পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ফের চড়ল উত্তেজনার পারদ। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার (sukanta) তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের সূত্রপাত করেছেন।
রবিবার (১৫ জুন ২০২৫) কলকাতায় একটি দলীয় সভায় তিনি বলেন, “চুরি না করলে খেতে পাবে না তৃণমূল কংগ্রেস!” তাঁর এই মন্তব্য রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ তুলে ধরেছে, যা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে আরও তীব্র করেছে।
বিজেপি রাজ্য সভাপতির মন্তব্য (sukanta)
কলকাতার একটি জনসভায় বিজেপি কর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিতে গিয়ে সুকান্ত মজুমদার (sukanta) তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনে বাংলা দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। তাদের নেতারা চুরি না করলে খেতে পায় না। স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে পঞ্চায়েতের টেন্ডার—সব জায়গায় দুর্নীতির দাগ।” তিনি আরও বলেন, “তৃণমূলের নেতারা জনগণের টাকা লুট করে নিজেদের পকেট ভারী করছে। এই দুর্নীতির জন্যই বাংলার উন্নয়ন থমকে গেছে।”
সুকান্ত মজুমদার (sukanta) তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, “শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারি, কয়লা পাচার, গরু পাচার—এসব কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের নেতারা জড়িত। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পেয়েছে। তবুও তারা জনগণকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “২০২৬ সালে বাংলার মানুষ তৃণমূলের এই দুর্নীতির জবাব দেবে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে এই লুটেরা শাসনের অবসান হবে।”
তৃণমূলের পাল্টা জবাব
সুকান্ত মজুমদারের (sukanta) এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “বিজেপি নেতারা মিথ্যা অভিযোগ তুলে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। তৃণমূল সরকার বাংলার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু বিজেপি শুধু দুর্নীতির অভিযোগ তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়।”
তিনি আরও বলেন, “সুকান্ত মজুমদারের (sukanta) মতো নেতারা বাংলার সংস্কৃতি ও জনগণের সম্মান বোঝেন না। তাঁরা শুধু কেন্দ্রের ইশারায় রাজনীতি করেন।” মমতা বন্দোপাধ্যায় নিজে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলেছেন ২০২৬ এর নির্বাচনে বিজেপিকে শূন্য করতে সংকল্প নিয়েছেন তিনি।
তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিমও এই মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, “বিজেপি নিজেদের দুর্নীতি ঢাকতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে। কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনে দেশে দুর্নীতি চরমে উঠেছে। তারা নিজেদের দিকে তাকাক।” তিনি জানান, তৃণমূল সরকার জনকল্যাণমূলক প্রকল্প যেমন ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’, ‘কন্যাশ্রী’ এবং ‘স্বাস্থ্যসাথী’-এর মাধ্যমে জনগণের পাশে রয়েছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়েছে। ২০২১ সালের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরলেও, বিজেপি উল্লেখযোগ্য আসন জিতে শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল।
তবে, গত কয়েক বছরে রাজ্যে দুর্নীতির অভিযোগ এবং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তৎপরতা তৃণমূলের জন্য রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিজেপি এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জনমত গড়ার চেষ্টা করছে।
সুকান্ত মজুমদারের (sukanta) এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন তৃণমূল নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় দাবি করেছেন, “২০২৬-এ বিজেপি শূন্য হবে।” এই পাল্টাপাল্টি মন্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। বিজেপি নেতারা দাবি করছেন, তৃণমূলের শাসনে জনগণ অতিষ্ঠ এবং তারা পরিবর্তনের জন্য বিজেপির দিকে ঝুঁকছে।
দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিত
সুকান্ত মজুমদার (sukanta) যে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন, তা নতুন নয়। গত কয়েক বছরে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের কয়েকজন নেতা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার নাম জড়িয়েছে।
এছাড়াও, কয়লা পাচার এবং গরু পাচারের মতো ঘটনায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা যেমন সিবিআই এবং ইডি তৃণমূলের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে। বিজেপি এই ঘটনাগুলোকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
অন্যদিকে, তৃণমূল দাবি করছে, কেন্দ্রীয় সরকার বিজেপির ইশারায় তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করে তাদের নেতাদের হয়রানি করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার বলেছেন, “কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার জনগণের কণ্ঠরোধ করতে চায়। তারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।”
জনগণের প্রতিক্রিয়া
সুকান্ত মজুমদারের (sukanta) এই মন্তব্য রাজ্যের জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিজেপি সমর্থকরা তাঁর এই বক্তব্যকে সমর্থন করে বলছেন, তৃণমূলের শাসনে দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্স-এ একটি পোস্টে বিজেপি সমর্থক রাহুল সিং লিখেছেন, “সুকান্ত মজুমদার (sukanta) ঠিক বলেছেন। তৃণমূলের দুর্নীতির কারণে বাংলার মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। ২০২৬-এ পরিবর্তন আসবে।”
সহজ গ্রুপে বাংলা, রনজিতে ইতিহাস গড়ার লক্ষ্য
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সুকান্ত মজুমদারের (sukanta) এই মন্তব্য ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে বিজেপির কৌশলের অংশ। বিজেপি দুর্নীতির ইস্যুকে সামনে রেখে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জনমত গড়ার চেষ্টা করছে। তবে, তৃণমূলের শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা বিজেপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
বিশ্লেষক সুজন চক্রবর্তী বলেন, “দুর্নীতির অভিযোগ তৃণমূলের জন্য একটি সমস্যা হলেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দল এখনও শক্তিশালী। বিজেপিকে জনগণের কাছে বিকল্প হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে হবে। শুধু সমালোচনা করলে হবে না, তাদের উন্নয়নের রূপরেখা দিতে হবে।”
সুকান্ত মজুমদারের (sukanta) “চুরি না করলে খেতে পাবে না তৃণমূল কংগ্রেস” মন্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই মন্তব্যের মাধ্যমে বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকে আরও জোরালো করেছে।
তবে, তৃণমূল এই অভিযোগকে ‘মিথ্যা প্রচার’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই পাল্টাপাল্টি আক্রমণ রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। জনগণ এই বিতর্কে কীভাবে সাড়া দেয় এবং কোন দলের পক্ষে ভোট দেয়, তা সময়ই বলবে।