দুই দিন আগেই বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসে বড় দায়িত্ব পেয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। আবারও সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরেছেন ‘বীরভূমের বাঘ’ নামে পরিচিত এই তৃণমূল নেতা। আর ঠিক তার পরপরই, তাঁর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফের আগের মতোই জোরদার করা হল। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সদ্যসমাপ্ত বীরভূম সফরের পরে রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের তরফে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে অনুব্রতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন আগের মতোই ‘ওয়াই-প্লাস’ ক্যাটেগরির স্তরে পৌঁছেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অনুব্রতের ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাঁর বোলপুরের বাড়িতে নিযুক্ত নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারি চালাবে বিশেষ নিরাপত্তাবাহিনী। শুধু বাড়ির ভিতরেই নয়, আশেপাশের এলাকাতেও নজর রাখবে নিরাপত্তা বাহিনী। তাঁর চলাফেরার সময় থাকবে এসকর্ট গাড়ি ও সশস্ত্র কনভয়। ফলে বোঝা যাচ্ছে, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে চায় না প্রশাসন।
অনুব্রতের নিরাপত্তা বাড়ানো নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনীতির পারদ চড়তে শুরু করেছে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, অনুব্রতের বিরুদ্ধে এতগুলি গুরুতর মামলা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে তিনি আবার দলীয় দায়িত্ব পাচ্ছেন, আবার কীভাবেই বা তিনি ‘ওয়াই-প্লাস’ স্তরের নিরাপত্তা পান? যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই নিয়ে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।
অনুব্রত মণ্ডল এর আগে গরু পাচার মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর তিনি সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পান। জামিন পাওয়ার পর থেকে অনেকটাই নীরব ছিলেন বীরভূমের প্রাক্তন জেলা সভাপতি। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক বীরভূম সফরে তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে দেখা যায় অনুব্রতকে। এমনকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে তাঁর পাশে থাকার বার্তাও দেন। দলের একাংশ মনে করছে, এই সফরের পরেই ফের অনুব্রতকে পুরনো গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয়েছে। তারই অঙ্গ হিসেবে দেখা হচ্ছে এই নিরাপত্তা বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে।
দলীয় মহলের মতে, বীরভূমের রাজনীতিতে এখনও অনুব্রতের বড় প্রভাব রয়েছে। তাঁর অনুগামীরা এখনও সংগঠনে সক্রিয়। দল চাইছে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বীরভূমে সংগঠনকে আগের মতো মজবুত করতে। তাই অনুব্রতের অভিজ্ঞতা ও সংগঠনের উপর দখলকে কাজে লাগাতে চাইছে তৃণমূল নেতৃত্ব। সে কারণে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উভয় স্তরেই তাঁকে পূর্ণ সম্মান ও নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, বিরোধী বিজেপি ও সিপিএম কটাক্ষ করে বলেছে, দলে অপরাধমূলক মামলায় অভিযুক্তদেরই গুরুত্ব পাচ্ছেন। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের মতে, এই সিদ্ধান্তে পরিষ্কার দল এখনো দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদেরই সুরক্ষা দিচ্ছে।
সবমিলিয়ে, অনুব্রত মণ্ডলের রাজনৈতিক পুনরাগমন এবং তাঁর বাড়ানো নিরাপত্তা ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনা তুঙ্গে। আগামী দিনে বীরভূমে তাঁর ভূমিকা কী হয়, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তুঙ্গে।