আসানসোলের অভিজাত হোটেলে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, আর ঠিক সেই সময় হোটেলটিতে প্রশাসনিক অভিযান চালানো হয়। ঘটনাটি ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক তোলপাড় সৃষ্টি করেছে এবং ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিজেপি দাবি করেছে, এটা একটি রাজনৈতিক অভিসন্ধি, যেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে শুভেন্দু অধিকারীকে চাপে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে প্রশাসনের তরফে অভিযানের কারণ হিসাবে ‘রুটিন চেকআপ’ বলে জানানো হয়েছে, কিন্তু তাতেও প্রশ্ন উঠেছে, কেন অন্য হোটেলগুলো বাদ দিয়ে এই বিলাসবহুল হোটেলটিই লক্ষ্য করা হলো।
শুক্রবার আসানসোলের এক অভিজাত হোটেলে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, যিনি ওই দিন একটি দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে এসেছিলেন। সূত্র অনুযায়ী, কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর তিনি ওই হোটেলে বিশ্রাম নিতে যান। হঠাৎ করেই জেলা প্রশাসন এবং আসানসোল পৌরনিগমের যৌথ অভিযানে শুরু হয় ওই হোটেলের সমস্ত কাগজপত্র, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, পানশালা এবং অন্যান্য পরিষেবাগুলি পরীক্ষা করা। প্রশাসনের দাবি, এটি ছিল একটি সাধারণ নিয়মিত চেকআপ। তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কেন এই ‘রুটিন চেকআপ’ এতদিন পর এই হোটেলে হলো এবং কেন শুধুমাত্র এই হোটেলকেই লক্ষ্য করা হলো?
রাজনৈতিক জল্পনা: শুভেন্দু ও হোটেল মালিকের সম্পর্ক
এই অভিযানের পর থেকেই আসানসোলের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, গত সপ্তাহে আসানসোলে এক জনসভা ও মিছিলে অংশ নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী ওই হোটেলেই কিছু সময় বিশ্রাম নিয়েছিলেন এবং সভামঞ্চে ওই হোটেলের মালিকের প্রশংসা করেছিলেন। হোটেলটি এক শিখ ব্যবসায়ী মালিকানাধীন, এবং শুভেন্দু তাঁর আপ্যায়ণ নিয়ে সুনামও করেন। এমনকি, হোটেলের মালিকও শুভেন্দুর প্রশংসা করেছিলেন।
বিজেপি নেতৃত্বের প্রশ্ন, তাহলে কি তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই ব্যবসায়ী এবং শুভেন্দুর মধ্যে সম্পর্ককে চক্ষুশূল মনে করা হয়েছে? আর সেই কারণেই প্রশাসন দ্বারা হোটেলটিতে অভিযান চালানো হলো? তারা আরও দাবি করেছেন, ‘‘এটি নিছক একটি রাজনৈতিক প্রতিশোধমূলক অভিযান, যা আসানসোলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পালটানোর জন্য পরিচালিত হয়েছে।’’
প্রশাসনের ব্যাখ্যা
তবে প্রশাসন এই অভিযানের পেছনে রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য থাকার কথা অস্বীকার করেছে। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটি একটি রুটিন চেকআপ ছিল, যেটি শহরের প্রতিটি হোটেলেই করা হয়ে থাকে। তাদের দাবি, শুধু আসানসোলের ওই হোটেলে নয়, অন্য হোটেলগুলোতেও একই ধরনের অভিযান চালানো হয়েছে। যদিও, বিজেপি নেতারা দাবি করেছেন, ‘‘অন্য হোটেলগুলোতে যেই অভিযান হয়েছে তা ছিল কেবল একটি চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা, যা কোনও বাস্তব ফলাফল দেয়নি।’’ কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতো বিজেপি নেতারা স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘আমরা অপেক্ষা করছি, আর কি অন্যান্য হোটেলে অভিযান চালানো হচ্ছে কিনা।’’ এর মাধ্যমে তাদের ধারণা, আসলে শুধু শুভেন্দু অধিকারীকে লক্ষ্য করেই এই অভিযান চালানো হয়েছে।
বিজেপির অভিযোগ এবং তৃণমূলের পাল্টা প্রতিক্রিয়া
বিজেপি নেতারা প্রশাসনকে সরাসরি অভিযুক্ত করেছেন যে তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে। তাদের দাবি, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী আসানসোলে ইতিহাস রচনা করেছেন, যা তৃণমূল কংগ্রেস সহ্য করতে পারছে না। আর সেই কারণেই প্রশাসন এমন একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।’’ বিজেপির এই অভিযোগের পর, তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও পাল্টা প্রতিক্রিয়া এসেছে। তৃণমূলের নেতারা বলেছেন, ‘‘এ ধরনের অভিযানে রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য নেই। প্রশাসন যে কোনো হোটেলেই অভিযান চালাতে পারে।’’ তাদের দাবি, ‘‘এটা প্রশাসনের দায়িত্ব, এবং তাদের কাজের মধ্যে রাজনীতি আনা ঠিক নয়।’’
তবে এক কথায়, আসানসোলের এই ঘটনাটি রাজনীতি ও প্রশাসনের মধ্যে একটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিজেপি এখন দাবি করছে, এটি তৃণমূলের প্রতিহিংসার ফলস্বরূপ এবং প্রশাসনকে কেবল দলের স্বার্থে কাজে লাগানো হয়েছে। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে এই অভিযানে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকার কথা অস্বীকার করা হয়েছে এবং তারা বলছেন, প্রশাসনের কাজের মধ্যে রাজনীতি ঢোকানো উচিত নয়।