকটকালে অনেকেই নিশ্চুপ থাকেন। তিনি আরও বলেন, “নেত্রীকে অসম্মান করলে গায়ে জ্বালা ধরে না? তখনও নির্দেশের অপেক্ষা করতে হয়?”

সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়তা নিয়ে ক্ষোভ

দেবাংশু বিশেষভাবে দলের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন যে, অনেকেই শুধুমাত্র নিজেদের ছবি পোস্ট করতেই ব্যস্ত থাকেন, কিন্তু দলের সংকট মুহূর্তে কোনো প্রতিক্রিয়া দেন না। তিনি লেখেন, “আপনারা যারা পার্টি অফিসে শত শত চামচাদের নিয়ে বসে থাকেন, শুধু নিজের সঙ্গে সেলফি তোলেন কিংবা ড্রেন উদ্বোধনের ছবি পোস্ট করেন, তাঁরা কি অন্তত একটি বার্তাও সোশ্যাল মিডিয়ায় দিতে পারেন না?”

“আমরাই সব লড়ব?” প্রশ্ন Debangshu Bhattacharya- এর

দেবাংশুর মতে, দলে লড়াই করার দায়িত্ব যেন কেবলমাত্র কয়েকজনের কাঁধে পড়েছে। তিনি লেখেন, “আমরা কজনই লড়ব শুধু? আমরা কজনই মুখ খুলব প্রতিবার? আমরাও তো পরিবার নিয়ে থাকতে পারি! কিন্তু আমরা তো পালিয়ে যাই না!” তিনি স্পষ্টতই অভিযোগ করেন যে, দলের অনেকেই শুধুমাত্র নিজেদের সুবিধার কথা ভেবে চলেন এবং লড়াই এড়িয়ে যান।

তিনি আরও বলেন, “সিনিয়র মন্ত্রীরা হাজারো ব্যস্ততার মধ্যে থেকেও মাঝে মাঝে লড়াই করেন, কিন্তু আপনারা? যদি গা বাঁচিয়েই চলতে চান, তাহলে পঞ্চায়েত, পৌরসভা, বিধানসভা বা লোকসভার জন্য প্রার্থী হয়েছিলেন কেন?”

নিজের প্রতি দলের আস্থার কথা তুলে ধরলেন দেবাংশু

দেবাংশু স্পষ্ট করেন যে, দল ও নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ওপর যথেষ্ট আস্থা রেখেছেন। তিনি লেখেন, “আমাকে রাস্তার ধার থেকে তুলে এনে রাজনীতিতে একটা জায়গা দিয়েছেন। কনিষ্ঠতম মুখপাত্র থেকে শুরু করে কনিষ্ঠতম লোকসভার প্রার্থী করা হয়েছে আমাকে। এই মানুষগুলোর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাঁদের আস্থার সঙ্গে আমি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না।”

তিনি উল্লেখ করেন, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় এজেন্সির হয়রানি, আরজিকর, যাদবপুর, অক্সফোর্ড – সবকটি ইস্যুতে তিনি সর্বদা সামনে থেকে লড়েছেন। তিনি বলেন, “আমি গদির আরাম উপভোগ করার জন্য রাজনীতিতে আসিনি। দলীয় সংকটকালে লড়াইয়ের পরিবর্তে নীরবতা পালন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”