রাহুলের মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক, তোপ দাগলেন প্রশান্ত কিশোর

রাহুল গান্ধীর সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে ফের একবার তোলপাড় জাতীয় রাজনীতি। ‘ভোটচুরি’ প্রসঙ্গ নিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সরব হওয়ার পর এবার তাঁর পাশে দাঁড়ালেন দেশের…

Prashant Kishor Slams Rahul Gandhi’s Vote-Rigging Allegations, Targets Election Commission

রাহুল গান্ধীর সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে ফের একবার তোলপাড় জাতীয় রাজনীতি। ‘ভোটচুরি’ প্রসঙ্গ নিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সরব হওয়ার পর এবার তাঁর পাশে দাঁড়ালেন দেশের প্রখ্যাত রাজনৈতিক কৌশলবিদ তথা বিহারের জনসুরজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত কিশোর (PK) (Prashant Kishor) । শুধু তাই নয়, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও তোপ দাগলেন তিনি। তাঁর মতে, ভোটচুরি প্রসঙ্গে উঠেছে যে প্রশ্ন, কমিশনের দায়িত্ব সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। কিন্তু তার পরিবর্তে কমিশন রাহুল গান্ধীকে ক্ষমা চাইতে বলছে, যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor) বলেন, “ভোটচুরি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তার উত্তর দেওয়া কমিশনের কর্তব্য। এটা গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত যে, নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলে তার জবাব দিতে হবে। কিন্তু প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, শুধু একজন বিরোধী নেতাকে ক্ষমা চাইতে বলা একেবারেই সঠিক নয়। এতে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।”

   

রাজনৈতিক মহলে এই মন্তব্যের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor) অতীতে কংগ্রেসের নির্বাচনী কৌশল তৈরি করেছেন। পরবর্তীতে তিনি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র অংশ হননি, বরং নিজের রাজনৈতিক দল গঠন করে বিহারে সক্রিয় হয়েছেন। কিন্তু জাতীয় ইস্যুতে তাঁর বক্তব্য এখনও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। এবারও ব্যতিক্রম হল না।

রাহুল গান্ধী সম্প্রতি অভিযোগ তুলেছিলেন যে দেশের ভোটপ্রক্রিয়া আর স্বচ্ছ নেই, ভোট চুরি হচ্ছে নানা জায়গায়। তাঁর দাবি, জনগণের ম্যান্ডেটকে বিকৃত করার চেষ্টা চলছে। এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই কমিশন তাঁকে নোটিস পাঠায় এবং প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলে। কমিশনের যুক্তি, রাহুল গান্ধীর বক্তব্যে দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে ভুল বার্তা যাচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।

কিন্তু প্রশান্ত কিশোর উল্টে কমিশনের অবস্থানকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করালেন। তিনি বলেন, “যদি ভোটচুরির অভিযোগ ভিত্তিহীন হয়, কমিশনের উচিত তা তথ্য-প্রমাণ দিয়ে প্রমাণ করা। কিন্তু কেবল ‘ক্ষমা চাইতে হবে’ বলা মানে হল সত্যিকারের জবাবদিহি এড়িয়ে যাওয়া।” তাঁর মতে, এমন আচরণে সাধারণ ভোটারের মনে প্রশ্ন জাগে, সত্যিই কি নির্বাচনী ব্যবস্থার মধ্যে কোনও গলদ আছে?

Advertisements

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রশান্ত কিশোরের এই বক্তব্য বিরোধীদের আরও শক্তি জোগাবে। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধী দলগুলো অনেক দিন ধরেই দাবি করছে, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। বিভিন্ন সিদ্ধান্তে তারা মনে করছে কমিশন একপেশে ভূমিকা নিচ্ছে। প্রশান্ত কিশোরের মতো প্রভাবশালী কৌশলবিদ এই বিতর্কে সরব হওয়ায় বিষয়টি আরও গুরুত্ব পাচ্ছে।

অন্যদিকে, বিজেপি শিবির থেকে অবশ্য প্রশান্ত কিশোরের বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তাঁদের মতে, রাহুল গান্ধী বা বিরোধীরা সবসময়ই পরাজয়ের দায় চাপাতে নির্বাচন কমিশন বা ইভিএমের ওপর দোষ চাপায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিজেপির দাবি, কমিশনের ওপর আস্থা রাখা উচিত, কারণ তারাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট পরিচালনা করে।

তবে সাধারণ মানুষের একাংশ মনে করছেন, ভোটচুরির অভিযোগ যেমন গুরুতর, তেমনি সেই অভিযোগ খারিজ করার জন্য কমিশনের তরফে যুক্তিযুক্ত তথ্য-প্রমাণ দেওয়া জরুরি। না হলে গণতন্ত্রের ওপর আস্থা নষ্ট হবে।

সব মিলিয়ে, রাহুল গান্ধীর অভিযোগ ও কমিশনের পাল্টা প্রতিক্রিয়া ঘিরে যে বিতর্ক শুরু হয়েছিল, প্রশান্ত কিশোরের মন্তব্য তার নতুন মাত্রা দিল। এখন দেখার বিষয়, কমিশন কি সত্যিই প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর দেয়, নাকি বিরোধীদের ‘রাজনৈতিক নাটক’ বলে দায় এড়িয়ে যায়। একথা স্পষ্ট, এই বিতর্ক সামনের দিনে সংসদ থেকে রাস্তাঘাট—সব জায়গাতেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকবে।